প্রতিবেদন

নতুন নাকি পুরোনো ল্যাপটপ? সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যা জানা জরুরি

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): তথ্যপ্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে পেশাজীবী সবার জন্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। কিন্তু নতুন ল্যাপটপ কিনতে গেলে যখন মূল্যের বিষয়টি সামনে আসে, তখন অনেকেই পুরোনো বা ব্যবহৃত ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হন।

উন্নত দেশগুলো থেকে বৈধ বা অবৈধ পথে আমাদের দেশে প্রচুর সংখ্যক ব্যবহৃত ল্যাপটপ আসে, যা মূল্যে সাশ্রয়ী হওয়ায় অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় মনে হয়। কিন্তু একটি পুরোনো ল্যাপটপ কেনা কতটা যুক্তিসঙ্গত, এর গুণগত মান, স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারিক দিকগুলো কেমন থাকে- এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

পুরোনো ল্যাপটপের উৎস ও বাজার
বাংলাদেশে ব্যবহৃত বা পুরোনো ল্যাপটপ মূলত দুটি উপায়ে আসে- বৈধ এবং অবৈধ উপায়ে। বৈধ উপায়ে দেশের কিছু বড় প্রতিষ্ঠান উন্নত দেশগুলোর (যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, দুবাই, সিঙ্গাপুর) কর্পোরেট অফিস থেকে ব্যবহৃত ল্যাপটপগুলো দেশে নিয়ে আসে। এই ল্যাপটপগুলো নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ৩-৪ বছর) ব্যবহারের পর পরিবর্তন করা হয়। আমদানির পর ল্যাপটপগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ বদলে দিয়ে আবার তা দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি পন্যের বাজারে ছাড়া হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা

অন্যদিকে, ব্যবহৃত বা পুরোনো ল্যাপটপের একটি বড় অংশ আসে অবৈধ বা নন-চ্যানেল পদ্ধতিতে, যা কোনও শুল্ক বা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না। এই ল্যাপটপগুলোর মান বা কার্যক্ষমতার কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। এগুলোর মূল্য খুব কম হওয়ায় কিছু অসাধু বিক্রেতা এগুলো নিয়ে আসে এবং দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি পন্যের বাজারে বিক্রি করে।

পুরোনো ল্যাপটপের বাজার
ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে পুরোনো ল্যাপটপের একটি বিশাল বাজার গড়ে ওঠেছে। ঢাকার কিছু জনপ্রিয় প্রযুক্তি পণ্যের বাজার রয়েছে- ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি পন্যের বাজার। ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে রয়েছে প্রযুক্তি পন্যের বাজার। মিরপুর ১০ নম্বর সহ চৌরঙ্গী মার্কেট এবং এর আশেপাশে রয়েছে কয়েকটি বাজার। ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি পন্যের বাজার এবং উত্তরা সেক্টর ৩ থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত গড়ে ওঠেছে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি পন্যের বাজার। এই সকল প্রযুক্তি পন্যের বাজারে নতুন ল্যাপটপের পাশাপাশি পুরোনো ও ব্যবহৃত ল্যাপটপ পাওয়া যায়।

এসব ফিজিক্যাল বাজার ছাড়াও, বর্তমানে অনলাইনেও পুরোনো ল্যাপটপ কেনা-বেচার প্রচলন বেড়েছে। জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলো:
বিক্রয় ডট কম: এটি একটি ক্লাসিফাইড সাইট, যেখানে ব্যক্তি বা ছোট বিক্রেতারা পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকেন।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এবং বিভিন্ন গ্রুপ: ফেসবুকের মাধ্যমেও অনেকেই পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রি করেন। এখানে দরদাম করার সুযোগ থাকে।
দারাজ: কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজও তাদের প্ল্যাটফর্মে পুরোনো ল্যাপটপ বিক্রি করে।

ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার সুবিধা
সাশ্রয়ী মূল্য: এটি পুরোনো ল্যাপটপের সবচেয়ে বড় সুবিধা। একটি নতুন ল্যাপটপের মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পুরোনো ল্যাপটপ কেনা যায়। এতে যারা সীমিত বাজেটে ল্যাপটপ কিনতে চান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।
উন্নত কনফিগারেশন: পুরোনো ল্যাপটপে অনেক সময় নতুন ল্যাপটপের চেয়ে উন্নত কনফিগারেশন পাওয়া যায়। যেমন, একটি নির্দিষ্ট বাজেটে নতুন ল্যাপটপে কোর আই৩ প্রসেসর পাওয়া গেলেও পুরোনো ল্যাপটপে আপনি কোর আই৫ বা কোর আই৭ প্রসেসর পেতে পারেন।
টেকসই ডিজাইন: কিছু কর্পোরেট বা পুরোনো মডেলের ল্যাপটপ খুব টেকসই এবং মজবুত করে তৈরি করা হয়। এদের বডি নতুন বাজেট ল্যাপটপের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার ঝুঁকি
অনিশ্চিত কার্যক্ষমতা: পুরোনো ল্যাপটপের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এর কার্যকারিতা। ল্যাপটপটি আগে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তার ব্যাটারির অবস্থা কেমন, কোনও গোপন ত্রুটি আছে কিনা- এসব বাইরে থেকে বোঝা কঠিন।
ওয়ারেন্টি এবং গ্যারান্টির অভাব: নতুন ল্যাপটপের সঙ্গে সাধারণত ১ থেকে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। কিন্তু পুরোনো ল্যাপটপে কোনও ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি থাকে না। যদি কোনও বিক্রেতা ওয়ারেন্টি দেনও, তার মেয়াদ খুব কম হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রাংশের সম্ভাবনা: ব্যাটারি, হার্ড ড্রাইভ, বা মাদারবোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো যেকোনও সময় কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এতে মেরামতের জন্য অনেক টাকা খরচ হতে পারে।
সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতা: পুরোনো ল্যাপটপে অনেক সময় পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায়।

বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস)-এর নির্দেশনা এবং নীতিমালা
বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস) পুরোনো বা ব্যবহৃত ল্যাপটপ আমদানির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। বিসিএস-এর মতে, এসব পণ্যের ব্যাপক আমদানি দেশের বাজারে নিম্নমানের পণ্য ছড়িয়ে দিতে পারে এবং ক্রেতাদের মধ্যে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তারা সবসময় নতুন এবং বৈধ ল্যাপটপ কেনার জন্য গ্রাহকদেরকে উৎসাহিত করে। বৈধ আমদানির ফলে ক্রেতারা মানসম্পন্ন পণ্য এবং সঠিক ওয়ারেন্টি সেবা পেতে পারেন, যা পুরোনো ল্যাপটপে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে।

একটি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে করে একদিকে যেমন অবৈধ আমদানির লাগাম টেনে ধরা যাবে, তেমনি ক্রেতারাও মানসম্পন্ন পণ্য কিনতে পারবেন। একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকলে আমদানিকারকরা মান যাচাই এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পণ্য আনতে বাধ্য হবেন। এর ফলে, গ্রাহকরা ব্যবহৃত ল্যাপটপ কিনে ঠকে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচবেন। সরকারের উচিত এই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

পুরোনো ল্যাপটপ কেনার সময় যা খেয়াল রাখবেন
যদি আপনি পুরোনো ল্যাপটপ কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কিছু বিষয় অবশ্যই যাচাই করে নেবেন-
অবস্থা: ল্যাপটপের বডি, স্ক্রিন, কি-বোর্ড এবং টাচপ্যাডে কোনও ফাটল বা দাগ আছে কিনা, তা ভালো করে দেখুন।
ব্যাটারির স্বাস্থ্য: ল্যাপটপটি চার্জার ছাড়া কতক্ষণ চলে, তা পরীক্ষা করুন। বিক্রেতাকে ব্যাটারি পরিবর্তনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন।
হার্ডওয়্যার পরীক্ষা: ল্যাপটপটি চালু করে এর হার্ডওয়্যার (প্রসেসর, র‍্যাম, স্টোরেজ) পরীক্ষা করুন। একটি ভারী অ্যাপ্লিকেশন চালিয়ে এর পারফরম্যান্স দেখুন।
পোর্ট এবং কানেক্টিভিটি: ইউএসবি, এইচডিএমআই এবং অডিও পোর্টগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা যাচাই করুন। ওয়াই-ফাই এবং ব্লুটুথ সংযোগও পরীক্ষা করে নিন।
বিক্রেতার নির্ভরযোগ্যতা: বিশ্বস্ত দোকান বা বিক্রেতার কাছ থেকে ল্যাপটপ কিনুন, যিনি আপনাকে কিছুটা হলেও সার্ভিসিং বা স্বল্প মেয়াদের ওয়ারেন্টি দিতে পারেন।

নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে যা বিবেচনা করবেন
বর্তমানে ল্যাপটপ কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যারা সামর্থ্যবান বা নতুন ল্যাপটপ কিনতে আগ্রহী, তাদের জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। একটি নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে সঠিক তথ্য যাচাই না করলে পরবর্তীতে হতাশ হতে পারেন। একটি নতুন ল্যাপটপ কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কোথা থেকে কিনবেন: বৈধ না নন-চ্যানেল
ল্যাপটপ কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর উৎস। বাজারে দুই ধরনের উৎস থেকে ল্যাপটপ কেনা যায়:
বৈধ চ্যানেল: ল্যাপটপ কেনার জন্য সবসময় অনুমোদিত বা বৈধ চ্যানেল বেছে নেয়া উচিত। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডের নিজস্ব শোরুম, অনুমোদিত পরিবেশক, পরিবেশকদের শোরুম এবং তাদের ডিলার বা রিসেলার বা পার্টনার। বৈধ উৎস থেকে কেনা ল্যাপটপে আপনি ব্র্যান্ডের ওয়ারেন্টি এবং জেনুইন পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। কোনও সমস্যা হলে ওয়ারেন্টির অধীনে সহজে সার্ভিসিং সুবিধা পাবেন।

নন-চ্যানেল বা অবৈধ: কিছু অসাধু বিক্রেতা অবৈধ বা নন-চ্যানেল পদ্ধতিতে ল্যাপটপ বিক্রি করে। এই ল্যাপটপগুলোর কোনও ওয়ারেন্টি থাকে না এবং অনেক সময় ব্যবহৃত বা ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ থাকে। এগুলোর প্যাকেজিং বা সিল নকল হতে পারে। মূল্যে কিছুটা সাশ্রয়ী হলেও দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ব্যবহারকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এই ধরনের উৎস থেকে ল্যাপটপ কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত।

নতুন ল্যাপটপ কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা ল্যাপটপটি বেছে নিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা জরুরি-
প্রয়োজন এবং ব্যবহার: ল্যাপটপ কেনার আগে আপনার প্রয়োজন কী, তা স্থির করে নিন। আপনি যদি সাধারণ কাজের জন্য (যেমন: ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মাইক্রোসফট অফিস) ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান, তাহলে একটি সাধারণ কনফিগারেশনের ল্যাপটপ যথেষ্ট। কিন্তু আপনি যদি গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের মতো ভারী কাজ করতে চান, তাহলে উচ্চ কনফিগারেশনের ল্যাপটপ প্রয়োজন হবে।

বাজেট: ল্যাপটপ কেনার আগে একটি নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে নিন। বাজেটের ওপর ভিত্তি করে আপনি কোন ধরনের ব্র্যান্ড বা মডেল কিনবেন, তা নির্ধারণ করতে পারবেন। তবে শুধু মূল্য দেখে নয়, ল্যাপটপের কনফিগারেশন এবং মানও বিবেচনা করুন।

প্রসেসর: ল্যাপটপের পারফরম্যান্সের জন্য প্রসেসর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টেলের কোর আই ৩,৫,৭ বা এএমডি রাইজেন ৩,৫,৭ প্রসেসরগুলো বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণ ব্যবহারের জন্য কোর আই ৩ বা রাইজেন ৩ যথেষ্ট, তবে গেমিং বা ভারী কাজের জন্য কোর আই ৫,৭ বা রাইজেন ৫,৭ প্রসেসর বেছে নেয়া ভালো।

র‍্যাম: ল্যাপটপের গতি এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য র‍্যাম জরুরি। বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারের জন্য ৮ জিবি র‍্যাম আদর্শ। তবে পেশাদার কাজ বা গেমিংয়ের জন্য ১৬ জিবি বা ৩২ জিবি র‍্যাম প্রয়োজন হতে পারে।

স্টোরেজ: স্টোরেজ ল্যাপটপের ফাইল সংরক্ষণে সাহায্য করে। বর্তমানে দুই ধরনের স্টোরেজ প্রচলিত- এইচডিডি ( হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ) কম খরচে বেশি স্টোরেজ পাওয়া যায়, কিন্তু গতি কম। এসএসডি (সলিড এস্টেট ড্রাইভ) ল্যাপটপের গতি অনেক বেশি হয়, কিন্তু খরচ বেশি। সাধারণত, এসএসডি যুক্ত ল্যাপটপ কেনা বেশি যুক্তিযুক্ত। আপনি চাইলে কম স্টোরেজের এসএসডি-এর সঙ্গে অতিরিক্ত এইচডিডি যুক্ত ল্যাপটপও কিনতে পারেন।

ডিসপ্লে: ল্যাপটপের স্ক্রিনের মানও গুরুত্বপূর্ণ। ডিসপ্লের আকার (১৪ বা ১৫.৬ ইঞ্চি), রেজ্যুলেশন (ফুল এইচডি) এবং প্যানেলের ধরন আইপিএস দেখে নিন। যারা গ্রাফিক্সের কাজ করেন, তাদের জন্য ভালো মানের ডিসপ্লে অপরিহার্য।

ব্যাটারি লাইফ: যদি আপনি ল্যাপটপটি প্রায়শই বাইরে নিয়ে যেতে চান, তাহলে দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ প্রয়োজন হবে। বিক্রেতাকে ব্যাটারি লাইফের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন এবং অনলাইন রিভিউ দেখে নিশ্চিত হোন।
পোর্ট এবং কানেক্টিভিটি: আপনার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পোর্ট যেমন- ইউএসবি, এইচডিএমআই, টাইপ-সি ইত্যাদি আছে কিনা, তা দেখে নিন।

নতুন ল্যাপটপ কখন কেনা দরকার?
প্রথম ব্যবহারকারী: যারা প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য নতুন ল্যাপটপ কেনা সবচেয়ে ভালো। এতে তারা সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন এবং ওয়ারেন্টি সুবিধা পাবেন।
নির্দিষ্ট পেশাগত প্রয়োজন: গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর, প্রোগ্রামার বা গেমারদের জন্য পুরোনো ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করা কঠিন। তাদের সুনির্দিষ্ট সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নতুন ও শক্তিশালী কনফিগারেশনের ল্যাপটপ প্রয়োজন হয়।
নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা: কোনও ধরনের ঝামেলা ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে একটি নির্ভরযোগ্য ডিভাইস ব্যবহার করতে চাইলে নতুন ল্যাপটপ কেনাই শ্রেয়। এতে তথ্যের নিরাপত্তা এবং সঠিক সার্ভিসিংয়ের নিশ্চয়তা থাকে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: নতুন নাকি পুরোনো
নতুন ল্যাপটপ নাকি পুরোনো ল্যাপটপ কিনবেন, এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করে আপনার বাজেট, চাহিদা এবং ঝুঁকির প্রতি আপনার মনোভাবের ওপর। যদি আপনার বাজেট ভালো থাকে এবং আপনি দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স, ওয়ারেন্টি এবং নিরাপত্তা চান, তাহলে নতুন ল্যাপটপ কেনাই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। ল্যাপটপ কেনার আগে ভালো করে গবেষণা করুন। বিভিন্ন মডেলের ফিচার ও মূল্যের তুলনা করুন এবং বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে কিনুন।

অন্যদিকে, যদি আপনার বাজেট খুব সীমিত হয় এবং আপনি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে পুরোনো ল্যাপটপ আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। তবে কেনার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের সাহায্যে ল্যাপটপটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। মনে রাখবেন, পুরোনো ল্যাপটপ কেনা অনেকটা লটারি খেলার মতো- কখনও আপনি ভাগ্যবান হতে পারেন, আবার কখনও বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে পারেন। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবদিক ভালোভাবে বিবেচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *