উদ্যোগ

বিশ্ব নারী দিবস: বিপিও শিল্পে নারীর অবদান উদযাপন করলো বাক্কো

ক.বি.ডেস্ক: বিপিও খাতে কর্মরত ৭০ হাজার জনসম্পদের ৪০ শতাংশই এখন নারী। ২০২৫ সাল নাগাদ এই অংশীদারিত্ব ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)। সেই লক্ষ্য নিয়ে গত শনিবার (৯ মার্চ) “আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪” উদযাপন করলো সংগঠনটি। প্যানেল আলোচনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে দীর্ঘ সময় আইসিটিতে কর্মরত ১০ নারী কর্মীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘সেলেব্রেটিং উইম্যানস অ্যাচিভমেন্টস ইন বিপিও’ প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য অ্যারমা দত্ত, সংসদ সদস্য জারা জাবীন মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান লাফিফা জামাল, ইউএসএইডের শিক্ষা ও যুব দপ্তরের প্রধান সোনজাই রেনল্ডস কুপার, ব্রিটিশ হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ডয়িন অ্যাডেলে, উইম্যান ইন ডিজিটালের প্রতিষ্ঠাতা আছিয়া নীলা, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার।

এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অর্গানিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মালিহা মান্নান, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলাপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ড. তানজিবা রহমান, নভো ইনভিকটা স্পেশালাইজড্‌ হেলথকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জারিন দেলওয়ার হুসাইন, এমরাজিনা টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা এমরাজিনা ইসলাম। বাক্কো ইয়্যুথ সাব কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা শওকত এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাক্কো অর্থ সম্পাদক মো. আমিনুল হক, পরিচালক ফজলুল হক ও পরিচালক মুসনাদ ই আহমেদ।

আলোচনায় আইসিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি, সাফল্যের গল্প, কর্মপরিবেশ, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা হতে উত্তরণের উপায়- এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওঠে আসে।

অ্যারমা দত্ত বলেন, “সামাজিক সূচকে নারীর অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। এক্ষেত্রে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দেশের তৃণমূলের নারীরা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে।”

জারা জাবীন মাহবুব বলেন, “পরিবার ও পরিবেশ দুই দিক থেকেই আমি সৌভাগ্যবান। যৌথ পরিবারের সুবিধা নিয়ে আমি আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। তবে প্রত্যেক নারীকেই তার হৃদয় থেকে এগিয়ে যাওয়ার বাসনা থাকতে হবে। ফেমিনেজম মানসিকতাকে নেগিটিভ মনে করা হলেও এটি ইতিবাচক শক্তি।”

লাফিফা জামাল বলেন, “বিপুল সংখ্যক নারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইসিটিতে স্নাতক করে চাকরিতে প্রবেশের হার কম। মূলত চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে আইসিটি ক্যারিয়ারটি অন্য সব পেশা থেকে আলাদা। আমি শুরুতে ঢাকায় বসে ইউএসএ-র একটি প্রতিষ্ঠানে ডেটা মাইনিং এর কাজ করেছি। এসব ক্ষেত্রে চাকরির পরিবেশ ও পারিবারিক সাপোর্ট জরুরী। আইসিটিতে উচ্চতর ডিগ্রি ১৫ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংয়ে উন্নীত হয়েছে। ২ শতাংশ থেকে চাকরিতে প্রবেশের হার ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।”

ডয়িন অ্যাডেলে বলেন, “নারীদের মধ্যে শিক্ষা যত বাড়বে তত বেশি তাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও জীবনের মানোন্নয়ন ঘটবে। এদের মধ্যে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্র ও জীবনধারণের প্রেক্ষাপটে তাদের শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।”

সোনজাই রেনল্ডস কুপার বলেন, “আন্তর্জাতিক সুসস্পর্ক বজায় রাখতে বাক্কো যেভাবে কাজ করছে তা প্রশংসার। তবে এই চর্চা আরও জোরদার হওয়া দরকার।”

ড. মালিহা মান্নান বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সংগৃহিত ডাটা সংগ্রহের সময় ডিজ-এগ্রিগেটেড ডাটা সংরক্ষণ না করায় আমরা স্বাস্থ্যের পূর্ণ ডাটা পাচ্ছি না। ট্রেন্ড জেনে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা দরকার।”

ড. তানজিবা রহমান বলেন, “নারীদের শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নে নিজেদেরকে বেশি সময় দিতে হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক বাজার মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। একজন নারী যেহেতু নিজের ভেতর আরেকটি মানুষকে ধারণ করেন সেক্ষেত্রে তাদের যে শক্তি রয়েছে তার পূর্ণ ব্যবহার দরকার।”

ডা. জারিন দেলওয়ার হুসাইন বলেন, “সফলতার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আপনি পারেন তার বিশ্বাস নিজের মধ্যে থাকতে হবে। আর এই আত্মশক্তির সুপার পাওয়ার অর্জন করতে হবে প্রত্যেক নারীকে।”

আছিয়া নীলা বলেন, “নিজেকে মেয়ে মানুষ হওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পিতা, ভাই বা স্বামীর সহায়তায় নয়; নিজের শক্তিতে বিকশিত হতে হবে। সবার আগে নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে।”

নাজনীন নাহার বলেন, “সাংবাদিকতার শীর্ষ পদে নারীর অংশ গ্রহণ কম। ২০০২ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে আমি একা সাংবাদিকতায় থাকলেও এখন ৬ জন রয়েছেন। কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার ভয় থেকে গণমাধ্যমে নারী সাংবাদিকতায় এই সংখ্যাটা বাড়ছে না। অবশ্য উপস্থাপনায় বেড়েছে। তবে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতিতে নারীর অংশ গ্রহণে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন সপ্তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এটা অবশ্যই গর্বের।”

মো. আবুল খায়ের বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এমন বাস্তবতায় প্রতিটি নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আজ শুধু প্রয়োজনই নয়, অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদের সকলকে কাজ করে যেতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।”

তৌহিদ হোসেন বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে নারীদের পিছিয়ে পড়ার কোন সুযোগ নেই । নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করব।”

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ উদযাপনে দীর্ঘ সময় আইসিটিতে কর্মরত ১০ নারী কর্মীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। “সার্টিফিকেট অব এক্সিলেন্স” সম্মাননা প্রদান করা হয়- এডিএন টেকনোলজিসের লিড ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক বিজনেস রেজওয়ানা জাফর, এরেনা ফোন বিডির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক ফাহিমা সুলতানা চৈতি, স্কোপা টেকনোলজিসের চেয়ারপারস সানজানা তাজরিন, ইনফো টাইটানের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার জান্নাতুল ফেরদৌসী বর্না, ইজি গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার রায়হান বিনতে কাদের,

মাই আউটসোর্সিংয়ের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার আফরোজা তাজরিন লুবনা, সার্ভিস ইঞ্জিন বিপিও’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাশিদা আক্তার রুমা, সার্ভিস ইঞ্জিন বিপিও’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাবেয়া আক্তার রিমি, ভার্গো কন্ট্যাক্ট সেন্টার সার্ভিসেসের ফাইন্যান্স ম্যানেজার তাসমিম ইসলাম এবং ক্রিয়েটিভ আইটির হেড অব কোয়ালিটি ম্যানেজার ফারজানা বিশ্বাস।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *