কলড্রপে অপারেটরদের ওপর দায় চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে বিটিআরসি
ক.বি. ডেস্ক: টেলিযোগাযোগ সেবার বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান না করেই কলড্রপের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিকম অপারেটরদের ওপর দায় চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। কলড্রপ সমস্যা সামাধানে দীর্ঘদিন ধরে সামগ্রিক টেলিকমখাতের যে সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল তা এড়িয়ে চলেছে বিটিআরসি।
গ্রাহক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, কলড্রপ সমস্যার জন্য বিটিআরসি অপারেটরদের ওপর দায় চাপিয়ে দায় এড়াতে পারে না।
কথা বলার ক্ষেত্রে কলড্রপ শুধু আর্থিক ক্ষতিই করে না, এই সমস্যা দুই প্রান্তে থাকা দুই ব্যক্তির মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ক্ষেত্রে কলড্রপ অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। আইটিইউ কিংবা বিটিআরসি’র গাইডলাইনে যাই থাকুক না কেন ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের একটি রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সকল ধরনের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন, সেবা দানের সঙ্গে যুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশনাও প্রদান করেন।
বিটিআরসি’র নিজস্ব প্রতিবেদনে যখন লক্ষ্য করা যায় যে, বছরে ১৮.৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কলড্রপের কারণে গ্রাহকের। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ডাক টেলিযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জানাইদ আহমেদ পলক এ ব্যাপারে বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। দুদিন পর বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে একটি শোকজ লেটার প্রদান করেন। গ্রামীণফোন লিমিটেড এর জবাব দেবার আগেই রবি ও বাংলালিংকে শোকজ লেটার প্রদান করা হয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কলড্রপ ইস্যুতে ইতিমধ্যে গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংকে শোকজ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কলড্রপের জন্য সমস্যাগুলোর সামাধান না করে তারা শোকজ করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। বিটিআরসি টেলিকম অপারেটরের কাঁধে বন্দুক রেখে সমস্যা সমাধানের দিকে যেভাবে গুলি ছুড়ছে তাতে গুলি যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে এতে কোন সন্দেহ নেই কারণ টেলিকম খাতের সার্বিক সমন্বয় না করে এ সমস্যা কখনো সমাধান হবে না। শুধুমাত্র স্পেকট্রাম দিয়েই কেবল টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হয় না। মেবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ছাড়াও কল ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স, ফাইবার ট্রান্সমিশন বা এনটিটিএন এবং টাওয়ার কোম্পানিগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে।”
ওভারহেড ফাইবার সামান্য কারনেই কাটা যাচ্ছে, ব্যান্ডউইডথ স্লো দেয়া হচ্ছে যার মান যাচাইয়ের জন্য পরিমাপক যন্ত্র খোদ বিটিআরসি’র কাছেই নেই
মহিউদ্দিন আহমেদ- সভাপতি বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশে টাওয়ার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা না পাওয়া বা নতুন সাইটের অনুমোদন না পাওয়ার সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় না আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে আইজিডব্লিউ এবং আইসিএক্সের মান যাচাই করা হয় না তারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। দেশে ৬৫ শতাংশ ফাইবার ওভারহেড রয়েছে বলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। লাস্ট মাইল পর্যন্ত ফাইবার না থাকা এবং দামের অসঙ্গতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ওভারহেড ফাইবার সামান্য কারনেই কাটা যাচ্ছে, ব্যান্ডউইডথ স্লো দেয়া হচ্ছে যার মান যাচাইয়ের জন্য পরিমাপক যন্ত্র খোদ বিটিআরসি’র কাছেই নেই।”
তিনি আরও বলেন, “নিরবিচ্ছিন্ন ট্রান্সমিশন মোবাইল অপারেটরেদর সেবার অন্যতম শর্ত। বিটিআরসি অপারেটরদের স্পেকট্রাম নেয়ার কথা বলেছে কিন্তু যে উচ্চমূল্যে স্পেকট্রাম দেয়া হয় তার ব্যয়ভার গ্রাহকের ওপরেই পড়ে। আমাদের জানা মতে, অপারেটররা কলড্রপ সমস্যা সামাধানে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে বিটিআরসিকে তা সমাধানের আবেদন করে আসছেন। কিন্তু এ সমস্যাগুলো সমাধান না করে বিটিআরসি শুধুমাত্র শোকজ দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।”
আমরা মনে করি, টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলোর মান উন্নয়ন এবং জবাবদিহিতার নিশ্চিত করা না গেলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।