বিগত তিন বছর যাবত আয়ের ধারায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’
ক.বি.ডেস্ক: ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তিন বছরে কোন আয় করতে পারেনি কথাটি সঠিক নয়’, বরং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিগত তিন বছর যাবত আয়ের ধারায় রয়েছে। ইতোমধ্যেই কোম্পানির মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কোম্পানির মাসিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই দেশীয় বাজার থেকে অর্জিত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এই আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।
গত ১৪ মে (শনিবার) বিবিসি বাংলা, ঢাকার অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: তিন বছর আয় করতে পারেনি, খরচ উঠবে কবে’ শীর্ষক খবরটি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিবেদনটিতে কোম্পানির প্রকৃত ব্যবসায়িক চিত্র প্রতিফলিত হয়নি, যার ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিএসসিএল এ ব্যাপারে নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে চায়।
বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ মোট ৩৮টি টিভি চ্যানেল এবং দেশের একমাত্র ডিটিএইচ অপারেটর আকাশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার করে। দেশের দুটি স্বনামধন্য ব্যাংক ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের এটিএম সেবা দেয়া শুরু করেছে। আরও অনেকগুলো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে, যারা অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি স্বাক্ষর সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে।
সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন) বিএসসিএলর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী এবং ডিজিএফআই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে। বাহিনীগুলো সম্মিলিতভাবে তিনটি ট্রান্সপণ্ডারের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে বিএসসিএল ৩১টি দুর্গম ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের ১১২টি স্থানে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশী সংখ্যক দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান আছে।
এ ছাড়াও জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং অনেকের সঙ্গেই আলোচনা সক্রিয় আছে। পর্যায়ক্রমে এই ব্যবসায়িক আলোচনাগুলো সফল হলে দেশীয় বাজারেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বৃহত গ্রাহক গোষ্ঠী তৈরি হবে এবং এর থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ও সম্ভব হবে।
চাহিদার তুলনায় বৈশ্বিক বাজারে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথের সরবরাহ বেশি থাকায় এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিদেশের বাজারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বিপণন কার্যক্রম ব্যহত হয়। বর্তমানে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণন কার্যক্রম নব উদ্যমে শুরু করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানি দেশীয় বাজার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে এবং স্যাটেলাইট নির্ভর নিত্য নতুন সেবার প্রসারে কাজ করছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরুর মাধ্যমে বিএসসিএল বিদেশের বাজারেও ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। অত্যন্ত জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি বিদেশি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলে সম্প্রচারের আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জাতির উন্নয়ন ও গর্বের প্রতীক । এর ওপরে জাতির অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ওপর প্রকাশিত যেকোন নেতিবাচক সংবাদ জনগণকে বিভ্রান্ত ও মর্মাহত করে। সরকারি মালিকানাধীন হলেও বিএসসিএল একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং প্রচলিত নিয়ম-কানুন মেনেই এটিকে সামনের দিকে এগোতে হবে।