স্বাক্ষাতকার

ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সলিউশন নিয়ে কাজ করছি: টুটুল সিদ্দিক অর্ণব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যারে নেটওয়ার্কস ইনকর্পোরেশন। অ্যারে নেটওয়ার্কস বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৭ সালে। দিন দিন অত্যাধুনিক হয়ে ওঠছে ডেটা সেন্টার ও নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত নেটওয়ার্ক এবং হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি। বর্তমানে যেসব অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় সে হিসেবে নেটওয়ার্ক প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী তাল মিলিয়ে চলে।

সম্প্রতি কমপিউটার বিচিত্রার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ইন্টারনেট ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি সলিউশন, সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি এবং সাইবার নিরাপত্তা সমাধান নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন অ্যারে নেটওয়ার্কস ইনকর্পোরেশন এর বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের কান্ট্রি ম্যানেজার টুটুল সিদ্দিক অর্ণব। সাক্ষাতকার নিয়েছেন: ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইমরাদ

ক.বি: লেখাপড়া এবং পারিবারিক সম্পর্ক?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: লন্ডন মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করি। আমি ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা, বর্তমানে মিরপুর ডিওএইচএস বসবাস করছি। আমার পিতা সরকারের একজন ডেকোরেটেড কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ইন্তেকাল করেন ২০১৫ সালে। আমার মমতাময়ী মা ইন্তেকাল করেন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। ভাই ও বোনদের মধ্যে সবার ছোট। বড় ভাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং আরেক ভাই আমাদের পারিবারিক ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান মিরাকি বাংলাদেশ এর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ক.বি: আপনি কবে থেকে বাংলাদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: আমি স্নাতক সম্পন্ন করার পরেই দেশে ফিরে এসে ২০০৭ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি পণ্য আমদানিকারক ও সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান কমপিউটার সোর্স লিমিটেডে যোগদান করি। ইএমসি এবং ভিএমওয়্যারের পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই মূলত আমার বাংলাদেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলা শুরু।

ক.বি: কর্মময় জীবনে আপনার অর্জন?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: কর্মময় জীবনে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে উল্লেখ করবো, আমার কর্মজীবনে যতগুলো দলের সঙ্গে প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম প্রতিটি দল এবং দলের সদস্যরা আমাকে খুব শ্রদ্ধা করেছে। আমাকে পথ প্রদর্শক মনে করে তাদের কর্মজীবনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা ভালো করছে। এর থেকে বড় অর্জন আর কোন কিছু আমার কাছে হতে পারে না বলে মনে করি। কর্মক্ষেত্রে কাউকে কখনো বন্ধু ভাবা যাবে না, কর্মক্ষেত্রে সবাই সহকর্মী, বন্ধুত্ব হতেই পারে তবে সেটি কর্মক্ষেত্রের বাইরে।

ক.বি: অ্যারে নেটওয়ার্কস এর ইতিহাস ও পটভূমি সম্পর্কে?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: অ্যারে নেটওয়ার্কস প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে, সিলিকন ভ্যালিতে। শুরু থেকেই অ্যারে নেটওয়ার্কস গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি সলিউশন নিয়ে কাজ করে আসছে। অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি এবং সিকিউরিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ক্ষমতা অ্যারে নেটওয়ার্কসকে বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরেছে। আমাদের লক্ষ্য সবসময় ছিলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ ও দক্ষ নেটওয়ার্কিং সমাধান প্রদান করা, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও বেশি নিরাপদ ও স্থিতিশীল করতে পারে।

সাইবার সিকিউরিটি এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি

ক.বি: বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানে অ্যারে নেটওয়ার্কসের মিশন এবং ভিশন কি?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: আমাদের মিশন হলো এই তিনটি বাজারে অত্যাধুনিক অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি এবং সাইবার নিরাপত্তা সমাধান প্রদান করা, যা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা পূরণ করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ডিজিটালাইজেশন এবং ই-গভর্নেন্সের চলমান উন্নয়নের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ নেটওয়ার্কিং সমাধান অপরিহার্য। আমাদের ভিশন হলো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহ করা, যা তাদের ব্যবসার বৃদ্ধি ও রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। বিশেষ করে, আমরা সাইবার সিকিউরিটি এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।

ক.বি: বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের বাজারে বর্তমানে অ্যারে নেটওয়ার্কসের সলিউশনগুলো সম্পর্কে?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: অ্যারে নেটওয়ার্কস প্রথম বাংলাদেশের বাজারে আসে ২০০৭ সালে। তখন অ্যারে নেটওয়ার্কস মুলত কাজ করতো অ্যাপ্লিকেশান লোড ব্যালান্সিং এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান ফায়ারওয়াল নিয়ে। বর্তমানে আমরা বেশ কিছু অত্যাধুনিক সমাধান নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের AG সিরিজ SSL VPN, যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিমোট অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে সুরক্ষা এবং উচ্চ কর্মক্ষমতা প্রদান করে।

ASF সিরিজ Web Application Firewall (WAF) এবং DDoS প্রটেকশন সমাধানগুলো এই অঞ্চলে জনপ্রিয়। আমাদের AVX সিরিজ নেটওয়ার্ক ফাংশন ভার্চুয়ালাইজেশন (NFV) প্ল্যাটফর্মও বাজারে ভালো সাড়া পাচ্ছে, যা একাধিক সিকিউরিটি ও নেটওয়ার্ক সলিউশনগুলোকে একক প্ল্যাটফর্মে সমন্বিত করতে সক্ষম।

আমরা আমাদের অংশীদার এবং গ্রাহকদের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী, যাতে তাদের ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়াটি আরও গতিশীল হয

ক.বি: নেটওয়ার্ক ফাংশন্স ভার্চুয়ালাইজেশন (এনএফভি) প্রযুক্তি নিয়ে কিছু বলুন?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নেটওয়ার্ক ফাংশন্স ভার্চুয়ালাইজেশন (এনএফভি) প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে অ্যারে নেটওয়ার্কস। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একক অ্যাপ্লায়েন্সে সাইবার এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি সলিউশনসমূহকে কনসলিডেট এবং অপটিমাইজ করা সম্ভব। এটি শুধু যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে তা নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করে।

বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক এবং সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বিশেষ করে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সমাধান হতে পারে। এনএফভি (NFV) প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইকোসিস্টেমকে একত্রিত করতে পারবে, যার ফলে সিস্টেম ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং আপগ্রেড এবং স্কেলিং করা যাবে খুব সহজেই।

অ্যারে নেটওয়ার্কস এর এনএফভি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এবং খরচ কমাতে পারবে। সাইবার হুমকি প্রতিরোধে এবং নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। এটি বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্মার্ট সমাধান।

ক.বি: ভবিষ্যতে অ্যারে নেটওয়ার্কসের পরিকল্পনা কী?

টুটুল সিদ্দিক অর্ণব: আমরা চাই এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি নিরাপদ এবং প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হোক। এজন্য আমরা ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সলিউশন নিয়ে কাজ করছি, যা স্থানীয় চাহিদার সঙ্গে মানানসই হবে। আমরা আমাদের অংশীদার এবং গ্রাহকদের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী, যাতে তাদের ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়াটি আরও গতিশীল হয়।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *