প্রতিবেদন

‘নিক্স’ দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো এবং আইটি ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করবে

ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর কবির: একটি সময়ের গল্প, যখন ছোট একটি গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের দেশের বড় শহরগুলোতে থাকা তথ্যের কাছে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত। এই গ্রামবাসীরা ভাবলো, যদি গ্রামের কাছেই তথ্যের একটি বড় ভাণ্ডার থাকত, তবে আমরা সহজে এবং দ্রুত সেই তথ্য পেতে পারতাম। এতে সময় এবং খরচও কমে আসত। এই চিন্তা থেকেই গ্রামবাসীরা নিজেদের মাঝে একটি ডেটা হাব তৈরি করার পরিকল্পনা করল, যেখানে সব প্রয়োজনীয় তথ্য আগে থেকেই মজুদ থাকবে।

ঠিক একইভাবে, আমরা ‘নিক্স’ (NIX-National Internet Exchange) -এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি করতে চাই যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক কন্টেন্ট সহজেই মজুদ থাকবে। এই ব্যবস্থা শুধু দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দেবে না, বরং শেষ ব্যবহারকারীরা সহজেই তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং বিনোদনের উপকরণ পেয়ে যাবেন।

নিক্স’ (NIX) এর মূল লক্ষ্য
আমরা এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাই যা, লোকাল কন্টেন্ট সরাসরি স্থানীয় নেটওয়ার্কে সংরক্ষণ করবে, ফলে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য দ্রুতগতির সেবা নিশ্চিত করবে। আন্তর্জাতিক কন্টেন্ট সহজে স্থানীয় নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখবে, যাতে ব্যবহারকারীরা দেশের মধ্যেই কম খরচে উচ্চমানের ইন্টারনেট উপভোগ করতে পারেন। প্রতিটি আইএসপি’র জন্য খরচ কমাবে এবং পরিষেবার মান উন্নত করবে, যাতে দেশীয় ডিজিটাল ইকোসিস্টেম আরও টেকসই ও সমৃদ্ধ হয়।

আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় হাব তৈরি করা যেখানে লোকাল এবং আন্তর্জাতিক কন্টেন্ট সহজেই বিনিময় করা যাবে। এটি শেষ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে এবং দেশের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে এই উদ্যোগে আরও উন্নয়ন আনতে পারব। ‘নিক্স’ (NIX) -এর মাধ্যমে আমরা দেশের জন্য একটি টেকসই এবং শক্তিশালী ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে পারব।

বাংলাদেশে ‘নিক্স’ ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব ও উন্নয়নের কৌশল
‘নিক্স’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং অবকাঠামো, যা দেশীয় ইন্টারনেট ট্রাফিককে স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করে। এটি ব্যান্ডউইডথ খরচ কমানো, ল্যাটেন্সি হ্রাস এবং দেশীয় কনটেন্টের বিকাশে সহায়তা করে। বড় আইএসপি ও ডেটা সেন্টারকে ‘নিক্স’-এর সঙ্গে সংযুক্ত করা। এসডিএন ও স্বয়ংক্রিয় রাউটিং সিস্টেম উন্নত করা। গ্লোবাল সিডিএন (গুগল, ফেসবুক, নেটফ্লিক্স) সংযুক্তি নিশ্চিত করা।

দেশীয় কনটেন্ট উন্নয়নে লোকাল ভিডিও স্ট্রিমিং, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং গেমিং সার্ভারকে ‘নিক্স’-এর মাধ্যমে সংযুক্ত করা। সরকারি ও কর্পোরেট ওয়েবসাইট লোকাল হোস্টিংয়ে স্থানান্তর করা। ক্লাউড ও SaaS সেবা উন্নয়নে ইনসেনটিভ প্রদান করা। আইএসপি ও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সকল আইএসপি মোবাইল অপারেটরের জন্য ‘নিক্স’ সংযোগ বাধ্যতামূলক করা। সরকারিভাবে কর সুবিধা বা ভর্তুকি প্রদান করা।
লোকাল ট্রাফিক সংরক্ষণের জন্য ডেটা লোকালাইজেশন নীতি বাস্তবায়ন করা।

সম্ভাব্য সুফল
ব্যান্ডউইডথ খরচ হ্রাসের কারণে আন্তর্জাতিক ট্রানজিট কম ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট খরচ কমবে। ইন্টারনেটের গতি ও পারফরম্যান্স বৃদ্ধির ফলে কম ল্যাটেন্সি ও দ্রুত সংযোগ নিশ্চিত হবে। দেশীয় কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে ওটিটি, গেমিং, ক্লাউড ও ই-কমার্স খাত সমৃদ্ধ হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ফলে ফিনটেক, ই-গভর্নেন্স, এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের প্রসার ঘটবে।

একটি সুসংগঠিত ‘নিক্স’ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা গেলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট অবকাঠামো শক্তিশালী হবে, ডিজিটাল সার্ভিস আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী হবে এবং দেশীয় প্রযুক্তি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।

লেখক: ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর কবির, সিনিয়র ম্যানেজার- বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ ট্রাস্ট (আইএসপিএবি-নিক্স)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *