সাম্প্রতিক সংবাদ

টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কারে নতুন নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে বিটিআরসি

ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কারে নতুন নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে। দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে ঢেলে সাজাতে নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের রূপরেখার খসড়া প্রকাশ করা হয়। গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামো সংস্কার নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। খসড়ায় পুরোনো নিয়মনীতিতে ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন নীতির কথা বলা হয়েছে।

বিটিআরসি জানায়, খাতটির ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারীরা সহ অন্যান্য খাত সংশিষ্ট ও সাধারণ জনগণ এই খসড়া নীতিমালায় মতামত দিতে পারবেন। ৩০ এপ্রিল সময়ের মধ্যে মতামত দেয়া যাবে telecom_reform@btrc.gov.bd এই ইমেইল ঠিকানায়। পাশাপাশি ডাকযোগে কমিশনার (ইএন্ডও), বিটিআরসি, প্লট ই-৫/এ, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা- এই ঠিকানায় পাঠাতে হবে। বিটিআরসি’র (https://btrc.gov.bd) ওয়েবসাইটেও এই খসড়া লাইসেন্সের অনুলিপি পাওয়া যাবে।

খসড়া নীতিমালায় তিনটি মূল লাইসেন্স ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল ও ফিক্সড অপারেটরদের জন্য অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এনএনএসপি); ফাইবার, টাওয়ার ও ব্যাকহল নেটওয়ার্কের জন্য ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) এবং আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। এ ছাড়াও, স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের জন্য দুটি এনলিস্টমেন্ট ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে- স্মল আইএসপি সার্ভিস ও স্মল টেলিকম সার্ভিস।

বিটিআরসি জানায়, বর্তমানের ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইডিডব্লিউ) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্স মেয়াদ শেষে বাতিল হবে। এর ফলে অপারেটরদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে, সেবার গুণগত মান উন্নত হবে এবং খরচ কমবে। অন্যদিকে, নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ হবে।

অপারেটররা একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবে, যেমন- ভয়েস, ডেটা, ইন্টারনেট, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি ) ডিজিটাল সার্ভিস। নতুন নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এনআইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০% এবং আইসিএসপি লাইসেন্সে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদন করা হবে। এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের টেলিকম খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের পথ প্রশস্ত করবে বলে বলা হচ্ছে।

খসড়া নীতিমালায় রয়েছে, দেশের নিজস্ব কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন), হাইপারস্কেলার এবং ডেটা সেন্টারগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ কানেক্টিভিটি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এতে বলা হয়েছে, মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) আপাতত একটি স্বতন্ত্র লাইসেন্স হিসেবেই চলবে। তবে নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরি চালু হলে এটি এনআইসিএসপি লাইসেন্সে রূপান্তরের সুযোগ পাবে। ডেটা সেন্টারগুলোর জন্য ফ্লেক্সিবল ও কার্যকর পিয়ারিং এবং সংযোগ সেবা নিশ্চিত করতে নীতিগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এর মাধ্যমে কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন) ও হাইপারস্কেলাররা বাংলাদেশে নিজেদের অবকাঠামো স্থাপন করতে উৎসাহিত হবে। সব লাইসেন্সধারীকে বিটিআরসি নির্ধারিত সেবার গুণমান (কিউওএস) মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। এই মানদণ্ডে নির্দিষ্ট কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) নির্ধারণ থাকবে, যা পূরণে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স নবায়নে সমস্যা হতে পারে, এমনকি লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকিও থাকবে। অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে ফাইবার, টাওয়ার, ডেটা সেন্টার ও রেডিও নেটওয়ার্কসহ সব ধরণের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

এই সংস্কার নীতিমালা অনুমোদনের তারিখ থেকেই কার্যকর হবে। বর্তমান লাইসেন্সধারীরা তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন পূর্বের ক্যাটাগরিতেই। তবে প্রতিযোগিতা, ভোক্তা সুরক্ষা এবং শিল্পের কার্যকারিতা বৃদ্ধির স্বার্থে বিটিআরসি প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নীতিমালার আওতায় লাইসেন্সের নির্দেশনা পরিবর্তন করতে পারবে। নতুন এই নীতিমালা আইএলডিটিএস নীতিমালা ২০১০ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতিমালাকে প্রতিস্থাপন করবে। তবে নির্ধারিত রূপান্তর রোডম্যাপ অনুযায়ী, আইএলডিটিএস নীতিমালা ২০১০ নিজস্ব পরিসরে এখনও কার্যকর থাকবে। এই নীতিমালা তিন ধাপে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম ধাপ সরকারের অনুমোদনের পরপরই শুরু হবে। বিটিআরসি নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় নীতিগত ও বিধিবদ্ধ পরিবর্তন আনবে, যা বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, লাইসেন্সধারীদের মধ্যে যুক্তিযুক্ত সংহতি এবং নতুন বিনিয়োগে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয় ধাপে বিটিআরসি নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরির গাইডলাইন কার্যকর করার পর কেবলমাত্র নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে। পুরনো লাইসেন্সধারীরা কেবল নতুন কাঠামোর আওতায় রিনিউ করতে পারবে এবং বিদ্যমান লাইসেন্সধারীরা নির্ধারিত রূপান্তরপথ অনুযায়ী নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে পরিবর্তনের সুযোগ পাবে।

২০২৭ সাল থেকে তৃতীয় ধাপ। এই সময়ের মধ্যে সকল বিদ্যমান লাইসেন্সধারীদের নতুন কাঠামোর অধীনে স্থানান্তরিত হতে হবে। তবে যেসব ক্যাটাগরি আগেই সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্পন্ন করবে, সেগুলোর জন্য এই ধাপ আরও আগে কার্যকর হতে পারে। প্রতিটি লাইসেন্স ক্যাটাগরির জন্য চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারিত হবে তাদের বর্তমান মেয়াদের ভিত্তিতে।

কৃতজ্ঞতায়: টেক শহর ডট কম

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *