গত দুই বছরে বেসিস আজ অনন্য উচ্চতায় আসীন
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশের আইসিটি খাতের প্রাণকেন্দ্র। ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮টি চার্টার সদস্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে যাত্রা করে বেসিস। বিগত ২৫ বছর ধরে এই অসামান্য যাত্রাপথে কার্যনির্বাহী পরিষদ, স্থায়ী কমিটি, সদস্য প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্টদের অসামান্য অবদানে আজকের এই বেসিস।
বিশেষ করে গত দুই বছরে বর্তমান সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এর দূরদর্শী নেতৃত্বে নানা উদ্যোগ ও কার্যক্রমে বেসিস আজ অনন্য উচ্চতায় আসীন। শুধু দেশেই নয়, বেসিস আইসিটি খাতে তার অসামান্য অবদানে বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে ‘নেক্সট গ্লোবাল আইসিটি পাওয়ারহাউজ’ হিসেবে বিবেচনা করছে।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে কাজ করছেন বেসিস’র বর্তমান সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। কিউবি’র প্রধান বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে তার হাত ধরেই বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেটের যাত্রা হয়। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান কৌশলগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগে তিনি দেশের অন্যতম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আমরা নেটওয়ার্কের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে কোম্পানিটিকে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন।
বেসিস’র সঙ্গে রাসেল টি আহমেদ এর ওতপ্রোত সম্পর্ক
বেসিস’র সঙ্গেও রাসেল টি আহমেদ এর সম্পর্ক ২৪ বছরেরও বেশি সময়ের। আগে থেকেই বেসিস’র নানা কর্মকান্ডে ভূমিকা রেখে ২০১২-২০১৩ কার্যনির্বাহী কমিটিতে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৩-২০১৪ কার্যনির্বাহী কমিটিতে পুনরায় মহাসচিব, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৮ কার্যনির্বাহী কমিটিতে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বেসিস’র নেতৃত্বে রাসেল টি আহমেদ
২০২২ সালের জানুয়ারিতে ‘এভরি মেম্বার মেটার্স’ স্লোগানকে ধারণ করে বেসিস’র সভাপতি হিসেবে বেসিসকে সামনে এগিয়ে নেয়ার গুরুদায়িত্ব পান রাসেল টি আহমেদ। আর এই এগিয়ে চলার পথে সকলের সম্মিলিত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে তিনি গত দুই বছরে বেসিসকে সদস্যবান্ধব সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বেসিসকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধিকতর গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিয়ে গেছেন।
রাসেল টি আহমেদ মনে করেন, বেসিস সদস্যরাই বেসিসের প্রাণ। বেসিসের প্রত্যেক সদস্যের উন্নয়ন মানেই বেসিসের উন্নয়ন। সদস্যরা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে বেসিস, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। যেকোনো সংগঠনের সদস্যরাই হলো সংগঠনটির জীবনীশক্তি।
সদস্যরাই শুধু বেসিসের কাছে আসবে এমন নয়, বেসিস যাবে সদস্যদের কাছে; এমন প্রত্যয় নিয়ে রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত ৫টি ভেন্যুতে ‘মেম্বারস মিট’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, দাবিদাওয়া শোনাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ও সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়ন ও সদস্যদের কল্যাণে রাসেল টি আহমেদের অগ্রণী ভূমিকার কারণে গত দুই বছরে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে বেসিস। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বেসিস’র নেতৃত্ব গ্রহণের সময় সদস্য সংখ্যা ছিলো ১৪৫৬ জন, সেটি ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ২০২৪ সালের এপ্রিলে এসে ২৪০০ ছাড়িয়ে গেছে; যা বেসিস তথা এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি রেকর্ড ও মাইলফলক।
সকল সদস্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে রাসেল টি আহমেদ বেসিস’র ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সদস্যদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা উপহার প্রদানের উদ্যোগ নেন। এক বছরে দেড় সহস্রাধিক সদস্যকে এই উপহার প্রদান করা হয়, যা এতোটাই সাড়া ফেলে যে সবার আগ্রহে চলতি বছরেও সেটি অব্যহত রয়েছে।
বিডিবিএলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দেশের প্রথম আইসিটি ইনকিউবেটরের বকেয়া বিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয় বর্তমান কমিটি। প্রায় দুই বছরের দীর্ঘ চেষ্টায় সমঝোতার মাধ্যমে অনাদায়যোগ্য বিল মওকুফ ও একাধিক কিস্তিতে বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়।
অ্যাক্সেস টু ফিন্যান্স সহজীকরণ
সহজ ব্যাংকিং বিনিয়োগ না থাকায়, বেসিস সদস্যদের ব্যবসায়ের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো অ্যাক্সেস টু ফিন্যান্স। আর এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে সদস্যদের সহজশর্তে ঋণ ও বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেন রাসেল টি আহমেদ। গত দুই বছরে সদস্যদের ব্যবসায় সম্প্রসারণে বিনিয়োগের জন্য বেসিস ও প্রাইম ব্যাংকের অংশীদারিত্বে ২০২২ সালে ৪ কোটি ৬১ লাখ এবং ২০২৩ সালে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পেয়েছেন সদস্যরা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভাবে প্রমোশন ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি আইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভ ও ইআরকিউ সুবিধা নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন রাসেল টি আহমেদ। তার দায়িত্ব পালনকালে বেসিস কো-ব্র্যান্ডেড কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং বেসিস ই-ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সদস্য ও সদস্যের বাইরের প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদানে অনন্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।
সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের রফতানি আয়ের বিপরীতে যথাযথভাবে সরকার ঘোষিত ১০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা পান সেটি নিশ্চিতে জোর দেন রাসেল টি আহমেদ। গত দুই বছরে অন্তত ৫৯১টি কোম্পানি ৪৪৯ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে ১৭৭.২৬ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) পেয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২২ সালে ৯৮.২ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ৯৯.৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বেসিসের সেবার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
বেসিস শর্টকোড ১৬৪৮৮ চালু
নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বেসিস’র জন্য একটি শর্টকোড ১৬৪৮৮ হটলাইন চালু করেন রাসেল টি আহমেদ। এর ফলে সহজেই একটি নাম্বারে কল করেই সদস্যসহ বেসিস’র সেবা প্রত্যাশীরা দ্রুত সংশ্লিষ্ট সেবার অ্যাক্সেস পান। চালুর পর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার কল আদান-প্রদান হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যেই কলের পরিমান ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে এই সেবাটির সফলতা ও গ্রহণযোগ্যতা।
সক্রিয় কমিটি ও ফোরাম
সদস্যরা যাতে সক্রিয়ভাবে বেসিস’র বিভিন্ন কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য অন্তত ৪৪টি কমিটি, ফোরাম, ফোকাস গ্রুপ ও বোর্ড সাব-কমিটি বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সময়কালে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এসব কমিটি ও ফোরামের সদস্য সংখ্যা ৯০৫ জন। মোট ৭৭টি বৈঠক করেছে এসব কমিটি ও ফোরামে, যেখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো দেড় হাজারের অধিক। এসব কমিটি ও ফোরাম সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে অন্তত ৩৪টি একক সফলতা অর্জন করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী আয়োজন
স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় চারদিনের বেসিস সফটএক্সপো, যা ছিলো বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী। ২০০টির বেশি অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে প্রায় একশ বিশ কোটি টাকার সম্ভাব্য লিড পান, যা একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বেসিস সচিবালয় শক্তিশালীকরণ
বেসিস সচিবালয়কে শক্তিশালীকরণে বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একজন নির্বাহী পরিচালক, একজন যোগাযোগ পরামর্শক ও একজন সার্ভিস বিভাগের প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নতুন বিভাগের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দিয়ে ও সরকারি-বেসরকারি ৬৫০ এর অধিক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও বৈঠকের মাধ্যমে সচিবালয়কে শক্তিশালী ও কার্যকরী করে তুলেছেন রাসেল টি আহমেদ।
সদস্যসেবায় আরও কিছু উদ্যোগ
সংগঠনের সেবা উন্নয়ন ও সহজীকরণে বেসিস’র ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের মতামত নিয়ে সেই অনুযায়ী সেবার মান উন্নয়নেও জনবলকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেবায় বেসিস সদস্যরা যাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেবা ও ছাড় পেতে পারে সেজন্য গত দুই বছরে অন্তত ৩০টি নতুন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে বেসিস। এক হাজারের অধিক বেসিস সদস্যকে দেয়া হয়েছে হেলথ কার্ড।
দক্ষ জনবল ও কর্মসংস্থান তৈরি
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে বেসিস’র বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ দক্ষ জনবল তৈরিতে বিশেষ নজর দেয়। বর্তমানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩ লাখ জনবল কাজ করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ লাখ এবং ২০২৮ সাল নাগাদ এই সংখ্যাকে ১০ লাখে উন্নীত করার লক্ষে কাজ করছে বেসিস।
বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) ৬০ হাজারের অধিক লোককে প্রশিক্ষিত করেছে। বিআইটিএমকে একটি বিশেষায়িত ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছেন রাসেল টি আহমেদ।
রাসেল টি আহমেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্লাসটিউন (দেশের শীর্ষস্থানীয় লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) সরকারের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তাঁর অপর প্রতিষ্ঠান টিম ক্রিয়েটিভ বিভিন্ন ই-গভর্নেন্স প্রকল্পসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নানা সেবা দিচ্ছে।
এ ছাড়া বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সময়কালে বিসিসির এজ প্রকল্পের সঙ্গে বেসিস’র অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বেসিস ডিজিটাল ইকোনমি হাব তৈরি এবং বিসিসি ও জাইকার সহযোগিতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের মানোন্নয়নে বেসিস টপ-সি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ভেন্ডর সার্টিফেকেশনেও নজর দেয়া হয়েছে।
সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য পাম নেদারল্যান্ড সিনিয়র এক্সপার্টদের নিয়ে এআই প্রশিক্ষণ কর্মশালা, অ্যাসেট প্রজেক্ট, জাইকার সহযোগিতায় বাংলাদেশ-মিয়াজাকি আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স এডুকেশনাল ট্রেনিং প্রজেক্ট, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ট্যাক্স ও আর্থিক বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত তরুণ ও দক্ষ জনবল যাতে তাদের পছন্দসই চাকরি খুঁজে নিতে পারে সেজন্য আয়োজন করা হয় জব ফেয়ার।
আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ ও ব্র্যান্ডিং
সরকারের ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জনের জন্য গত দুই বছরে রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে বেসিস’র আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে নেয়া কার্যক্রম ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্থানীয় অংশীদারিত্ব বেসিসকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাঁর নেতৃত্বে পাম নেদারল্যান্ডস সিনিয়র এক্সপার্টস, সিবিসিসিআই, কোর্টা এবং আইসিটিএ এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনে যুক্ত হয়েছে বেসিস।
গত দুই বছরে বেসিস বিভিন্ন দেশের অন্তত ২৪টি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও অ্যাম্বেসির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সেসব দেশের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বেসিসের সদস্যরা বিশ্বের অন্তত ১৩৭টি দেশে তাদের সফটওয়্যার ও সেবা রফতানি করছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বেসিস জাপান ডেস্কের সহায়তায় বর্তমানে জাপান থেকে বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ১২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি আয় করছে।
প্রথমবারের মতো, ২০২২ সালে বেসিস কোনো আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের হেডলাইন পার্টনার হিসেবে গ্লোবাল সোর্সিং অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ফেস্টিভ্যাল অব সোর্সিংয়ে অংশগ্রহণ করে, যা ইউরোপের বাজারের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজার সম্প্রসারণ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেসিস ও জাপান ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (জিসা) এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এবং দুবাইতে অনুষ্ঠিত ডিপি ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে তুলে ধরেন ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান জানান রাসেল টি আহমেদ। জার্মানী, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটেও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে জাপান আইটি উইক, জাইটেক্স দুবাই, ইন্ডিয়াসফটের বেসিস সদস্যদের নিয়ে অংশগ্রহণ, ঢাকায় বেসিস জাপান ডে পালন, নেটওয়ার্কিং সেশনসহ নিয়মিত নানা আয়োজন বাস্তবায়ন করেছেন তিনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ভূমিকা
স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বেসিস সভাপতি হিসেবে রাসেল টি আহমেদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূয়সী উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়াকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি আয় বাড়াতে ‘থ্রি বাই থ্রি ফ্রেমওয়ার্ক’ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে তুলে ধরেন ও সেটি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন।
২০২২ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আইসিটিকে ‘প্রোডাক্ট অব ইয়ার’ ঘোষণার পর সেটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোরও দায়িত্ব তুলে নেন রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত পরিষদ। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং ও বাজার সম্প্রসারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নেতৃবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ অ্যাকাডেমিয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বেসিস একটি কৌশলপত্র তৈরি করে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরগুলোতে সরবরাহ করে। সেই কৌশল অনুযায়ী, এখনও কাজ করে চলেছে বেসিস।
আইসিটি বিভাগের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তি, ২০৩০ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যহতির মেয়াদ বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন বিনিয়োগ, সকল মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেটে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ক্রয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবিতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন রাসেল টি আহমেদ।
এ ছাড়া বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে জরুরী বিষয়গুলো তুলে ধরতে ও করণীয় নির্ধারণে ১০ পর্বের ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক টেলিভিশন শো আয়োজনের মূল নায়ক তিনি।
পলিসি তৈরি, বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন
সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে পলিসি তথা বিভিন্ন নীতিমালা, আইন, বিল তৈরি, বাস্তবায়ন ও সেটির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ধারাবাহিকতায় রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে গত দুই বছরে এই খাতের উন্নয়নে অসংখ্যা আইন, নীতিমালা, বিল তৈরি, উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বেসিস।
এর মধ্যে ইনসিউরটেক রোডম্যাপ : রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন -২০২৩, এটুআই বিল ২০২৩ সংশোধন, ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন ২০২৩, এন্ট্রাপ্রেওনারশীপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) গাইডলাইন ২০১৮, সিসিআইঅ্যান্ডই এর সাথে ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাক্স ২০২৪, ডিজিটাল কমার্স অ্যাক্ট ২০২৪, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩, ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট ২০২৩, ডিজিটাল কমার্স অথরিটি অ্যাক্ট ২০২৩, ইন্টার্নশীপ গাইডলাইন ২০২৩, ইমপোর্ট পলিসি অর্ডার ২০২১-২৪, এক্সপোর্ট পলিসি অর্ডার ২০২১-২৪ উল্লেখযোগ্য।
অ্যাওয়ার্ড ও প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রণী উদ্যোক্তা ও দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান প্রয়াত লুনা শামসুদ্দোহা স্মরণে ২০২২ সালে ‘বেসিস লুনা শামসুদ্দোহা অ্যাওয়ার্ড’ চালু করেন রাসেল টি আহমেদ। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এবং সমাজে নারীদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে প্রথমবারের মতো ১০ নারী ও ৩ প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া, রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে বেসিস আইসিটি অ্যাওয়ার্ড, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ, বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড, বেসিস টেক জব ফেয়ার, অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড এখন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে মাইলফলক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
পরিশেষে
রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বে বেসিসের বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের উল্লেখযোগ্য এসব উদ্যোগ ও কার্যক্রম বেসিস ও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে এফবিসিসিআই, বিজিএমই এর পরেই জায়গা করে নিয়েছে বেসিস। বিদেশেও আজ বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির পরবর্তী গন্তব্যস্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করে বেসিসকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার পর এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে রাসেল টি আহমেদ যে দূরদর্শী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটির ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রাখা প্রয়োজন। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ও ইন্ডাস্ট্র্রিবান্ধব এই সরকারের সহযোগিতা অব্যহত থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব।