ফেসবুকে নিরাপদ থাকার পাঁচটি উপায়
দেশের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাই, অনলাইনে নিজেদের পরিচয়ের গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে যেকোনো ক্ষতিকর আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি আমরা যেসব তথ্য শেয়ার করি, তা নিরাপদ রাখার জন্য সচেতন থাকা বেশ জরুরি।
দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যাংকিং, কেনাকাটা বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আমরা যেমন নানাবিধ সুবিধা উপভোগ করি, তেমনি ফেসবুকে রয়েছে আরও অসংখ্য সুবিধা, নীতিমালা ও টুলস, যা হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে আপনার পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
ফেসবুকে নিজের পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাঁচটি অনন্য ফেসবুক সিকিউরিটি টুল সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। এর প্রতিটিই ফেসবুকের ডেস্কটপ বা মোবাইল অ্যাপ থেকে সহজে ব্যবহার করা যাবে।
ডেস্কটপ থেকে: প্রোফাইল অ্যাভাটার > সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি > সেটিংস
ফেসবুক অ্যাপ থেকে: মেন্যু > সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি > সেটিংস
(এক) ওয়াজ দ্যাট মি? (এটা কী আমি ছিলাম?)
‘হোয়্যার ইউ আর লগড্ ইন’ সুবিধাটির মাধ্যমে আপনি কোন অবস্থান ও ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করেছেন, তা দেখার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের যেকোনো অস্বাভাবিক কার্যক্রম বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে চিহ্নিত করতে পারবেন এবং অপরিচিত কোনো স্থান থেকে লগ ইন হওয়া ডিভাইসকে ‘নট মি’ হিসেবে বেছে নেয়ার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করে তোলার পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যদি আপনি প্রায়শই অনেকে ব্যবহার করে থাকে এমন কম্পিউটার বা অন্য কারো ডিভাইস থেকে ফেসবুকে লগ ইন করে থাকেন, তাহলে এই ফিচারটি নিয়মিত চেক করে দেখা আপনার জন্য খুবই জরুরি।
(দুই) ইজ দ্যাট ইউ? (এটা কি আপনি?)
অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সেরা উপায় হল অপরিচিত লগইনের জন্য অ্যালার্ট চালু করা। ‘গেট অ্যালার্টস অ্যাবাউট আনরিকগনাইজড লগইনস’ ফিচারটি চালু করার মাধ্যমে আপনি অপরিচিত কোনো ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন হওয়ার সাথে সাথে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও নিবন্ধিত ইমেইলে একটি নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন, ফলে অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো কার্যক্রম দ্রুত চিহ্নিত করতে পারবেন।
(তিন) পাসওয়ার্ডকে হালকাভাবে নেবেন না
অনেকেই মনে রাখার সুবিধার্থে সহজ এবং নিজের বিশেষ কোনো স্মৃতির (জন্মদিন, বার্ষিকী, স্বামী/স্ত্রী/প্রিয়জনের নাম) সাথে মিল রেখে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা সহজেই অনুমান করে নেয়া যায়। তাই, অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করে হ্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের জন্য কাজটি কঠিন করে দিতে হলে পাসওয়ার্ডে থাকা চাই সংখ্যা, বিভিন্ন ক্যারেক্টার ও শব্দের অনন্য সমন্বয়। অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ও বিভিন্ন ক্যারেক্টার মিলিয়ে দেয়া পাসওয়ার্ড চুরি করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি থেকে চেঞ্জ পাসওয়ার্ডে ক্লিক করে আপনি আপনার পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করে নিতে পারেন। অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।
পাসওয়ার্ড তৈরির কিছু টিপস!
আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড আপনার ইমেইল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো অন্যান্য অ্যাকাউন্টে ব্যবহৃত পাসওয়ার্ডের চাইতে ভিন্ন হওয়া উচিত। পাসওয়ার্ড যত দীর্ঘ, ততই নিরাপদ। পাসওয়ার্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার ই-মেইলের ঠিকানা, ফোন নম্বর বা জন্মদিনের মতো অনুমেয় তথ্যগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
(চার) দুই স্তরের নিরাপত্তা
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে আরো নিরাপদ করে তুলতে চাইলে এর টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে লগইনের চেষ্টারত ব্যক্তি আপনিই কি না, তা নিশ্চিতে দুটি ধাপ পার করতে হবে। সাধারণত প্রথম ধাপে পাসওয়ার্ড প্রবেশের পর দ্বিতীয় ধাপে ব্যবহারকারীকে একটি লগইন কোডও প্রবেশ করতে হবে, যা ওই ব্যবহারকারীর নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বরে টেক্সট মেসেজ বা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) হিসেবে পাঠাবে ফেসবুক।
ব্যক্তিগত বা অর্থ সংক্রান্ত তথ্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন ক্ষেত্রে ব্যাংক বা অন্যান্য অনলাইন সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই এ ধরনের দুই স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। নিরাপদ উপায়ে লগইনের পর আপনি প্রয়োজনে অথোরাইজড লগইনস সুবিধার মাধ্যমে যে সকল ডিভাইস নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলোকে আলাদাভাবে নির্বাচিত করে রাখতে পারেন; সেক্ষেত্রে, পরবর্তীতে এই ডিভাইসগুলোতে আর কোড দিতে হবে না। এছাড়াও, আপনি অ্যাপ পাসওয়ার্ডসও সেট করে নিতে পারেন।
(পাঁচ) ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে সতর্ক থাকুন
যেকোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে নিশ্চিত হোন, এটি বিশ্বাসযোগ্য কি না। আপনার ওয়েব ব্রাউজারটি হালনাগাদকৃত রাখুন এবং ব্রাউজারের অ্যাড-অনস বা যেকোনো অ্যাপের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তা মুছে ফেলুন। অপরাধপ্রবণ ডেভেলপাররা কার্টুন ইমেজ এডিটর বা মিউজিক প্লেয়ারের মত বিভিন্ন মজার বা কার্যকর অ্যাপের আদলে ক্ষতিকর অ্যাপ তৈরি করে তা মোবাইল অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এই অ্যাপগুলো ইনস্টলের পর উল্লেখিত ফিচারের সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের ফেসবুকের মাধ্যমে লগইনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে, যা আসলে তাদের তথ্যচুরির কৌশল। কেউ তথ্য প্রবেশ করালেই ক্ষতিকর সফটওয়্যারটি তা চুরি করে নেয় এবং পুরোপুরিভাবে ওই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, যার মাধ্যমে তারা পরবর্তীতে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বা ব্যবহারকারীর বন্ধুদের বিভিন্ন মেসেজ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে