শুরু হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’

ক.বি.ডেস্ক: দেশীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পণ্য প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী, আমদানিকারক, সফটওয়্যার ও সাইবার নিরাপত্তা খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে আজ থেকে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী (১৮-২০ সেপ্টেম্বর) ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এবারের প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করছে আই-স্টেশন, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং দুবাইয়ের জিপিই এক্সপো (এফজেডই)। প্রদর্শনীতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি পণ্যগুলো প্রদর্শন করছে। এবারের প্রদর্শনীতে ৫০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান, শাতাধিক ব্র্যান্ড এবং ৫ শ’র বেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন।
আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’-এর উদ্বোধন করেন ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিসিএস’র সহ-সভাপতি মো. ওয়াহিদুল হাসান দিপু।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস’র মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকি রেজওয়ানা, আই-স্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধু সুদন সাহা।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‘এই প্রদর্শনী বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে একটি বড় উদ্যোগ। এটি সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সচেতনতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে। ইলেকট্রনিক্স ও সাইবার সুরক্ষার ওপর দেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় সুরক্ষা নির্ভর করে। আমরা যতই অনলাইনে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হবো, ততটাই ব্যক্তিগত তথ্য নিরপত্তার ঝুঁকি থাকবে। তাই এই পারস্পরিক সম্পর্ককে জোরদার করতে সাইবার ও ইলেকট্রনিক্স খাতে সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আমরা ডেটা প্রাইভেসি সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি। এটি একটি বড় খাত, তাই এ জন্য এই খাতে বিনিয়োগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
এ কে এম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে। এত মানুষের দেশে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ইনস্টলেশন সেবার চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। বর্তমানে এটিএম, আরএফআইডি ট্যাগ এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। সরকার হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এসব পার্কে আধুনিক সুবিধা যেমন উচ্চগতির ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ইনস্টলেশনের জন্য এটি আদর্শ জায়গা হয়ে ওঠেছে। বিদেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানিকে হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানাই।’’

মো. ওয়াহিদুল হাসান দিপু বলেন, ‘‘বিসিএস ১৯৮৭ সাল থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রযাত্রায় এক নির্ভরযোগ্য পথপ্রদর্শক। জনস্বার্থ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে বিসিএস সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রদর্শনী সেই অঙ্গীকারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিসিএস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, প্রযুক্তি শুধু উন্নয়নের বাহন নয়, বরং যদি তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে তা একটি নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার রূপকার হতে পারে। এই আয়োজন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ।’’
মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বর্তমানে নিরাপত্তা একটি বহুমাত্রিক এবং সমন্বিত বিষয়, যেখানে সাইবার হুমকি, শারীরিক নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত সুরক্ষা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই এক্সপোর মাধ্যমে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তি খাতের অংশীজনদের এক প্লাটফর্মে এনে নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্ভাবন, বাস্তবভিত্তিক সমাধান এবং জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’’
মধু সুদন সাহা বলেন, ‘‘প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে নিরাপত্তা প্রযুক্তিও দ্রুত রূপান্তর ঘটাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা, শিল্প ও ব্যক্তিগত জীবনে। বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতের স্থানীয় প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক, সরবরাহকারী ও সাইবার নিরাপত্তা উদ্যোক্তাদের জন্য বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়া এখন সময়ের দাবি। এই প্রদর্শনী সেই প্রয়োজন পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের নিরাপত্তা খাতকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।’’
এবারের প্রদর্শনীতে দেশ-বিদেশের নিরাপত্তা পণ্য নির্মাতা ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সফটওয়্যার ও সাইবার নিরাপত্তা খাতের বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করছেন। প্রদর্শনীতে একাধিক বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশন থাকছে। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সরাসরি আলোচনা করতে পারবেন।