বিসিএসের ‘চতুর্থ শিল্প বিবর্তন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

গতকাল (৭ জুন) সন্ধ্যায় আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ আয়োজনে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় ‘চতুর্থ শিল্প বিবর্তন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিসির কো-অর্ডিনেটর এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেন বিসিএসের সাবেক মহাসচিব এবং দি কমপিউটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আতিক-ই-রব্বানী।
এই কর্মসূচিতে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতীম দেব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সোহেল শেখ, এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তাফিজুর রহমান এবং জাপান থেকে ব্যরিষ্টার অনুপ। বক্তব্য রাখেন বিসিএসের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে এস এম ইকবাল, মো. ফয়েজ উল্ল্যাহ খান, কামরুল ইসলাম, এ এস এম আব্দুল ফাত্তাহ, শাফকাত হায়দার, আহমদ হোসেন জুয়েল, নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
‘চতুর্থ শিল্প বিবর্তন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন বিসিএসের যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিএসের মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, পরিচালক মো. রাশেদ আলী ভূঁঞা। কর্মসূচিতেু বাংলাদেশে ৫জির প্রেক্ষাপট এবং প্রস্তুতি নিয়ে টেলিটকের সহকারি সাধারণ পরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ রেজাউল করিম রিজভী প্রশিক্ষন কর্মসূচিতে একটি বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেন।
‘চতুর্থ শিল্প বিবর্তন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মোস্তাফা জব্বার বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। বাংলাদেশও খুব একটি পিছিয়ে নেই। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসরমান। ফাইবার অপটিক্সের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পর্যায়ের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে ইন্টারনেটের সংযোগ বিহীন কোন ইউনিয়ন, চর বা দ্বীপ থাকবে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ দরকার আমরা সেই ব্যান্ডউইথের ব্যবস্থা করেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিও চলমান। প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের সম্পৃক্তটা না থাকলেও এই শিল্প বিপ্লবে আমরা এগিয়ে থাকবো বলেই আমার বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অনেক নতুন প্রযুক্তি আমরা শেষ দশকে দেখতে পেয়েছি। কমপিউটারের আগমন এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির জন্ম প্রায় একই সময়ে এই দেশে শুরু হয়। তারপর থেকে আমাদের এগিয়ে চলা। বর্তমানে প্রচলিত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের দিন কাটলেও সেই দিন আর বেশি দুরে নেই। যেদিন ক্রেতা এসে বলবেন, আমাকে এই মডেলের একটা রোবট দেন তো। অথবা এই ধান ক্ষেতে একটি আইওটি ডিভাইস সংযুক্ত করে উৎপাদন ব্যবস্থা সচল করে দেন। করোনাকালীন এই সময়েও আমরা ডিজিটালি সব কাজ করে যাচ্ছি। ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ইন্টারনেট এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে এমন কোন খাত নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। নিজেদের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যকেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তুলতে হবে।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সমসাময়িক বিষয়গুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে যদি আমরা খাপ খাইয়ে না চলতে পারি তাহলে মূলত আমরা ট্রেন মিস করবো। এই মিসের ফলে আমরা বহুদুর পিছিয়ে যাবো। কোভিড-১৯ রোগের কারণে আমাদের এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা অতিক্রম করতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প অন্যতম হাতিয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সেজন্যই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। বিসিএস সদস্যদের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা উচিৎ। এখন প্রযুক্তি পরিবর্তনের যুগ। আজ যে ডিভাইসটি হালনাগাদ হয়ে এসেছে কাল সেটি পুরনো।
বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, প্রথম তিনটি শিল্প বিপ্লব আমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ না করলেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের সামনে দৃশ্যমান। এই বিপ্লবে আমাদের অংশগ্রহণ যেন উল্লেখযোগ্য হয় সেজন্য আমাদের চেষ্টা চলমান। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে বিশ্বে প্রতিদিন ২০ হাজার ৭০০ কোটি ইমেইল পাঠানো হয় এবং ৪২০ কোটি সার্চ গুগলে করা হয়। করোনা সংকটের এই সময়ে এই সংখ্যাগুলো বহুগুণে বেড়েও গেছে। এটাই ডিজিটাল দুনিয়ার শক্তি। বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে আমরা দেখেছি রোবোটিক্স শিল্প, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটিসহ নিত্যনতুন বিষয়গুলোর সঙ্গে মানুষের সখ্যতা কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যত যুগে এই ধরণের প্রযুক্তির সঙ্গেই আমাদের চলতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়ে আতিক-ই-রব্বানী বলেন, মানুষের উদ্ভাবনী দক্ষতা থেকে মেশিনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন মানুষ এবং মেশিনের উদ্ভাবনী দক্ষতা থেকে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এগুচ্ছে এবং আরও ধাবিত হচ্ছে। মানব জাতির মনুষ্যত্বের চেয়ে মানব জাতির উদ্ভাবনী শক্তি বেশি। বাষ্পচালিত ইঞ্জিন দিয়ে প্রথম শিল্প বিপ্লবের শুরু। বিদ্যুৎ আবিষ্কার থেকে শুরু করে আমরা এখন তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কানেকটিভিটি বা যোগাযোগ। ১৭৬০, ১৮৭০, ১৯৫০ এই বছরগুলো শিল্প বিপ্লবের বছর। আমরা এখনো তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করে যাচ্ছি। অধ্যাপক ক্লাউস সোয়াব সর্বপ্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলেন। এখানে প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। এটি থামার নয়। মানুষ বরাবরই আবিষ্কার প্রিয়। আপনি মানুষকে বন্দী করে রাখতে পারবেন না। মানুষ সীমাবদ্ধতা পছন্দ করে না। সীমাবদ্ধতার সীমা থেকে উত্তোরণের পথ খুঁজতে মানুষের চেষ্টা প্রতিনিয়ত চলমান থাকবে। জীবনের মান উন্নত করতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। অনলাইনে প্রায় তিন শতাধিক বিসিএস সদস্য অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি বিসিএসের ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। এ সময় প্রায় ৪ হাজার দর্শনার্থী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেন।