প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বই পড়ার অধিকার নিশ্চিতে মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ
ক.বি.ডেস্ক: দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রকার পঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বই পড়ার সংকট দূর করতে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থার মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মেধাসত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সদর দপ্তরে গত সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান সংস্থাটির মহাপরিচালক ড্যারেন টাং এর হাতে মারাকেশ চুক্তিতে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষরের দলিল হস্তান্তর করেন। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পড়ার সুযোগকে অবারিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৬তম দেশ হিসেবে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
উল্লেখ্য, মরক্কোর মারাকেশ শহরে ২০১৩ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ডব্লিউআইপিও-এর একটি কূটনৈতিক সম্মেলনে ‘মারাকেশ চুক্তি’ চূড়ান্ত করা হয়। এই চুক্তির আওতায় দৃষ্টি ও পঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অ্যাকসেসিবল বই (যেমন: ডেইজি মাল্টিমিডিয়া টকিং বই, ব্রেইল ইত্যাদি) মুদ্রণ ও এক দেশের বিভিন্ন অ্যাকসেসিবল কনটেন্ট অন্য দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়। চুক্তিটি ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের আগে এই চুক্তিতে প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা অনুস্বাক্ষর করেছে।
আন্তর্জাতিক মেধাসত্ব সংস্থার মহাপরিচালক ড্যারেন টাং বলেন, মারাকেশ চুক্তি’তে অনুস্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তরুণরা’সহ সকলের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সমান অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সকল প্রকার পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটি একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।
মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের ৩ লক্ষ ৪০ হাজারের অধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ডব্লিউআইপিও এর ‘অ্যাক্সেসিবল বুক কনসোর্টিইয়াম’ এর ৮ লক্ষাধিক বই পড়ার সুযোগ তৈরি হবে। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এটুআইর যৌথ উদ্যোগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য গুণগত শিক্ষা প্রদানে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ও এক্সেসিবল ডিকশনারি তৈরি, বছরের শুরুতে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়া এটুআই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। মারকেশ চুক্তিতে অনুসমর্থন করে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষায় সমান সুযোগ প্রদান এবং জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (ইউএনসিআরপিডি) ও ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ অর্জনে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গিয়েছে।