ডিজিটাল অপরাধ সনাক্তের জন্য আইন করতে হবে: এমদাদ উল বারী
ক.বি.ডেস্ক: ডেটা সুরক্ষা ও তথ্য শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা সহজ নয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ভেদের দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ বাক-স্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষা। ডিজিটাল অপরাধ সনাক্তের জন্য আইন করতে হবে। কোন প্রযুক্তি আমরা কীভাবে ব্যবহার করবো সে জন্য আগাম চিন্তা করে আগামীতে কোন মূল্যবোধ নিয়ে চলবো, কতটুকু যন্ত্রের ওপর নির্ভর করবো তা নির্ধারণ করতে পারবো।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ঢাকার ব্রাক সেন্টার ইন-এ টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত “সাইবার নিরাপত্তা আইন: নিরাপত্তা ও বাকস্বাধীনতার ভারসাম্য কেমন” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মুখ্য আলোচক বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী এ কথা বলেন।
গোলটেবিল আলোচনায় সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ৪২ ধারা পুরোপুরি বাতিল এবং ২১, ২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩২ ধারার সংজ্ঞা সুনির্দিষ্টকরনের সুপারিশ করেছে টিআরএনবি। সংশোধন, পরিমার্জন নয় বিদ্যমান আইন বাতিল করে নতুন করে করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
গোলটেবিল আলোচনায় আরেক মুখ্য আলোচক ছিলেন আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহেমদ সাবির, রবি’র কোম্পানি সচিব ব্যারিস্টার সাহেদ আলম, বেসিস’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, বিডি ফাইন্যান্সের এমডি কায়সার হামিদ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নাবিল বি আরিফ, আনোয়ার টেকনোলজি’র কো-ফাউন্ডার ওয়াইজ আর হোসেন। সঞ্চালনা করেন টিআরএনবি’র সভাপতি সমীর কুমার দে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী।
এমদাদ উল বারী বলেন, “আমাদের আগে ভাবতে হবে আমরা কি আর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই না সুরক্ষা চাই। কিন্তু সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে সুরক্ষায় ছাড় দিতে হয়। তাই রেগুলেশনের পাশাপাশি ইনসেন্টিভ দিতে হবে। থ্রিজি আনার সময় এক পক্ষ নিরাপত্তা দিতে না পারার কারণে মত দেয়া হয়েছিলো। আবার ব্যাবসায়ীরা প্রবৃদ্ধি করেছিলেন। কোনো যুক্তিই অমূলক নয়। তাই এই দুইয়ের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা বের করতে হবে। টুকরো-টুকরো নেটের সমন্বিত ‘ইন্টারনেট’ সুরক্ষিত করতে হলে সবাইকে নিয়ে টপডাউন কো-অর্ডিনেশন ও বটম আপ কলাবরেশনের যেতে হবে। একইভাবে আইসিটি ও টেলিকম একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হতে হবে।”
শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “সাইবার সুরক্ষা আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে, সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বড় ইস্যু। আইনের ভাষায় নেতিবাচক কিছু আছে কি না সেটা দেখতে হবে। আইন নিবর্তন মূলক হওয়া যাবে না। সেলসেন্সরশিপ মানে এমন নয় যেন যা বলার কথা তা আমরা বলছি না। আইসিটি দফতর থেকে মাত্র তিন-চার জন ব্যক্তি দিয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ চলছে। অথচ একে আরও শক্তিশালী করা দরকার। একইসঙ্গে নাগরিকদের নিয়ে বেশি বেশি নাগরিক সংলাপ করতে চাই। সব পক্ষের মত নিয়েই এই আইন সংশোধন করা হবে।”
সুমন আহেমদ সাবির বলেন, “স্পেস ভিত্তিক অপরাধের জন্য বিচার করাকে আমি অযৌক্তিক মনে করি। অপরাধকে অপারাধের গুরুত্ব ও প্রভাবের মাত্রা অনুযায়ীই বিচার হওয়া দরকার। আসলে নতুন মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণের সক্ষমতা আমাদের দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে তথ্যের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আইন করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।”
সাহেদ আলম বলেন, “আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বুঝি আমাদের দেশে ডিজিটাল ডোমেইন অবকাঠামো বলে কিছু নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬০টি ধারারর মধ্যে ৩৭টি ধারাই ছিলো অপরাধ চিহ্নিত করার জন্য। এতে ১৮টি অপরাধ গণ্য করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সাইবার অপরাধের দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে আছে। তবে ই-গভর্নেন্সে আমরা পিছিয়ে আছি। তাই আমাদের কিসের জন্য কোন আইন দরকার তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। ডিজিটাল ইকোনোমি যুক্ত করে টেলিকম আইনটিও হালনাগাদ বা নতুন করে করা দরকার।”
সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, “বাকস্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য স্কুল থেকেই গঠনমূলক সমালোচনা করার সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। এভাবেই সেলফ সেন্সরশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি ডিজিটাল ফরেনসিক কীভাবে ও কতটুকু পর্যন্ত আদালতে গ্রহণযোগ্য সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে ডেটা প্রাইভেসি না থাকায় আমাদের ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়বে। তাই সবার আগে সেন্সেভিটির ওপর ভিত্তি করে ডেটা ক্যাটাগারাইজেশন করা দরকার।”
রাশেদ মেহেদী বলেন, “আমেরিকার জন্য নাগরিক নজরদারির অন্যতম অনুষজ্ঞ ফেসবুক। যে ডিভাইস ও ব্রাউজার ব্যবহার করি তাও আমেরিকার। তাই এটিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বলার সুযোগ নেই। আবার সব ধরনের বড় সিডিএন এখন এই দেশটিতেই। তাই বিশ্বজুড়েই চলছে ডেটা যুদ্ধ। তাই ক্লাউড, সার্ভিলেন্স সহ ডেটার ব্যাবসায় শতভাগ বাংলাদেশী মালিকানা থাকতে হবে।”