বুড়িমারী স্থলবন্দরে ‘ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’

স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) অনলাইনে বুড়িমারী স্থলবন্দরে উদ্বোধন করা হয় ‘ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ সফটওয়্যার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর এবং এটুআই’র ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর যৌথভাবে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লালমনিরহাট-১ সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোতাহার হোসেন এবং আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিএন্ডএফ এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারকগণ উপকৃত হবেন। সেবা গ্রহীতাদের সময়, খরচ এবং যাতায়াত (টিসিবি) কমবে এবং স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি প্রসার বৃদ্ধি পাবে। সেবা গ্রহীতা এবং সেবা প্রদানকারীগণ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপস, ডিজিটাল আইডি কার্ড এবং অনলাইন পেমেন্ট এই ৪টি পদ্ধতিতে সেবার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। এই সিস্টেমটির দ্বারা ১৬টি ডিজিটাল সার্ভিস, ৫০০ কার্গো এবং ১২ হাজার উপকারভোগী ইতোমধ্যে সরাসরি সুবিধা ভোগ করেছেন এবং সিস্টেমটির মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ৬৫-৭০ হাজার গ্রাহক সুবিধা ভোগ করবেন। সিস্টেমের মাধ্যমে আমদানীকারকগণ ঘরে বসেই পেমেন্ট কিংবা অনলাইন ডেলিভারির অর্ডার করতে পারবে, ফলে সময় সাশ্রয়ী হবে এবং বাড়তি খরচের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া প্রবেশের সময় বারকোডের মাধ্যমে গ্রাহকের নিজস্ব আইডি তৈরি হওয়ায়, তার সকল আমদানি-রপ্তানি তথ্য ডাটাবেইজে সংরক্ষিত থাকবে। এটুআই প্রোগ্রামের ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর কর্তৃক পরিচালিত ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের মাধ্যমে এই সিস্টেমটি ডিজাইন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষর চেয়ারম্যান কে এম তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাট জেলার জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর, জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা, এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান, এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, এটুআই’র চীফ ই-গভর্নেন্স স্ট্যাটিজিস্ট ফরহাদ জাহিদ শেখ, আমদানি রপ্তানীকারক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির সওদাগর, বুড়িমারী স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজুল ইসলাম ভূঁঞা এবং ডিভাইন আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান (রাসেল)।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এমন ছোট একটি ভূখন্ড নিয়েও বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল-মডেল। সজীব আহমেদ জয়-এর সুপরামর্শে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে। ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ফলে বন্দরের সকল কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ভোগান্তিহীন সেবা প্রদানের পথ সুগম হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আমাদের কানেক্টিভিটি বাড়ছে। এ ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে কানেক্টিভিটির কর্মকান্ড আরও সহজ হবে।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল অগ্রযাত্রার কারণে আজ ঢাকায় বসেও আমরা লালমিনরহাটের মত দূরের একটি জেলার স্থলবন্দরের উদ্বোধন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারছি। ই-পোর্ট সিস্টেমের ফলে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা তৈরি হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের সেবা এবং পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি অন্যান্য বন্দরসমূহকে এ সিস্টেমটি কাস্টমাইজ করে তাদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানান।
মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এই বন্দরটি ধীরে ধীরে অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০-এর মত ভারতীয় ট্রাক নেপাল, ভূটান এবং ভারতের পণ্য নিয়ে আসে। এ ছাড়া প্রায় ১৫০০ ট্রাক এখান থেকে পণ্য নিয়ে সারা দেশের মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়। বর্তমান ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কারণে গ্রাহক যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সেবা প্রদানকারীরাও দ্রুত ও ঝামেলাহীন সেবা প্রদান করতে পারবে।
এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই আমি এ আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এ সিস্টেম সম্পন্ন করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমরা সফলভাবে এটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এর সেবা এবং সকল কার্যক্রম যাতে সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং সেবার মান বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে এই সিস্টেমটি সকল স্থলবন্দরের জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।