কিভাবে ফেসবুকে চালু করবেন ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ফেসবুক এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত অভিমত, অভিজ্ঞতা শেয়ার করার ক্ষেত্রেও ফেসবুক হয়ে ওঠেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যক্তিগত ব্যবহারের বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও বিনোদনের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ফেসবুক।
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৩০০ কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে মেটার মালিকানাধীন ফেসবুকে। বাংলাদেশেও ফেসবুকই সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এ বছরের (২০২৪) জানুয়ারিতে প্রকাশিত নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ জন- যার ভিত্তিতে ফেসবুক ব্যবহারকারী শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ।
তবে ফেসবুকের বহুমুখী ব্যবহার যত জনপ্রিয় হচ্ছে, ততই কিন্তু বাড়ছে ফেসবুকের নিরাপত্তা ঝুঁকিও। ফলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর একটি সমাধান হচ্ছে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন:
‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেখানে কোন একটি সাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা টুল এক্সেস করার জন্য একজন ব্যবহারকারীকে দুটি পৃথক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বা আইডেন্টিফিকেশন প্রসেসের (ফ্যাক্টরের) মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর একারণেই বলা হয় টু-ফ্যাক্টর।
অর্থাৎ, এর মাধ্যমে একটি দ্বি-স্তর বিশিষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। ফলে ভেরিফাইং বা যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার একটি ফ্যাক্টর (যেমন: পাসওয়ার্ড) বেহাত হলেও অ্যাকাউন্টটি খোয়া যাওয়ার বা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ অন্য ফ্যাক্টরটির (যেমনঃ এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ) অ্যাক্সেস হ্যাকারের কাছে থাকে না।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের প্রথম ফ্যাক্টরটি হচ্ছে পাসওয়ার্ড। আর দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি সাধারণত টেক্সট মেসেজ বা এসএমএস হয়ে থাকে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ই-মেইল বা ফোন নাম্বারে একটি কোড প্রেরণ করা হয়।
এই কোডটি সাবমিট করার মাধ্যমেই টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় এবং ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট সাইট, টুল বা অ্যাপ্লিকেশন এক্সেস করতে পারেন। এবারে চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে ফেসবুকে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ ফিচারটি চালু করতে হয়।
‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ চালু করা
‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি ফেসবুকে চালু করার জন্য লগইন করার পর প্রথমেই নিজের প্রোফাইল পিকচারে ক্লিক করে যেতে হবে সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি অপশনে। সেখান থেকে সেটিংসে ক্লিক করলে ওপেন হবে সেটিংস পেজটি, যেখানে বাঁ দিকে অ্যাকাউন্টস সেন্টার অপশনটিতে ক্লিক করলে নতুন আরেকটি পেজ ওপেন হবে।
এবারে অ্যাকাউন্ট সেটিংস সেকশনের অধীনে পাসওয়ার্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। তারপর পাসওয়ার্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি পেজে লগইন অ্যান্ড রিকভারি সেকশনের অন্তর্গত টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এবারে ব্যবহারকারী এই ফিচারটি তার যে অ্যাকাউন্টে চালু করতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করে দিবেন।
উল্লেখ্য, অনেক ব্যবহারকারীরই একের অধিক অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, আর সেজন্যই অ্যাকাউন্ট সিলেক্ট করার অপশনটি রাখা হয়েছে।
অতঃপর সিকিউরিটি মেথড হিসেবে তিনটি অপশনের মধ্য থেকে পছন্দের একটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। সিকিউরিটি মেথড অপশন হিসেবে আছে অথেনটিকেশন অ্যাপ, টেক্সট মেসেজ বা এসএমএস ও সিকিউরিটি কি।
অ্যাকাউন্টে সিকিউরিটি কি যুক্ত করতে হলে থার্ড পার্টি সিকিউরিটি কি কিনে নিতে হয়, ফলে এই ফিচারটি বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ নেই। অন্যদিকে অথেনটিকেশন অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য প্রথমে ডিভাইসে একটি থার্ড পার্টি অথেনটিকেশন অ্যাপ ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে। এটি ফ্রি এবং চাইলে আপনি এই অপশনটিও চুজ করতে পারেন।
তবে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত সিকিউরিটি মেথড হচ্ছে টেক্সট মেসেজ বা এসএমএস। কারণ এটি একেবারে ফ্রি এবং খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। টেক্সট মেসেজ (এসএমএস) অপশনটি সিলেক্ট করার পর ব্যবহারকারীকে একটি ফোন নাম্বার প্রদান করতে হয়।
ব্যবহারকারী চাইলে অ্যাকাউন্ট রিকভারির জন্য আগে যে ফোন নাম্বারটি সাবমিট করেছেন (যদি করে থাকেন) সেটাই ব্যবহার করতে পারেন, আবার চাইলে নতুন একটি ফোন নাম্বারও ব্যবহার করতে পারেন টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের জন্য।
এখানে আরেকটি বিষয় বলে রাখা জরুরি, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ফিচারটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহারকারী ১০টি রিকভারি লগইন কোড নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়ে নিতে পারেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার ফোনটি যদি কখনও হারিয়ে যায়, বা কোনও কারণে আপনি যদি আপনার ফোন নাম্বারটি অ্যাক্সেস করতে না পারেন (যেমন ধরুন আপনি দেশের বাইরে গেছেন) তাহলে এই রিকভারি কোডগুলো টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় যাচাইকরণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। ফলে আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।