‘ডিজিটাল ডাকঘর’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল
ক.বি.ডেস্ক: আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ অগ্রযাত্রায় ডাক অধিদপ্তর সেবা ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ডাকসেবার উন্নয়নে আজ (২১ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ডাকভবনের অডিটোরিয়ামে ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর, এটুআই, আইসিটি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের (ডিএসডিএল) মাধ্যমে ‘‘ডিজিটাল ডাকঘর’’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এবং আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. সিরাজ উদ্দিন এবং এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী। ‘ডিজিটাল ডাকঘর’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন করেন এটুআই’র চিফ ই-গভর্নেন্স স্ট্যাটেজিস্ট (ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলেটর) ফরহাদ জাহিদ শেখ।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি-বেসরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের কোন বিকল্প নেই। যদি কেউ মনে করে চিঠির দিন শেষ মানে ডাক বিভাগেরও দিন শেষ হয়ে গেছে তবে ভুল করবে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি, এই অধিক জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য ডাক বিভাগের দেশব্যাপী ৯৫০০ কেন্দ্র রয়েছে।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ডাক বিভাগের এই কেন্দ্রগুলোকে যুক্ত করা হলে সরকারের জন্য অসাধারণ সম্পৃক্ততা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো এই ডাক বিভাগ ডিজিটালাইজেশন। সহায়তায় ডিএসডিএল এ সরাসরি অংশগ্রহণ করে বুঝতে পেরেছি এটি একটি অসাধারণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ডাক আজ একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই প্রথম এর পরিকল্পনার ভিত্তি স্থাপন হয়েছে। ডাক বিভাগ আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে সফটওয়্যার ও অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, বাংলাদেশে যখন ডিজিটাল সার্ভিস, প্রযুক্তি শিল্প কিংবা প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান বলতে কিছুই ছিল না, তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা মাত্র ৫৬ লাখ ছিল। সেই বাংলাদেশকে মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে ১২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, প্রায় ২০লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি শিল্প থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জনের পাশাপাশি প্রায় ১৫০০ ধরনের সেবা আমরা ডিজিটাইজড করতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির সহায়তায় হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি আমরা।
ডাকঘরের সঞ্চয় কার্যক্রমকে ঘিরে থাকা নিজের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকঘরগুলোকে ডিজিটাল ডাকঘরে রুপান্তর করতে চান। তারই নির্দেশনা পালনে আইসিটি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, ডাক অধিদপ্তর ও এটুআই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে ডাক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এটুআইর ডিএসএ টিম মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রায় ৩০০০ সেবার মধ্যে আমরা ডাকঘরের ৮০টি সেবা চিহ্নিত করতে পেরেছি। এই সেবা ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে জনগণের সময় এবং শ্রম কমে আসবে। এ ছাড়াও এইসব সেবাগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট তৈরির ঘোষণা করেন তিনি।
এন এম জিয়াউল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর দিক-নির্দেশনায় ২০১৭ সালে ডিজিটাল সার্ভিস রোডম্যাপ এবং ২০১৯ সালে ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব-এর যাত্রা হয়। তাঁরই পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সকল মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের সকল সেবা ডিজিটাইজড করার কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে ডিএসডিএল সার্ভিস ডিজিটাইজড করার একটি পরিচিত পদ্ধতি। বিদ্যমান সেবা পদ্ধতি গবেষণা করে সহজ পদ্ধতিতে অটোমেশনের পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, যা জনগণের সময় এবং শ্রম উভয়ই বাঁচাবে।
মো. আফজাল হোসেন বলেন, আজকে উপস্থাপিত মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশলটি ৬ দিনব্যাপী ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যা সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীদের অংশগ্রহণে ডাক অধিদপ্তর ও এটুআইর বিশেষজ্ঞগণের মূল্যবান কারিগরি সহয়তার মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই ডাকঘর সেবাকে প্রান্তিক মানুষের কাছে নতুন রূপে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।