স্টোরেজ সংকটে মিড-রেঞ্জ ফোনে ফিরছে মাইক্রোএসডি কার্ড?
ক.বি.ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের স্টোরেজে ব্যবহৃত ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপের মূল্য হঠাৎ করেই ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা বলছেন ‘গ্রেট ন্যান্ড ক্রাইসিস’। এর প্রভাব ২০২৬ সাল থেকে স্মার্টফোন শিল্পে বড় ধরনের আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বেশিরভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা ফোন থেকে মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট প্রায় পুরোপুরি বাদ দিয়েছিল। ফোন পাতলা রাখা, উচ্চমূল্যের অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ বিক্রি এবং ক্লাউড স্টোরেজ সাবস্ক্রিপশনের দিকে ব্যবহারকারীদের ঝুঁকিয়ে দেয়াই ছিল এর মূল কারণ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নির্মাতাদের।
কেন আবার আলোচনায় এসডি কার্ড স্লট?
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সার্ভার ও ডেটা সেন্টারের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় ন্যান্ড মেমোরির মূল্য ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্মার্টফোনে বেশি অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ যুক্ত করা এখন নির্মাতাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হয়ে ওঠছে। এই অবস্থায় শাওমি, স্যামসাং সহ কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড মিড-রেঞ্জ ফোনে আবার মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে, এমন তথ্য জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট গিজচায়না।
বিশ্লেষকদের মতে, এসডি কার্ড স্লট ফিরিয়ে আনলে নির্মাতারা কম অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ দিয়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন বাজারে আনতে পারবে। ফ্ল্যাগশিপে নয়, ফোকাস মিড-রেঞ্জে তবে ফ্ল্যাগশিপ বা প্রিমিয়াম ফোনে মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এই সেগমেন্টে এখনও দ্রুতগতির অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ, ডিজাইন ও পারফরম্যান্সকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। মূল পরিবর্তন আসতে পারে মিড-রেঞ্জ ও বাজেট ফোনে, যেখানে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করাই নির্মাতাদের প্রধান লক্ষ্য।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে চাপ বাড়ছে
বর্তমানে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্প একটি কঠিন সময় পার করছে। বিশ্বে যত ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি উৎপাদন হচ্ছে, তার বড় অংশই চলে যাচ্ছে এআই সার্ভার, ডেটা সেন্টার ও শক্তিশালী এসএসডি তৈরিতে। এর ফলে স্মার্টফোনে ব্যবহৃত তুলনামূলক সাধারণ স্টোরেজ চিপের সরবরাহ কমে যাচ্ছে এবং মূল্য বাড়ছে। এই সংকটে মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট হয়ে ওঠছে এক ধরনের ‘জরুরি সমাধান’।
খরচের হিসাব কী বলছে?
একটি স্মার্টফোনে ৫১২ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ যোগ করতে নির্মাতার বাড়তি খরচ পড়ে প্রায় ৭০ ডলার। অথচ ফোনের মাদারবোর্ডে একটি মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট যুক্ত করতে খরচ প্রায় নগণ্য। অন্যদিকে ব্যবহারকারীরাও উপকৃত হন, কারণ প্রয়োজন অনুযায়ী পরে নিজেরাই কম খরচে স্টোরেজ বাড়াতে পারেন।
সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, স্টোরেজ সংকট স্মার্টফোন বাজারে আবার পুরনো কিন্তু কার্যকর একটি ফিচারকে ফিরিয়ে আনতে পারে। যদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ২০২৬ সাল থেকে মিড-রেঞ্জ ফোনে মাইক্রোএসডি কার্ড স্লটের প্রত্যাবর্তন দেখা যেতেই পারে।





