এটুআই বিল সংশোধন ও পরিমার্জনের দাবী পাঁচ আইসিটি সংগঠনের
ক.বি.ডেস্ক: সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাশকৃত ”এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩” বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনের দাবি জানিয়েছে দেশের আইসিটি খাতের পাঁচটি বাণিজ্য সংগঠন। এটুআই বিল সংশোধন ও পরিমার্জনের দাবীতে পাঁচটি আইসিটি সংগঠন- বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো এবং ই-ক্যাব সম্মিলিতভাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
গতকাল সোমবার (১০ জুলাই) রাজধানীর কাওরানবাজারের বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ; ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক; বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এর সভাপতি মো. ওয়াহিদ শরিফ; ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এবং বেসিস সিনিয়র সহসভাপতি সামিরা জুবেরি হিমিকাসহ সংগঠনগুলোর নির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের হার্ডওয়্যার খাতের (কমপিউটার) ব্যবসায়ীদের প্রাচীন সংগঠন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) কার্যনির্বাহী পরিষদের কোনও সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলন বক্তারা জানান, সরকারের কাজ ব্যবসা করা না। সরকার ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। কিন্তু এ আইন পাস হওয়ার পর সরকার আমাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমরা যে ধরনের ব্যবসা করছি, সরকারও তেমন ব্যবসা করতে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আমরা যে কাজ করছি, সেই একই কাজ যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান এটুআইও করে, তাহলে সরকার তো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতোই কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৮ জুন ২০২৩ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সদস্যবৃন্দ (সংসদ সদস্য), ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও আইসিটি খাতের ৫টি বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতিবৃন্দ আমন্ত্রিত হয়ে সভায় যোগদান করেন। এটুআই বিল ২০২৩ এর মোট ১৩টি ধারা ও ১৫টি উপধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বর্ণিত সভায় উপস্থাপনের জন্য দাখিল করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৩টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়
১. নির্বাহী কমিটিতে সকল আইসিটি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি রাখতে হবে [ধারা-৭]।
২. এটুআই কোনো প্রকার যৌথ বা অংশীদারী কারবারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না [ধারা-১২ (ঘ)]।
৩. এটুআই কোম্পানি গঠন করতে পারবে না [ধারা ২১]।
কিন্তু, গত ৫ জুলাই ২০২৩ জাতীয় সংসদে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত এটুআই বিল ২০২৩, পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত উপরোক্ত ৩টি সংশোধন প্রস্তাবের দুটি বিষয় বিবেচনা করা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তথা, “এজেন্সি প্রয়োজন অনুযায়ী কোম্পানি গঠনের ক্ষমতা” [ধারা ২১] এখনো বিদ্যমান রয়েছে যা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সবসময় বলে আসছেন- ‘সরকার ব্যবসা করবে না, ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরী করবে’। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে সরকার এবং বেসরকারি খাতের পারস্পরিক এবং পরিপূরক সম্পর্ক সম্প্রসারণে সরকারের সকল ধরনের সহযোগিতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, যদিও এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) ২০২৩ বিল নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আমরা সবগুলো অ্যাসোসিয়েশন প্রধান বেশ কয়েকবার বসেছি এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো সম্পর্কে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। জাতীয় সংসদে এটুআই বিল টি পাশ হলে আমরা আইসিটি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ভীষণভাবে স্তম্ভিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ধারা, এটুআই কে কোম্পানি গঠনের ক্ষমতা দেয়ার ধারাটি রয়ে গেল। যার দ্বারা, এটুআই যেকোনো ধরনের কোম্পানি গঠন করে যেকোনো সেবা দিতে পারবে। এই ধারা-টি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ভীষণভাবে সাংঘর্ষিক। এমতাবস্থায়, পাশকৃত এটুআই বিল ২০২৩ এর ২১ ধারায় বর্ণিত কোম্পানি গঠনের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে রহিত করার পাশাপাশি অন্যান্য সাংঘর্ষিক ধারাসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক বিলটি পুণর্মুদ্রণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ জানান তিনি।
মো. ইমদাদুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের এটুআই প্রকল্প স্থায়ী কাঠামো হিসেবে রূপলাভ করবে এ আইনের মাধ্যমে। এটুআই’র পরিচালনা পর্ষদে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে সরকার বেসরকারী খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। পাশ হওয়া এটুআই বিল ২০২৩ অনুসারে সরকার ব্যবসার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করবে কিন্তু নিজে ব্যবসার অংশ হবে না। এজন্য আমরা আনন্দিত। এসপায়ার টু ইনোভেটের স্থায়ী কাঠামো হিসেবে এজেন্সি টু ইনোভেট পাবলিক সার্ভিসের ডিজিটাল রূপান্তর এবং নাগরিকের জীবনমানে সৃষ্ট সেবা অধিকতর কার্যকর ও টেকসই করতে কাজ অব্যাহত রাখবে। আইএসপিএবিসহ সকল আইসিটি সংগঠন এ সকল কাজে সহযোগী হিসেবে পাশে থাকবে।
ওয়াহিদ শরীফ বলেন, আমরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মিটিং এ উপস্থিত ছিলাম এবং দাবিগুলোর সঙ্গে একমত এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্বার্থে এই ধারাটি বাতিল করে আইনটি সংশোধন প্রয়োজন। এই বিলটি সংশোধন করা এই শিল্পের উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, সব অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলিত দাবি প্রতিমন্ত্রী এবং আমাদের আইসিটি উপদেষ্টা শিঘ্রই সম্পাদন করবেন এটাই প্রত্যাশা।