বেসিস-ব্র্যাক ব্যাংক আর্থিক সহায়তা ‘দিগন্ত’র যাত্রা
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিংযের মাধ্যমে উদ্বোধন হলো বেসিস-ব্র্যাক ব্যাংক আর্থিকসহায়তা ‘দিগন্ত’। ব্র্যাক ব্যাংক শুধুমাত্র বেসিস সদস্যদের জন্য ‘দিগন্ত’ নামে একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা চালু করেছে।
নতুন এই ব্যাংকিং চুক্তির আওতায় শুধুমাত্র বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৯% সুদে ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। এই ঋণের জন্য কোনো জামানতের প্রয়োজন পড়বে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় অন্যান্য ঋণ বা আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তিরও সুযোগ থাকবে। এ ছাড়াও ব্র্যাংক ব্যাংকের ‘তারা’ প্যাকেজের আওতায় নারী উদ্যোক্তাগণ ৭% সুদে ঋণ সুবিধা পাবেন। এ ঋণ সুবিধা বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানদের ব্যবসায় পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বেসিস-ব্র্যাক ব্যাংক আর্থিকসহায়তা ‘দিগন্ত’ এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আহমেদ জামাল এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। বক্তব্য রাখেন- ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হুসাইন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ। দিগন্ত প্যাকেজ সম্পর্কে আলোকপাত করেন ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আবদুল মোমেন। সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
অনুষ্ঠানে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, বেসিস-ব্র্যাক ব্যাংকের দিগন্ত ঋণ সুবিধা বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ব্যবসায়িদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ ধরনের জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা গেলে, দেশের আইটি কোম্পানিগুলোর স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টিতে তা তাতপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আহমেদ জামাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফাইন্যান্সিং এর জন্য নামমাত্র সুদে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে লক্ষাধিক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা যাতে এই বিশেষ ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সম্পর্কিত নির্দেশনা মেনে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই সহযোগিতা দিয়ে আসছে এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
শেখ ফজলে ফাহিমবলেন, অ্যাক্সেস টু ফিনান্স চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করতে হবে। দেশের এসএমই খাতে যে ৮৪% অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান আছে তাদের পর্যায়ক্রমে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও উদ্ভাবনীমূলক ও প্রযুক্তি নির্ভর হতে হবে। বেসিস-ব্র্যাক ব্যাংক দিগন্ত শুধুমাত্র একটি বিশেষ সুবিধা নয়, অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের শক্তিশালী আর্থিক কাঠামোর আদর্শ।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, অ্যাক্সেস টু ফিনান্স তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ। যেহেতু সফটওয়্যার বা আইটিসেবা দৃশ্যমান পণ্য হিসেবে পরিগণিত নয় , সেই কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে অর্থায়নে তেমন আগ্রহ দেখায় না। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতে অর্থায়নে ব্র্যাক ব্যাংক এগিয়ে আসায় আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। এ বিশেষ ঋণ সুবিধা বেসিস সদস্যদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৭% সুদে যে ঋণের ব্যবস্থা আছে তাতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে।
সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, দিগন্ত শুধুমাত্র একটি ঋণ সুবিধাই নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে বেসিস এর সদস্যদের আরও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারি, সে ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।