নির্বাচন কমিশনের দুটি অ্যাপ উদ্বোধন
ক.বি.ডেস্ক: অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দুটি অ্যাপ উদ্বোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অ্যাপ দুটি হলো- অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) এবং স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি। এই অ্যাপের মাধ্যমে অধিকতর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, এ দুটি সিস্টেম আজ উদ্বোধন করা হলেও সবার জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।
অ্যানড্রয়েড ও অ্যাপল মোবাইল ইউজাররা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। ১০ বছর মেয়াদি এই পদ্ধতি চালু করতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
রোববার (১২ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপ দুটি উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এ সময় অনুষ্ঠানে ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ ইসির বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রযুক্তি নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল, প্রার্থীদের আচরণবিধি ঠিক রাখতে এবং নানা অনাচার বন্ধে কাজ করবে। ভবিষ্যতে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু হতেও পারে, তবে এখনো তা নিশ্চিত নয়। মনোনয়নপত্র সাবমিশন করতে গিয়ে শোডাউন করা হয়। এই শোডাউন কালচারে পরিণত হয়েছে। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়, সংঘাতও হতে পারে। অনলাইনে কাজ হলে এসব অনাচার কমবে, নির্বাচন ব্যবস্থা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হবে। এটা ব্যবহার খুবই সহজ। আমরা বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচনে অনলাইনে সাবমিশন ব্যবহার করেছি, এটা কঠিন কিছু না। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এটা অনেক আধুনিক হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। বলতে পারেন সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তবে আমাদের সিস্টেমটা তাদের চেয়ে উন্নত ও তথ্যবহুল।’’
ইসি মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘‘এই অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়া যাবে। এর আগে সশরীরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে অনেক লোকসমাগম হতো এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে হতো। এসব কারণেই আমরা একটা অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। এর পাশাপাশি ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ এর ফলে কার ভোটার নম্বর কত, কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে এগুলোর আর দরকার হবে না। এই ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ এ জন্ম তারিখ ও মোবাইল নাম্বার দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এই অ্যাপে বেসরকারিভাবে নির্বাচিতদের নাম জানা যাবে। এই অ্যাপে সঙ্গে সঙ্গেই সব আসনের জয়ী এবং ভোট পড়ার শতাংশের হার জানতে পারবে। এর ফলে নির্বাচন কমিশন অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে।’’
ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘‘গত কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু সেটা খুব একটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সেটা আজকে বাস্তবায়ন হলো। আর ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ যেটা গত কয়েকটা নির্বাচনে ব্যবহার করেছিলাম, তা থেকে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সেখান থেকেই এটি করার জন্য বলা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন সেটা করেছে। নির্বাচনে প্রার্থীর তথ্য নিয়ে অপপ্রচার হয়। তবে ভবিষ্যতে কোনো ভোটার যখন প্রার্থী সম্পর্কে জানতে চাইবে তখন কিন্তু তারা ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ অ্যাপে সব দেখতে পারবেন। এই অ্যাপে প্রার্থীর সব তথ্য-প্রমাণ থাকবে। অর্থাৎ, অপপ্রচারগুলো যাচাই করে নেয়া যাবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে ভোটের বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকে, সেটাও দূর হবে।’’
ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘‘আমাদের প্রত্যেকের জীবন এখন প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা যখন এখানে কমিশনার হিসেবে যোগ দেই তারপর থেকে যতগুলো ইলেকশন হয়েছে প্রায় সবগুলোতেই মনোনয়ন সাবমিশনের দিন থেকে আচরণবিধি ভঙ্গটা শুরু হয়ে যায়। মনোনয়ন সাবমিশন করতে এসে বিভিন্ন শোডাউন করে। কিন্তু আইনে বলা আছে, মনোনয়ন জমার সময় শোডাউন করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, এই অ্যাপের ফলে ভোট অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক হবে এবং সাধারণ জনগণ এটাকে খুব ভালোভাবে নেবে।’’
ইসি ব্রি. জে. (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, ‘‘আমরা অতীতে দেখেছি যে, প্রথমদিনেই মনোনয়ন সাবমিশন করতে আসে তখন কিন্তু আমাদের সম্মানিত প্রার্থীরা শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। এতে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হতো। তারা প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করতেন। এই অ্যাপ দুটি বিশেষ পদ্ধতি, যার ফলে তাদের আচরণবিধি ভঙ্গ করতে দিবে না। এ ছাড়া, আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেয়া হয় বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বল প্রয়োগ করা হয়। এই অ্যাপের ফলে আর কেউ এরকম সুযোগ পাবে না।’’