স্বাক্ষাতকার

বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ স্টোরেজে বিশ্বস্ততা বাড়াবে বাইউইন (BIWIN)

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্ল্যাশ স্টোরেজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইউইন (BIWIN) সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে। বিশ্বখ্যাত এইচপি ও এসার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অন্যান্য ব্র্যান্ড এবং হোয়াইট লেভেল ব্র্যান্ডিংয়ে ফ্ল্যাশ স্টোরেজ তৈরি, বাজারজাতকরণ ও গ্রাহক বিশ্বস্ততা তৈরিতে কাজ করবে বাইউইন। সম্প্রতি কমপিউটার বিচিত্রার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাইউইন এবং বাংলাদেশে বাইউইন এর প্রতিনিধিত্বকারী ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন: বদরুদ্দোজা মাহমুদ তুহিন এবং ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ

সাক্ষাতকারে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে বাইউইন (BIWIN) এর কনজ্যুমার ডিভিশনের প্রধান রাজেশ খুরানা বলেন, বাইউইন হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্ল্যাশ স্টোরেজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, যেটি বিগত প্রায় এক দশক ধরে ব্যবসা করে চলেছে। আমরা অনুমোদিত পার্টনার হিসেবে এইচপি এবং এসার ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাশ স্টোরেজ তৈরি এবং বিশ্বজুড়ে সেটির বাজারজাত করে আসছি। এসার ব্র্যান্ডের এসএসডি, এসডি কার্ড, মাইক্রোএসডি কার্ড তৈরি ও বাজারজাত করে থাকি। একইভাবে এইচপি ব্র্যান্ডের এসএসডি, ইন্টারন্যাল ও এক্সটার্নাল এসএসডি, ডির‍্যাম পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করি। এই দুই ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বাইউইন ফ্ল্যাশভিত্তিক স্টোরেজ পণ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। যদি কেউ তাদের নিজস্ব নামে পণ্য তৈরি করতে চায়, সেক্ষেত্রে বাইউইন হোয়াইট লেভেল করে থাকি। এগুলোর জন্য আমরা বেশ প্রসিদ্ধ।

এ ছাড়া বাইউইন ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) প্যাকেজিং তৈরির জন্যও সুপ্রতিষ্ঠিত। ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট প্যাকেজিং হলো সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ফ্যাব্রিকেশনের চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে সেমিকন্ডাক্টর উপাদানের ব্লককে একটি সাপোর্টিং কেসে আবদ্ধ করা হয়, যা আঘাতজনিত ক্ষতি ও ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। বাইউইন ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে যেভাবে চাহিদা সেভাবে আইসি প্যাকেজিং করে থাকে, বলে জানান রাজেশ খুরানা।

রাজেশ খুরানা বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেটের বিস্তার এবং বিশ্বব্যাপী ফাইভজি’র সম্প্রসারণে অনেক আইওটি ডিভাইস বাজারে আসছে। স্মার্টওয়াচ, রিস্টব্যান্ড থেকে শুরু করে ইন্টারনেট চালিত সকল ডিভাইসে নানা ধরণের স্টোরেজের প্রয়োজন হয়। বাইউইন সেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসের জন্য বিভিন্ন ধরণের স্টোরেজ সলিউশন তৈরি করে থাকে। এগুলো আমরা ‘কাস্টোমাইজড স্টোরেজ সলিউশন’ বলে থাকি। বাইউইন এক্ষেত্রে অনেক বড় কোম্পানি। বাইউইন এর কারখানাগুলো সেইভাবেই বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে সজ্জ্বিত। প্রায় এক দশক ধরে আমরা এগুলোই করছি, আমাদের জন্য এগুলো নতুন কিছু নয়। শেনজেনে আমাদের সদর দফতর এবং হাউসু ফ্যাক্টরিতে এসব পণ্য তৈরির জন্য উচ্চমানের ও আধুনিক কারখানা রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে বাইউইন (BIWIN) এর কনজ্যুমার ডিভিশনের প্রধান রাজেশ খুরানা

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা বাংলাদেশে আসছি। বাংলাদেশে বাইউইন ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি নামে আছি, যেটি আমাদের তৈরি পণ্যগুলো বাজারজাত করবে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দ্রুতবর্ধনশীল বাজার। প্রতি মাসেই এখানে চাহিদা বেড়ে চলেছে।এখানকার বাজারে একটি ‘অর্গানাইজড স্ট্র্যাকচার’ তৈরি করা প্রয়োজন। বাইউইন ইন্টেলিজেন্ট এর অধীনে পার্টনারদের অথরাইজেশন প্রদান করবো। যখন কেউ কিছু কিনবে বা কিনতে চাইবে তখন ঐ পার্টনার প্রতিষ্ঠানই মূলত দায়বদ্ধ থাকবে। আমরা বাইউইন থেকে পার্টনারদের অথরাইজড করবো। কেউ যদি এইচপি পণ্য বাজারজাত করতে বাইউইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে আমরা তাদেরকে অথরাইজড পার্টনার সার্টিফিকেশন দিবো। ধরুন, আপনি এইচপি’র অথরাইজড পার্টনার হিসেবে এসএসডি ও ডির‍্যাম বিক্রি করছেন। এখন আপনি চাইলে এসার এর অথরাইজড পার্টনারও হতে পারবেন। আমরা সেই সার্টিফিকেশন প্রদান করবো।

প্রথমত, আমরা অথরাইজড লিগ্যাল পার্টনার খুঁজবো যারা ইন্টেলিজেন্ট থেকে পণ্য কিনবেন এবং বাজারে বিক্রি করবেন। দ্বিতীয়ত, ক্রেতাদের কাছে যাতে আসল পণ্যটি পৌঁছায় বাইউইন সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করবে। কারণ আমরা আমাদের রিসেলারদের সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমরা সেইভাবেই আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ইন্টেলিজেন্টের উপস্থিতি আছে। ফলে ইন্টেলিজেন্টের মাধ্যমে সম্ভাব্য পার্টনাররা আমাদের কাছে আসতে পারেন। সংক্ষেপে বলা চলে, আমরা প্রথমত চ্যানেল অথরাইজেশন ও সার্টিফিকেশন প্রদান করবো। দ্বিতীয়ত ইন্টেলিজেন্টের মাধ্যমে স্থানীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করবো। আমরা মনে করি, এইচপি এবং এসারের মতো বিশ্বনন্দিত ব্র্যান্ড নিয়ে বাইউইন বাংলাদেশে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি লিমিটেডের কান্ট্রি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এস এম এম মনোয়ার সাগর।

অপর এক সাক্ষাতকারে ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির ডিরেক্টর (সেলস) সাতপাল সিং ভিরদি বলেন, হংকংয়ে যাত্রা করা ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি ১৫ বছরের অধিক পুরাতন একটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসায় করে থাকে। দুই বছর আগে ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পণ্য বাজারজাতকরণে বাইউইন এর সঙ্গে চুক্তি করে। এরপর থেকে আমরা বাইউইন এর তৈরি এইচপি ব্র্যান্ডের এসএসডি, র‍্যাম; এসার ব্র্যান্ডের এসএসডি মেমরি, সিএফ কার্ড, টিএফ কার্ড এবং পেনড্রাইভ বাজারজাত শুরু করেছি। আমরা এই অঞ্চলে মূলত ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসায় করে থাকি এবং আগামীতে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউশনও করতে চাই। আমরা ক্রেতাদের কাছে এইচপি, এসারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অরিজিনাল পণ্য পৌঁছে দিতে চাই। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি।

বিপণন কৌশল নিয়ে সাতপাল সিং ভিরদি জানান, আমরা দেশজুড়ে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করেছি এবং তারা একটি চ্যানেল তৈরি করেছে। আমাদের স্থানীয় টিমও রয়েছে। আমরা আমাদের ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে বিভিন্ন সেগমেন্টে সহায়তা করছি। শুধু রিটেইল নয়, চ্যানেল বিজনেসের পাশাপাশি টেন্ডার ব্যবসায়ও তারা সহায়তা পাবেন। আমরা তাদেরকে জেনুইন পণ্য এবং স্থানীয়ভাবে সেবা প্রদান করবো।

আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি এআই এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরাও সেভাবে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছি। আমরা একইভাবে আমাদের পণ্যকে তৈরি করে বাজারে আনছি। বাংলাদেশ একটি দ্রুতবর্ধনশীল বাজার, আমাদের কাছে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বাজারে অনেক অবৈধ চ্যানেলে পণ্য আসে ও সস্তায় কেনা যায়, তাই আমরা গ্রাহক সচেতনতায় কাজ করবো। জেনুইন পণ্যের পাশাপাশি গ্রাহক যাতে কোম্পানির প্রকৃত বিক্রয় পরবর্তী সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করবো। এজন্য প্রথমত আমাদের ডিস্ট্রিবিউটরদের সার্টিফিকেশন দেবো এবং ব্র্যান্ড যেভাবে ওয়ারেন্টি সহায়তা দেয় সেভাবে গ্রাহকদের সহায়তা দেয়া হবে। ফলে গ্রাহকরা তাদের কাছ থেকে এক্সচেঞ্জ বা ওয়ারেন্টি সেবা পাবেন, যা অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আসা পণ্য কিনে পাওয়া সম্ভব নয়। ক্রেতারা যাতে সঠিক পণ্যটি পান সেজন্য ওয়েবভিত্তিক সলিউশন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ছবিতে বা থেকে: ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির ডিরেক্টর (সেলস) সাতপাল সিং ভিরদি এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড এস এম এম মনোয়ার সাগর

বাংলাদেশে ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির কান্ট্রি হেড এস এম এম মনোয়ার সাগরকে নিযুক্ত করা প্রসঙ্গে সাতপাল সিং ভিরদি বলেন, সাগর আমাদের কোম্পানির ভিশন এবং মিশন সম্পর্কে ভালো জানেন। তিনি স্থানীয় বাজার সম্পর্কেও অভিজ্ঞ।

আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি পন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি লিমিটেড এর বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড হলেন এস এম এম মনোয়ার সাগর। বাংলাদেশে বাজার সম্প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গতবছর কান্ট্রি হেড হিসেবে মনোয়ার সাগর কে নিয়োগ দেয়। মনোয়ার সাগর দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইসিটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। কমপিউটার সোর্স এ দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছেন। এইচপি বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মনোয়ার সাগর বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই উৎপাদন এবং অনুশীলন থেকে শুরু করে নেতৃস্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে বিতরণের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। আইসিটির আনুষঙ্গিক সমস্ত পণ্যের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়া। বাইউইন এইচপি স্টোরেজ, এসএসডি র‍্যাম এর একমাত্র বাংলাদেশের অথরাইজ চ্যানেল প্রোডাক্ট পার্টনার। এসার স্টোরেজ, এসএসডি, র‍্যাম এবং গেমিং র‍্যাম বাজারজাত করে। নর্টন এবং ম্যাকাফি এন্টি-এন্টিভাইরাসেও একমাত্র বাংলাদেশের অথরাইজ চ্যানেল প্রোডাক্ট পার্টনার। কমপিউটার এক্সেসরিজ, মনিটর, কিবোর্ড, মাউস, পাওয়ার সাপ্লাই, মাদারবোর্ড, স্পিকার, জুক (Zook) মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ, Secrueye-সিসি ক্যামেরার হোটেল, রুম সলিউশন বাজারজাত করে।

ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হংকং, চীন, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি বহু-মহাদেশীয় বিতরণ নেটওয়ার্ক রয়েছে যা সার্ক, অ্যাপাক ( APAC) এবং এমইএ (MEA) অঞ্চলগুলোকে কভার করে। প্রতিষ্ঠানটি সেবার সঙ্গে সকল গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে অত্যাধুনিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত পণ্য বিতরণ করছে।

বিস্তারিত জানার জন্য: https://www.intelligent.hk/

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *