‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’: দাবি আদায় না হলে ১৯ মার্চ থেকে কর্মবিরতি

ক.বি.ডেস্ক: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নিজেদের অধীনে রাখতে ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এনআইডি কার্যক্রম কমিশনের (ইসি) অধীনে পুর্নবহাল না করলে আগামী ১৯ মার্চ থেকে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। একটি কুচক্রী মহল আগামী নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে এনআইডি কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সকাল ১১ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এই কর্মসূচী পালিত হয়।
মানব-বন্ধনে নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপ-সচিব মনির হোসেন বলেন, “আগামী ১৮ মার্চের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল করে এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনর্বহাল করতে হবে। এর মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ১৯ মার্চ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের সকল কার্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভোটার তালিকা ও এনআইডি সেবা অবশ্যই একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা উচিত। ইসিও চায় ভোটার তালিকা ইসির অধীনে থাকুক। কিন্তু আমরা দেখেছি, সরকার এনআইডি সেবার জন্য আলাদা একটি কমিশন গঠন করেছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি এবং ইসিও সরকারের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ফলাফল দেখতে পাইনি।”
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, “এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই নিরাপদ রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা নিরাপদ থাকবে। ১৩ কোটি ভোটারের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা জরুরি।”

এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে ২০১০ সালের আইন বাতিল করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ প্রণয়ন করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এনআইডি সেবা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নাগরিক সেবাকে সহজ করতে সম্প্রতি জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর থেকেই এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখার দাবিতে নামেন ইসি সচিবালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা মনে করি এনআইডি কার্যক্রমটা ইসির অধীনেই থাকা উচিত। এর বাইরে যদি কাঠামোগত কোনো বিষয় থাকে, সে ব্যাপারে আমার কাছে বাড়তি কোনো তথ্য নেই। এ ব্যবস্থাটা আমরা গড়ে তুলেছি ২০০৭ সাল থেকে। আমাদের কারিগরি দক্ষতা আছে। এখান থেকে আমরা কাম্য সেবা দিচ্ছি এবং এখান থেকে সেবা সম্প্রসারণের ক্ষেত্র তৈরি করছি।”
তিনি আরও বলেন, “কাজেই যেটা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি, সে পদ্ধতিটিকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার চেয়ে প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিকেই সম্প্রসারণ করা যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। এটাই আমরা বারবার বলে আসছি। ১৮২টি সংস্থা ইসির কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছে। অন্যান্য সংস্থাও তথ্য নিচ্ছে। সুরক্ষিত বলেই তারা তথ্য নেয়। যারা মানববন্ধন করেছেন তারা আমাদেরই সহকর্মী। তাদের দাবি ঠিক আছে।”
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করবেন এবং ইসি ভবনের সামনে মানববন্ধন গঠন করবেন। তাদের এই কর্মসূচির মূল দাবি—জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সেবা যেন ইসির অধীনেই বহাল থাকে।