‘মেড ইন বাংলাদেশ’কে প্রাধান্য দিয়ে আইসিটি খাতে বাজেট
ক.বি.ডেস্ক: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের ওপর যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করেছেন, তাতে ক্রেতাকে প্রযুক্তি পণ্য আগের চেয়ে আরও বেশি মূল্যে কিনতে হবে। দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রযুক্তি বাজারেও। ক্রেতাকে এর জন্যও বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, চিপের মূল্য বেড়ে যাওয়ার মতো কারণগুলোও এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মূল্য আরও বাড়ছে প্রযুক্তি পণ্যের ওপর।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি দেশের ৫১ তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২২ তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আমদানি করা ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কার্টিজ, টোনার ও পোর্টেবল ডাটা প্রসেসিং যন্ত্রের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, মোবাইল ফোনের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ইন্টারনেট সেবার ওপর ১০ শতাংশ উতসে করের প্রস্তাবনা করেছেন। মোবাইলের আমদানিকৃত ব্যাটারির ওপরও ভ্যাট আরোপ করেছেন।
তবে স্থানীয়ভাবে উতপাদিত ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদির ওপর থেকে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের দাম বাড়বে। তবে দেশে তৈরি ল্যাপটপের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। এগুলোর দাম বাড়বে না।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশীয় কমপিউটার বা ল্যাপটপ ও আইসিটি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষণে কমপিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও আইসিটি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করছি। বিশ্বে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিং এবং দেশীয় উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সুরক্ষার পাশাপাশি সরকার ঘোষিত ডিজিটাল ডিভাইস রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমপিউটার, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি। প্রিন্টার, কার্ট্রিজ, টোনার ও ডাটা প্রসেসিং যন্ত্র আমদানিতে ১৫ শতাংশ করে ভ্যাট আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বরাদ্দ বেড়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে দুই হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গত অর্থবছরের চেয়ে ৫৫৫ কোটি টাকা বেশি পেয়েছে। গত অর্থবছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল দুই হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
বরাদ্দ বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে: তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ গত অর্থবছরের চেয়ে ২৭৪ কোটি টাকা বেশি পেয়েছে। গত অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।
ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ % কর: দেশে স্থানীয় উতপাদনকে উতসাহিত করতে ল্যাপটপ কমপিউটার আমদানিতে ১৫ % মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ল্যাপটপ কমপিউটার আমদানিতে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। ফলে দেশীয় কমপিউটার উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ল্যাপটপ কমপিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার হবে ৩১ শতাংশ।
ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে: ইন্টারনেট ব্যবহারে এতদিন গ্রাহককে উতসে কর বা অগ্রিম কর (এআইটি) দিতে হতো না। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় গ্রাহকের ওপর ১০ শতাংশ উতসে কর আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণায় গ্রাহকের ইন্টারনেট খরচ বাড়বে।
দাম বাড়বে মোবাইল ফোনের: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে হ্যান্ডসেট বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম বাড়তে পারে। মোবাইল টেলিফোন সেট ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে, স্মার্টফোন আমদানিতে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর দিতে হয়। স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল ও তৈরি হ্যান্ডসেটের ওপর কর ৩ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার আমদানিতে কর বাড়লো: অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল আমদানিতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইন্টারনেট ও টেলিকমিউনিকেশন যোগাযোগের অন্যতম ব্যাকবোন এই ফাইবার আমদানিতে আগেই ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ছিলো। এবার বাজেটে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এরসঙ্গে যোগ করা হলো। দেশে বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। পণ্যটি আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। দেশীয় শিল্পের অধিকতর প্রতিরক্ষণের লক্ষ্যে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল আমদানিতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্টার্টআপদের জন্য এবারের বাজেট: দেশের স্টার্টআপদের জন্য নানা ছাড় ও সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এতে স্টার্টআপদের ব্যয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, টার্নওভার করহার কমানোসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য কেবলমাত্র আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি এবং স্টার্টআপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয় এর বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার এর জন্য স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার করহার ০.৬০ শতাংশ এর পরিবর্তে ০.১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ছবি সৌজন্যে: পিআইডি