বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা আয় করছে ‘জাতীয় তথ্য ভান্ডার’
তথ্য সংরক্ষণে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে বাংলাদেশ বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ক্লাউড কমপিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তিতে স্থাপিত ‘‘জাতীয় তথ্যভান্ডার’’ বা ‘‘ডেটা সেন্টার’’ দেশের অত্যাধুনিক তথ্য ভান্ডার হিসেবে এ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় তথ্যভান্ডার নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন… সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন
জাতীয় তথ্যভান্ডার বা ডাটা সেন্টার: সাত একর জমির ওপর নির্মিত ‘হার্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’ খ্যাত তথ্যভান্ডারটি ইতোমধ্যে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর ডেটা সেন্টারের স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশীয় তথ্যের সুরক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই তথ্যভান্ডার ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) কর্তৃক পরিচালিত এই তথ্যভান্ডারটি ফোর টিয়ার ডেটা সেন্টার, যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায় এবং আপটাইম ৯৯.৯৯৫ শতাংশ। এই ডেটা সেন্টারের ব্যাকআপ হিসেবে যশোরে স্থাপিত ‘শেখ হাসিনা টেকনোলজি পার্কে’ দুই পেটাবাইট ক্ষমতাসম্পন্ন তিন স্তর বিশিষ্ট ডিজেস্টার রিকোভারি ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যে কোনো কারণে জাতীয় ডেটা সেন্টার দূর্যোগ কবলিত হলে সকল তথ্য সেখান থেকে উদ্ধার করা যাবে।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা’র নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের তথ্য উপাত্ত নিরাপদে সংরক্ষণ এবং নিরবচ্ছিন্ন গুণগত মানসম্পন্ন ই-সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় দেশে একটি ফোর টিয়ার জাতীয় তথ্যভান্ডার নির্মাণের পরামর্শ দেন। সে আলোকেই এই তথ্যভান্ডারটি গড়ে তোলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যমে এই ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের আপটাইম ইন্সটিটিউট কর্তৃক স্বীকৃতপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একমাত্র ফোর টিয়ার ডেটা সেন্টারটি ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ডেটা সেন্টার ডাইনামিক সংস্থা কর্তৃক ডিসিডি-এপিএসি অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ অর্জন করেন।
বিডিসিসিএল ব্যবস্থাপক এ কে এম লতিফুল কবির বলেন, এ ডাটা সেন্টারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ২,০০,০০০ স্কয়ার ফিট বিশিষ্ট তথ্যভান্ডারের মূল দ্বিতল ভবন, দুই পাশে দুইটি ইউটিলিটি ভবন এবং সামনে একটি অভ্যর্থনা ভবন। ডাটা সেন্টারের নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স নিশ্চিত করতে বিদ্যুত ও ইন্টারনেট সংযোগসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে রিডান্ডেন্সি (দ্বৈততা) রয়েছে। এখানে ক্লাউড কমপিউটিং, ক্লাউড ডেক্সটপ, ক্লাউড স্টোরেজ, ডাটা স্টোরেজ ও ব্যাকআপ, ডাটা সিকিউরিটি ও কো-লোকেশন সার্ভিস রয়েছে, যা সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে এই কোম্পানির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, সরকারের ই-নথি ও এটুআই প্রকল্পসহ সরকারের ১০টি প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দুই পেটাবাইট ক্ষমতা নিয়ে এই সেন্টারটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এর ক্ষমতা ২২ পেটাবাইটে উন্নীত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি ২০০ পেটাবাইটে উন্নীত করা হবে। ডাটা সেন্টারে ওরাকল প্রযুক্তির জি-ক্লাউড স্থাপন সম্পন্ন হলে এর মাধ্যমে ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যাজ এ সার্ভিস (আইএএএস), প্লাটফর্ম এ্যাজ এ সার্ভিস (পিএএএস) এবং সফটওয়্যার এ্যাজ এ সার্ভিস (এসএএএস) এই তিনটি সেবাই দেয়া সম্ভব হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ওরাকল এর লাইসেন্স ও নবায়ন বাবদ বাতসরিক ব্যয় ৪৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে এবং কোম্পানির আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বলেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জনপ্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো, তথ্য সংরক্ষণ ও জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতেই সরকার এই ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার স্থাপন করে। এতে ডিজিটাল কনটেন্টগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে জনসেবা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি কার্যালয়ের আইসিটি কার্যক্রম সরাসরি যুক্ত থাকবে। রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ১১ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-নথি ও সুরক্ষাসহ ৫৫ হাজার ওয়েবসাইট এই ফোর টিয়ার ডাটা সেন্টারে রক্ষিত আছে। হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেইনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার এবং স্কুল অব ফিউচার যদি হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত-পা, তাহলে এই ডেটা সেন্টার হলো মস্তিস্ক। আমাদের লক্ষ্য হলো, আমরা গভর্নমেন্ট ক্লাউডে (জি-ক্লাউড) যাবো। এতে আমাদের তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা হবে অসীম। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই আমরা ওরাকল জি-ক্লাউড চালু করতে পারবো। তখন এটি হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ব বৃহত জি-ক্লাউড প্লাটফর্ম।