সাম্প্রতিক সংবাদ

বাংলাদেশে ডেটা বিপ্লব: গেজেট হলো প্রথম ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন

ক.বি.ডেস্ক: নাগরিকের তথ্য বিক্রি বা অপব্যবহার আজ থেকে বেআইনি, শুরু হলো বাংলাদেশের ডেটা গভর্নেন্সের নতুন যুগ। বাংলাদেশের ডিজিটাল ইতিহাসে যুক্ত হলো এক ঐতিহাসিক মাইলফলক, দেশের প্রথম ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য এখন আইনের সুরক্ষায় এসেছে, আর ডেটা-চালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে জবাবদিহির আওতায় আসতে।

আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এর ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

নাগরিকের তথ্য এখন আইনের আওতায়
এখন থেকে কোনও প্রতিষ্ঠান নাগরিকের ডেটা অনুমতি ছাড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা বিক্রি করতে পারবে না। যে কেউ বা যে প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করবে, তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা।
এটি কার্যত বাংলাদেশের ডিজিটাল নাগরিকদের প্রাইভেসি রক্ষার প্রথম বাস্তব আইনি ঢাল। এটি শুধু কাগজে একটি ধারা নয়; এটি নাগরিকদের তথ্য-অধিকার, প্ল্যাটফর্মদের দায়বদ্ধতা এবং দেশের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নতুন বাস্তবতার সূচনা।

কী বদলে যাবে?
উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে স্বচ্ছতা: প্রতিষ্ঠান সেটি স্থানীয় হোক বা বহুজাতিক তাদের ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও শেয়ারের প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে বাধ্য হবে।

নির্দিষ্ট সম্মতি ও জবাবদিহি: ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহার করতে হলে ব্যক্তির স্পষ্ট সম্মতি চাইবে, আর কোন অনৈতিক বা গোপন কার্যকলাপ হলে প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করতে হবে।

সংবেদনশীল ডেটার কড়া নিয়ন্ত্রন: স্বাস্থ্য, ধর্ম, জাতিগত, রাজনৈতিক মতামত ইত্যাদি সংবেদনশীল ডেটার ব্যবহার ও আদান-প্রদান বিশেষ নিয়মের আওতায় আনা হলো।

প্ল্যাটফর্ম লাইয়াবিলিটি: সামাজিক ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে, তারা অবৈধ ডেটা-বাণিজ্য বা অপব্যবহারের সঙ্গে সক্রিয় বা নীরবভাবে জড়িত হলে আইনগত কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হবে।

ডেটা সার্বভৌমত্ব: বাংলাদেশি নাগরিকদের ডেটা অনবরত বিদেশে বহন করে বা সার্ভারে রাখা হলে তা নতুন নিয়মে নিয়ন্ত্রিত হবে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা গুরুত্ব বাড়ল।

প্ল্যাটফর্ম লাইয়াবিলিটি ও জবাবদিহি
সোশ্যাল মিডিয়া, ই-কমার্স বা ডিজিটাল সেবা সব প্ল্যাটফর্মকেই এখন তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে। গোপনীয় বা সংবেদনশীল ডেটা ফাঁস হলে “আমরা জানতাম না” বলে দায় এড়ানো যাবে না। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে আসবে আস্থা, নৈতিকতা ও নিরাপত্তা।

ডেটা সার্বভৌমত্ব: বাংলাদেশের ডেটা বাংলাদেশেরই থাকবে
নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকের ডেটা বিদেশে পাঠানো বা বিদেশি সার্ভারে সংরক্ষণ করতে হলে বিশেষ অনুমতি লাগবে। এর ফলে দেশের ভেতরে ডেটা সেন্টার ও লোকাল হোস্টিং সেবার চাহিদা বাড়বে,
আর বাংলাদেশের ডেটা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে বাস্তবে।

আইন বাস্তবায়নের পেছনের সংগ্রাম
এই আইন পাসের পথে ছিল তীব্র বাধা, সংগঠিত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক চাপ। কিন্তু ডিজিটাল নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট টিম দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছেন। তাদের কথায়, “যারা ডেটাকে ব্যবসার হাতিয়ার বানিয়েছিল, আজ তাদের সেই অনৈতিক ব্যবসার কবর রচিত হলো।”

নাগরিকদের করণীয়
নিজের ডেটা ব্যবহারের শর্তাবলি সবসময় পড়ে নিন। সন্দেহজনক ডেটা-অনুরোধ দেখলে অভিযোগ জানান। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত তথ্য সীমিত রাখুন, বিশেষত অনিরাপদ বা অপরিচিত সাইটে।

নতুন যুগের সূচনা
এই গেজেট ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রমাণ করল “আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে।” ডেটা বাণিজ্যের যুগ শেষ, শুরু হলো ডেটা ন্যায়বিচারের যুগ। এটি শুধু একটি আইন নয়, বরং এক ঘোষণা- নাগরিকের গোপনীয়তা এখন সংবিধান-সমান গুরুত্ব পাবে, প্ল্যাটফর্ম হবে জবাবদিহিমূলক, আর ডিজিটাল রুপান্তর হবে সত্যিকারের ডেটা সার্বভৌম রাষ্ট্র।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *