বাংলাদেশে বিনিয়োগ এখনই উপযুক্ত সময়: চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগকে উন্মুক্ত বাহুতে আলিঙ্গন করছে। সরকার সক্রিয়ভাবে আইসিটি সেক্টরের প্রবৃদ্ধি জোরদার করছে, স্টার্টআপদের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে, টেক পার্কে বিনিয়োগ করছে এবং উদ্ভাবনা ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করে এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের অবস্থান তৈরি করছে এবং আমরা আপনাদের এই আকর্ষণীয় যাত্রার শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে আমরা দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে পারি।
আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চীনে চার দিনের দ্বিপাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনে যোগ দিয়ে বেইজিংয়ে “বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ” শীর্ষক এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং সিসিপিআইটি চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং, শাংরি-লা সার্কেল এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে বাংলাদেশ ও চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়েছে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং টংঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন এবং বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম। বাংলাদেশ ও চীনের কয়েকশ’ ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা এই সম্মেলনে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং চীনের সঙ্গে ক্রয়-ব্যাক ব্যবস্থাসহ কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে অনেকগুলো সেবা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি অঞ্চল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। প্রধান অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পাঁচটি দেশের জন্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে।
সরকার প্রধান বলেন, সরকার আরও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ দেয়ার জন্যে একাধিক সংস্কার কাজ শুরু করেছে। সরকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে মসৃণ ও দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, সরলীকৃত পদক্ষেপ ও পদ্ধতি তৈরি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং উন্নত অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের লক্ষ্য হল বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে স্থান করে দেয়া। বাংলাদেশ তাই বিশ্বমানের আইসিটি ভিত্তিক, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক সিস্টেম নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি প্রথম লজিস্টিক নীতি প্রণয়ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সরবরাহের অর্জনও আমাদের রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে নতুন। বাংলাদেশে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার গোষ্ঠী রয়েছে। আমরা এমনকী দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি। সরকার পর্যায়ক্রমে ৩৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে এবং কিছু প্রতিশ্রুতিশীল খাতে বিদেশী বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা আমাদের ভিশন। আমাদের যুবকরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশের সম্ভাব্য খাত আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর পরিমাণে বিনিয়োগ করার জন্য চীনা উদ্যোক্তাদের এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
