টিকটকে যে নারীরা অনুপ্রেরণা যোগায়
বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা কাজ করছে বিভিন্ন সেক্টরে। অনলাইন জগতেও দেখা যাচ্ছে নারীদের অবাধ বিচরণ। এরই ধারাবাহিকতায় এন্টারটেইনমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিকটকে অনুপ্রেরণা জোগানো কয়েকজন বাংলাদেশি নারী ক্রিয়েটরদের গল্প তুলে ধরা হলো এখানে।
শিক্ষায় নারী – মুসফিকার গল্প
মুসফিকা নাসরিন টিকটকে ইংরেজি ভাষা শেখায় সহজ সব পদ্ধতিতে। তার চ্যানেল ‘স্কুল অব ইংলিশ বাই মুসফিকা’-র মাধ্যমে তিনি নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি করেন যা সহজবোধ্য এবং একইসাথে আকর্ষণীয়।
মুসফিকা বলেন, “আমাদের দেশে, যেসকল মেয়েরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষা-ভিত্তিক ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে, তারা প্রায়ই সমালোচনার সম্মুখীন হয়। আমিও নেতিবাচক মন্তব্য পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ইতিবাচক মনোভাব এবং কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে অধ্যবসায়ী ছিলাম। টিকটক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমি আমার পাঠগুলো দ্রুত দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমি মনে করি, এই শিক্ষামূলক বিধয়বস্তু তুলে ধরার জন্য টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমরা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি।”
নতুনত্ব নিয়ে উদ্যোক্তা লাবিবা
সৃজনশীলতাকে ঘিরেই লাবিবা ইবনাথের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। নানা ধরনের দেশীয় ডিজাইন আর কার্টুন দিয়ে তিনি স্নিকার ডিজাইন করেন। উল্লেখ্য, কোক স্টুডিওর প্রিতমের নজরকাড়া স্নিকারটি নকশা করেছিলেন এই লাবিবা।
লাবিবা বলেন, “নিজের ক্ষমতায়নের জন্য একজন নারীর হতে হবে স্বাধীন এবং আত্মনির্ভর। নিজের ক্ষেত্রেও আমি নিজেই সব কিছু দেখাশোনা করি- নিজের পেইজ ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে আমার স্নিকার তৈরির সরঞ্জাম আনা পর্যন্ত। টিকটকের মাধ্যমে, আমি আমার সৃজনশীলতা তুলে ধরতে পারি আর যুক্ত থাকতে পারি আমার ফলোয়ার এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে। নতুন উদ্যোক্তাদের উচিত নেটওয়ার্কিং এর জন্য টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা।”
হৃদি শেখের নৃত্যছন্দ
বাংলাদেশের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হৃদি শেখ, টিকটকে তার কন্টেন্টের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন ভিন্ন ঘরানার সব নাচ। যেখানে দারুণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ফুটে উঠে হৃদির প্রতিভা। পাশাপাশি তার নাচ আর সাজপোশাকের মধ্য দিয়ে উঠে আসে দেশের সংস্কৃতি।
হৃদি বলেন, “নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্য নারীদের জন্য কিছু করার পেছনে রয়েছে আমার নৃত্যশিল্প। টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি অন্যান্য দেশের দর্শকদের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি। রাশিয়া এবং বাংলাদেশ-এই দুই দেশের সাংস্কৃতিক প্রভাব থাকায় আমার নাচের পরিধিও অনেকটা বড়। আর টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে হবে নতুনভাবে।”
ফ্যাশন-সচেতন খেয়ার স্টাইল
বাংলাদেশের বিশেষ সব উৎসবগুলো কেন্দ্র করে টিকটক প্ল্যাটফর্মে ক্যাথরিন খেয়া তার কন্টেন্ট দিয়ে ফ্যাশনকে তুলে ধরে। নারী দিবস উপলক্ষ্যেও তিনি তার ফলোয়ারদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তার বিশেষ সাজপোশাক। তার টিকটক চ্যানেলটির মাধ্যমে বাংলাদেশি নারীদের জন্য তিনি তুলে ধরেন ভিন্ন সব স্টাইল আর লুক।
ক্রিয়েটর খেয়া বলেন, “আমি কন্টেন্টের মাধ্যমে ফ্যাশনের বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। একইসাথে নিজেকে ভালবাসা এবং নিজেকে গুরুত্ব দেওয়াকে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করি আমি। টিকটকে নারী ক্রিয়েটরদের জন্য আমার পরামর্শ হলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের কাজ চালিয়ে যান এবং নিজেকে সুন্দর আর ভালো রাখুন।”
সুস্বাদু খাবার নিয়ে প্রভা
ফুড ভ্লগিং এর মাধ্যমে ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ফাবিহা নওসিন প্রভা। দেশের বিভিন্ন জায়গার ভিন্ন সব রেসিপি এবং রেস্টুরেন্ট তুলে ধরেন তিনি। তার ভিডিওগুলোর মধ্যে উঠে আসে দেশী-বিদেশি সব খাবার এবং শহরের নতুন খাবারের জায়গা।
প্রভা বলেন,“আমি খাবার নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করতে পছন্দ করি এবং আমি মনে করি রন্ধনশিল্প নিয়েও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় রেস্তোরার পাশাপাশি ঘরোয়া খাবারগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করি আমি। আর এই কন্টেন্টগুলো বড় পরিসরে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর জন্য টিকটক একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম।”
বাংলাদেশি নারীদের এমন গল্পগুলো নারীদের শক্তি, সৃজনশীলতা এবং দৃঢ়তাকে তুলে ধরে। ভবিষ্যত প্রজন্মের নারীদের নতুন কিছু সৃষ্টি করতে, উদ্যোক্তা হতে এবং নিজেদের মতো কাজ করতে প্রেরণা দেয় আজকের এই নারীরা।