এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব আয় হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে: এমআইওবি
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে আমদানিকৃত বা নিবন্ধনবিহীন ফোন দেশে ব্যবহার করা যাবে না। এই উদ্যোগের ফলে সরকারের হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় নিশ্চিত হবে, বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং ভোক্তার অধিকার সুনিশ্চিত হবে।
আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানায় মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি)।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এমআইওবি’র সভাপতি জাকারিয়া শহীদ, সহসভাপতি রেদওয়ানুল হক, মোবাইলফোন ডিস্ট্রিবিউশন অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল কপুরিয়া, মোবাইল কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, অনার স্মার্টফোনের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, স্যামসাং বাংলাদেশ-এর পরিবেশক প্রতিষ্ঠান এক্সেল টেলিকমের সাইফুদ্দিন টিপু এবং ভিভো বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইমাম উদ্দীন। সঞ্চালনা করেন এমওআইবি’র প্রধান নির্বাহী মনিরুল ইসলাম।
আইফোনের বাজার এখনও সম্পূর্ণ অবৈধ আমদানিনির্ভর
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর এগুলো করছে ‘লাগেজ পার্টি’রা। এদের মাধ্যমে দেশে চোরাই, নকল, কপি ও রিফার্বিশ মোবাইল ফোনের ব্যবসা গড়ে ওঠেছে। এর ফলে বৈধভাবে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুকির মধ্যে পড়েছে। বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বাজার চোরাকারবারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া, অবৈধ ফোন দিয়ে আর্থিক প্রতারণাসহ অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যার প্রকৃত অপরাধীকে খুজে বের করা যায় না।
মোবাইল ফোনের শতভাগ চাহিদা দেশের উৎপাদকরাই মেটাতে পারে
রেজওয়ানুল হক
জাকারিয়া শহীদ বলেন, “বর্তমানে বাজারে থাকা মোবাইল ফোনের অধিকাংশই অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। এতে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় উৎপাদকরা। অথচ দেশে উৎপাদন সরঞ্জামের মূল্য ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, তবুও স্থানীয় নির্মাতারা মোবাইল ফোনের মূল্য বাড়ায়নি। এনইআইআর চালু হলে মোবাইল ফোনের মূল্য এক টাকাও বাড়বে না। কিছু ‘লাগেজ পার্টি’ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।”
রেদওয়ানুল হক বলেন, “দেশে এখন প্রায় সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডই মোবাইল উৎপাদন করছে। স্থানীয় কারখানাগুলো দেশের ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে কিন্তু অবৈধ আমদানির কারণে সক্ষমতার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে এমন উৎপাদকও রয়েছেন যারা নিজেরাই পিসিবিও বানান। নিজেরাই মাদারবোর্ড তৈরি করে বৈশ্বিক মানের মোবাইল ফোন তৈরি করছেন ৯০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ফোনের শতভাগ চাহিদা দেশের উৎপাদকরাই মেটাতে পারে। এতো দিনে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম যদি এনইআইআর চালু থাকতো। দেরিতে হলেও চালু হওয়াটা সুখের বিষয়। প্রথমে সফটওয়্যারগত কিছু সমস্যা দেখা দিলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই যেকোনও পরিস্থিতিতেই যেন এনইআইআর আর কখনও বন্ধ না হয়।”
কিছু লাগেজ পার্টি ‘এনইআইআর’ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে
জাকারিয়া শহীদ
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “আইন মেনে ব্যবসা করা এখন সহজ হয়েছে এবং অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশেই এখন উৎপাদন শুরু হওয়ায় হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গ্রে-মার্কেট শুধু ব্যবসায়ী বা ক্রেতাই নয় দেশের জন্যও হুমকি। আইফোনের বাজার এখনও সম্পূর্ণ অবৈধ আমদানিনির্ভর। এমন পরিস্থিতিতে এনইআইআর চালু করা একটি মহৎ উদ্যাগ। এটি সবার জন্যই কল্যাণকর। শুধুমাত্র যারা দেশ ও দশের ভালো চায় না তারাই এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।”





