টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করা দরকার
ক.বি.ডেস্ক: টেলিকম মন্ত্রণালয় নয় ডট ও বিটিআরসি’কে একীভূত করে পলিসি প্রণয়ন ও ইনফোর্সমেন্স করা হলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সহজ হবে। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য, মান ও সুলভ করতে হলে লাইসেন্সের জঞ্জাল এবং ফাইবারের জঞ্জাল কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এই বাজারের মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। মানসম্মত সেবা দিতে হলে এখনই টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করা দরকার। পাশাপাশি বিটিআরসি’কে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।
গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত “বিটিআরসি’র ক্ষমতায়ন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধী ২০১০ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট” নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেটার মতো ভয়েস কলেরও ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা উচিত। ফাইবার ও টাওয়ার শেয়ারিং না করায় রিসোর্স নষ্ট হচ্ছে। ৪টি কোম্পানির ফাইবার লাইসেন্স থাকলেও দুইটি কোম্পানির কাছে এগুলো বন্দি। একইভাবে ২টি এনটিটি প্রতিষ্ঠানের কব্জায় রয়েছে সরকারের ইনফো সরকার প্রকল্প। এটি উন্মুক্ত করা না হলে তৃণমূলে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লেয়ারে লাইসেন্স দিয়ে খাতে খাতে কর-ভ্যাট আরোপ করায় বাড়ছে মূল্য।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অ্যামটব’র সাবেক সভাপতি মাহতাব উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন আইএসপিএবি’র সভাপতি মো. ইমদাদুল হক, আইআইজিএবি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকতবর রহমান, সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, রবি’র টেকনিক্যাল রেগুলেশন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অনামিকা ভক্ত, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক ফিদা হক, মোস্তাফা মাহমুদ হুসাইন, ব্যারিস্টার সানি আব্দুল হক, অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান, রাষ্ট্র সংস্থার আন্দোলনের দিদারুল ভূঁইয়া, গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি বাচ্চু ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, “আমরা ডিজিটালও না স্মার্টও না। আমরা আফ্রিকার পর্যায়ে রয়েছি। আফগানিস্তানের কিছুটা ওপরে। ভয়েসের দিন শেষ হলেও এখনো দেশের মোবাইল অপারেটররা এখান থেকেই ৫০-৬০ শতাংশ আয় আসে। ইন্টারনেটের শুধু মূল্য কমালেই হবে না; মানসম্মত হতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে।”
অনামিকা ভক্ত বলেন, “প্রতি বছর রবি বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলেও মুনাফা ৩ শতাংশের বেশি হয় না। ফলে মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সরকার এ দিকটায় দৃষ্টি দেবে বলে আশা করি।”
ফিদা হক বলেন, “ডেটার মূল্য যৌক্তিকী করণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পুণর্বিন্যাস করা জরুরী। সহজলভ্য ও দেশের সব প্রান্তে সমান গতিশীল ইন্টারনেট আমাদের লাইফ লাইন। ভয়েস ও এসএমএস এর দিন এখন শেষ। তাই ডেটার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার।”
আবু নাসের বলেন, “বিটিআরসি কী রাজস্ব আদায় করবে না সেবা নিশ্চিত করবে সেটা আমাদের আগে পরিস্কার করতে হবে। এই বাজারের মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। এখানে বিস্ময়কর ভাবে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। করাপশন ও ডিক্টেটরশিপ কমাতে বিটিআরসি’কে এই জায়গায় রোল প্লে করতে হবে। ইনস্টিটিউশন শক্তিশালী হলেই বৈষম্য কমবে।”
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিলো। আমরা চাই সেই শিক্ষা নিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্তীকালীন সরকার ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করবেন। আইএসপি বা টেলিকমরা কখনোই সরকারের সঙ্গে থাকবেন না। ইন্টারনেট বন্ধ করবে না। বিটিআরসি’কে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।”