স্বাক্ষাতকার

বিপিও খাতে রয়েছে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা: তানভীর ইব্রাহীম

দেশে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতের একমাত্র বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)- এর কার্যনির্বাহী পরিষদে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তানভীর ইব্রাহীম। বিপিও খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাক্কো। অতীতের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতেও বিপিও খাতটিকে সামনে নিয়ে যেতে এবং বিশ্বব্যাপী আরও নির্ভরযোগ্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করাতে কাজ করে যাচ্ছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বিপিও খাত নিয়ে কমপিউটার বিচিত্রার সঙ্গে আলাপচারিতায় বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বাক্কো’র সভাপতি এবং অটোমেশন সলিউশনজ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তানভীর ইব্রাহীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ (তুষার)…….

কমপিউটার বিচিত্রা: প্রযুক্তি খাতে আপনার দীর্ঘ দিনের পথচলা, জড়িত আছেন বাক্কো’র সঙ্গে কাজে। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন

তানভীর ইব্রাহীম: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) দেশের আইটিইএস/আউটসোর্সিং শিল্পের একটি জাতীয় বাণিজ্যিক সংগঠন। বাক্কো গঠনের পর থেকে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এই সংগঠন এবং এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছি। এই খাতের প্রবৃদ্ধি এবং বিকাশে কাজ করে আমি সবসময় তৃপ্ত। ১৯৯৮ সালে টেলিকম খাতে ক্যারিয়ার শুরু করি। আমি ১১ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরে কাজ করি এবং তারপর আমি আইটিইএস/আউটসোর্সিং শিল্পে উদ্যোক্তা হতে এগিয়ে আসি। সবকিছু মিলিয়ে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমি প্রযুক্তি খাতেই কাজ করছি।

কমপিউটার বিচিত্রা: বিপিও খাতে কাজ করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা দিয়েছে?

তানভীর ইব্রাহীম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে আমি এমবিএ শেষ করে একটি বহুজাতিক ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করি। ছাত্রজীবন থেকেই প্রযুক্তি আমাকে আকৃষ্ট করতো, যা আমাকে পরে নিজের ক্যারিয়ার বেছে নিতে আগ্রহী করে। সেই আগ্রহ থেকেই আমি ব্যাংকিং খাতে নিজের পেশা না গড়ে মোবাইল অপারেটর খাতে পেশা বেছে নেই। আসলে আমি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী ছিলাম।

কমপিউটার বিচিত্রা: প্রযুক্তি খাত ছাড়া কোনো সংগঠন, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত?

তানভীর ইব্রাহীম: তেমন না। আমি পুরোটাই এখন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অটোমেশন সলিউশনজ বাংলাদেশ এবং এর পাশাপাশি বাক্কো এই দু’টিই আমার কাজের জায়গা। আমি চাই, বাক্কো’র জন্য এই স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে বিপিও খাতটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাক্কো’র সঙ্গে কবে থেকে জড়িত এবং কোন কোন পদে থেকে কাজ করেছেন?

তানভীর ইব্রাহীম: ২০১১ সালে বাক্কো আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও নিবন্ধন পায়। আমি কিন্তু তারও অনেক আগে থেকেই বাক্কো’র সঙ্গে জড়িত। ২০১২ সালে আমি বাক্কো’র বোর্ডে আসি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি বিভিন্ন পদে রয়েছি। আমি পরিচালক, যুগ্ম মহাসচিব, অর্থ সম্পাদক, সহ-সভাপতি এবং এখন বর্তমানে সভাপতি হিসেবে কাজ করছি।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাক্কো প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

তানভীর ইব্রাহীম: বাংলাদেশে বিপিও, আইটিইএস এবং আউটসোর্সিং খাতের মূল ট্রেডবডি হিসেবে মানুষ কিন্তু একটি নামই জানে, সেটি হলো বাক্কো। খাতটির একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও উদ্ভাবন নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বাক্কো বিপিও খাতের প্রবৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং অনূকুল ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছে।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাক্কো’র সভাপতি হিসেবে কি কি কার্যক্রম বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?

তানভীর ইব্রাহীম: চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বোর্ড সংস্কার করেছি এবং শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে ডুআইসিটি, বিটিআরসি, আইবিপিসি, এনবিআর এবং অন্যান্য বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছি। আমরা খাতটির সমসাময়িক চাহিদা প্রতিফলিত করার জন্য বাক্কো’র গঠনতন্ত্র সংশোধনে একটি উপকমিটি গঠন করেছি। এ ছাড়াও, আমরা এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যালায়েন্সে (সিসি-এপিএসি) অন্তর্ভুক্ত হয়েছি এবং তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি।

আমরা বাক্কো’র সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণমান এবং দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য নলেজ পার্টনার হিসেবে সিওপিসি-কেও অনবোর্ড করেছি। পাশাপাশি আমরা দেশের আউটসোর্সিং শিল্পের জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিটুবি সেশনের আয়োজন করতে অস্ট্রেলিয়ান কনস্যুলেট জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। আমরা আমাদের নেটওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারদের একীভূত করে এবং তাদের ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে যুব কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগও নিয়েছি।

দেশের বিপিও খাতের অবস্থান তুলে ধরতে আগামী বছর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’ ।
তানভীর ইব্রাহীম- সভাপতি বাক্কো

কমপিউটার বিচিত্রা: কাজের ক্ষেত্রে সফলতা ও চ্যালেঞ্জগুলো কী?

তানভীর ইব্রাহীম: বর্তমান বাজারের চাহিদা মেটাতে বিপিও শিল্প পরিপক্ক হচ্ছে এবং প্রযুক্তি ও নতুন সব উদ্ভাবন গ্রহণ করছে। আমাদের সদস্যরা ইন্ডাস্ট্রির মান সম্পর্কে ভালভাবে জানেন এবং ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম। তবে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। সেই সঙ্গে সরকারের তরফ থেকেই নিশ্চিত করতে হবে আমাদের দেশে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনা ও সম্পদকে সামনে এনে তার যথাযথ ব্যবহার করার। যদিও এরইমধ্যে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। তাই চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্রচেষ্টাগুলোকে একত্রিত করা, একটি সমন্বিত পদ্ধতির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী একটি পছন্দের বিপিও খাতের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা।

কমপিউটার বিচিত্রা: আপনি বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফোরামে দেশের প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, সে সম্পর্কে কিছু বলুন?

তানভীর ইব্রাহীম: সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, আমরা বাংলাদেশকে একটি আউটসোর্সিং খাতে শীর্ষস্থানে উন্নীত করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং এশিয়ার আন্তর্জাতিক এক্সপো এবং শীর্ষ সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আন্তর্জাতিক আয়োজনের মতো আমরা ইপিবি, বিপিসি, বিটিআরসি, আইসিটি এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতা করেছি। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিলে খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। আমরা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক এক্সপো, সেমিনার এবং বিটুবি সেশনের আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।

তা ছাড়া, দেশের বিপিও খাতের অবস্থান তুলে ধরতে বাক্কো’র উদ্যোগে আগামী বছর এপ্রিল মাসে ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বিপিও খাতের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, যেখানে আন্তর্জাতিক বক্তার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং আমাদের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশা শেয়ার করতে একত্রিত হবেন। সব মিলিয়ে বিপিও সামিট হলো বিপিও খাতের সঠিক চেহারা পেতে আমাদের অন্যতম প্রধান ইভেন্ট।

কমপিউটার বিচিত্রা: আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা কীভাবে করবেন?

তানভীর ইব্রাহীম: প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, কেননা আমাদের আছে তরুণ কর্মশক্তি। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে গেছে। তবে আমরা প্রযুক্তিগত এবং যোগাযোগ দক্ষতার ক্ষেত্রে সবসময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। অন্যদের সঙ্গে এই দক্ষতরা ব্যবধান মেটাতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকেই আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা বিপিও খাতে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু প্রতিভাবান উদ্যোক্তা দেখতে পাচ্ছি। যথাযথ সহায়তা পেলে এই উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যদের সঙ্গে জোর প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

কমপিউটার বিচিত্রা: দেশের প্রযুক্তি খাতকে আরও রপ্তানিমুখী করার উপায় কী?

তানভীর ইব্রাহীম: আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হতে হবে দেশের ব্র্যান্ডিং। বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক আউটসোর্সিংয়ের স্থান হিসেবে তুলে ধরতে হলে অবশ্যই শক্তিশালী কিছু প্যাকেজ করতে হবে এবং আমাদের ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন (ইউএসপি) তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়াও, আমাদের অন্যদের সঙ্গে দক্ষতার যে ব্যবধান তা পূরণ করতে হবে, আরও সংগঠিত হতে হবে এবং সর্বোপরি আমাদের সু-গঠিত কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা আন্তর্জাতিক ব্যবসার বাজারকে আকর্ষণ করতে পারব। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে অবশ্যই সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা থাকতে হবে।

কমপিউটার বিচিত্রা: দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বাক্কো কী কী উদ্যোগ বা কার্যক্রম নিয়েছে?

তানভীর ইব্রাহীম: বাক্কো দেশের আইটিইএস/আউটসোর্সিং খাতকে শক্তিশালী করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে…..
দক্ষতা উন্নয়ন: বাক্কো দক্ষ কর্মী তৈরি করতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে, যাতে তারা বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক একটি অবস্থান তৈরি করতে পারে।

ইন্ডাস্ট্রি অ্যাডভোকেসি: বাক্কো সরকারের সঙ্গে এই খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা, ট্যাক্স ইনসেনটিভ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে দেনদরবার করে।

গ্লোবাল আউটরিচ এবং নেটওয়ার্কিং: বিদেশী ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে এবং বাংলাদেশকে একটি শীর্ষ আউটসোর্সিং দেশ হিসেবে প্রচার করতে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেয়।

ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন: বাক্কো ই-গভর্নেন্স এবং আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা: বিপিও শিল্পের প্রয়োজনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রমে কীভাবে বিপিওকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটি নিয়েও কাজ করে।

সিগনেচার ইভেন্ট বিপিও সামিট ২০২৫: দেশের আউটসোর্সিং/বিপিও খাতের সিগনেচার ইভেন্ট হলো বিপিও সামিট ২০২৫। এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো দেশের সকল স্টেকহোল্ডারদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসা এবং আয়োজনে সকল অংশগ্রহণকারীদের উপকার করে এমন খাতের জন্য একটি কৌশলগত রোড ম্যাপ নির্ধারণ করতে আয়োজনে থেকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম তথ্য এবং অভিজ্ঞতা তুলে আনা।

কমপিউটার বিচিত্রা: বিশ্বব্যাপী কল সেন্টার ব্যবসার বাজার এবং ভবিষ্যত?

তানভীর ইব্রাহীম: ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, গ্রাহক-কেন্দ্রিক পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি, এআই এবং অটোমেশনের উন্নতির কারণে বিশ্বব্যাপী কল সেন্টার শিল্প বিকশিত হচ্ছে। যেহেতু এআই-চালিত ভার্চুয়াল এজেন্ট এবং অমনিচ্যানেল সমর্থন মডেলগুলো শিল্পকে নতুন আকার দেয়, তাই কল সেন্টারগুলো প্রযুক্তি-চালিত, হাইব্রিড মডেলে রূপান্তরিত হচ্ছে। আগামীতে সম্ভবত মানবিক দক্ষতা এবং এআই এর মিশ্রণ দেখা যাবে। যার ফলে খরচ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগতকৃত, উচ্চ-মানের গ্রাহক অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে কল সেন্টার ব্যবসার বাজার এবং ভবিষ্যত?

তানভীর ইব্রাহীম: বাংলাদেশে কল সেন্টার খাতটি ক্রমবর্ধমান, তরুণ, প্রযুক্তিবান্ধব কর্মী এবং সার্ভিসের প্রতিযোগিতামূলক বাজার রয়েছে। বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিং বাজারের একটি বড় অংশের শেয়ার আমরা নিজেদের দখলে রাখতে পারি, এক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন এবং বাক্কো’র উদ্যোগী ভুমিকা পালন করতে হবে। দেশে খাতটির ভবিষ্যতও আশাব্যঞ্জক, বিশেষ করে এআই, ক্লাউড প্রযুক্তি এবং অমনিচ্যানেল সমর্থনের ফলে এটি বাড়ছেই। এখন বাংলাদেশকে তার ডিজিটাল অবকাঠামো এবং কর্মশক্তির দক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

কমপিউটার বিচিত্রা: কল সেন্টার খাতে সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের পথ কি?

তানভীর ইব্রাহীম: বাংলাদেশের কল সেন্টার খাতের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে মূল হচ্ছে কর্মী ধরে রাখা। একটু অভিজ্ঞ হলে কেউ আর এই খাতে কাজ করতে চায় না। সে জন্য অবশ্যই একটা প্রতিযোগিতামূলক বেতন নির্ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে। কাজের মান ধরে রাখতে হবে, সেজন্য অবশ্যই নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, প্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণ।

অবশ্যই এই খাতের অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। এটি দেশি-বিদেশী বিনিয়োগে হতে পারে। কল সেন্টারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডেটা বা তথ্যের সুরক্ষা। এটি নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে অডিট পরিচালনা করতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের অটোমেশন, নতুন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। এআই, এমএলের মতো প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জটিল কাজের জন্য হাইব্রিড কর্মী তৈরি করতে হবে।

কমপিউটার বিচিত্রা: গত কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসার যে মন্দাভাব চলছে, সে মন্দাভাব উত্তরণে বাক্কো কি পদক্ষেপ নিচ্ছে?

তানভীর ইব্রাহীম: বাক্কো সক্রিয়ভাবে স্থিতিশীল ডিজিটাল অবকাঠামো এবং নীতিগুলোর জন্য সমর্থন করছে, যা নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সমর্থন করে। একটি মূল উদ্বেগের বিষয় হল ইন্টারনেট শাটডাউনের প্রভাব, যা আউটসোর্সিং কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। বাক্কো শক্তিশালী, স্থিতিশীল ইন্টারনেট নীতি নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন নীতির জন্য জোর দিচ্ছি যা নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের অনুমতি দেয়, এমনকি জাতীয় জরুরি অবস্থার সময়ও তা অব্যহত থাকে শুধুমাত্র প্রযুক্তি খাতকে সুরক্ষিত রাখতে।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাক্কো’র আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন?

তানভীর ইব্রাহীম: নিরবচ্ছিন্ন বিপিও এবং আইটিইএস অপারেশন নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের জন্য পরামর্শ দেয়া। বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক কর্মশক্তি বিকাশের জন্য ব্যাপক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম চালু করা। আন্তর্জাতিক মান পূরণের জন্য বাক্কোর সদস্যদের জন্য সার্ভিস উন্নত করা। অংশীদারিত্ব এবং বাণিজ্য ইভেন্টের মাধ্যমে স্থানীয় ও বিশ্বব্যাপী বাজারের প্রসার ঘটানো। ই-গভর্নেন্স এবং আইসিটির মাধ্যমে ডিজিটাল রূপান্তরকে সমর্থন করা। সার্ভিসের গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করতে আইসিটি অবকাঠামো উন্নত করা। ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটিকে একীভূত করা এবং তাদের জন্য একটি অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা। বাংলাদেশ একটি নিরাপদ আউটসোর্সিংয়ের দেশ হিসেবে রয়ে গেছে তা নিশ্চিত করার জন্য ডেটা সুরক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করতে কাজ করবো।

কমপিউটার বিচিত্রা: বাক্কো’র সভাপতি হিসেবে আপনি কোন কাজগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিচ্ছেন?

তানভীর ইব্রাহীম: বাক্কো’র সভাপতি হিসেবে আমার অগ্রাধিকার থাকবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন অবকাঠামো, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ, নীতি ও নিয়ন্ত্রক সহায়তা এবং অ্যাক্সেস সুরক্ষিত করা। ক্রমাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে সেবার মান উন্নত করা, বিশেষ করে ডিজিটাল এবং এআই প্রযুক্তিতে। আমাদের নেটওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারদের একত্রিত করে এবং তাদের ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে যুব কর্মশক্তির মধ্যে ট্যাপ করা। স্থানীয় বাজার এবং আন্তর্জাতিক উভয় অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য ডেটা নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত আউটসোর্সিং হাব হিসেবে প্রচার করা।

কমপিউটার বিচিত্রা: আপনাকে ধন্যবাদ।

তানভীর ইব্রাহীম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *