একুশে পদক গ্রহণ করলেন অভ্র’র চার নির্মাতা

শামীমা আক্তার: বাংলা ভাষায় লেখাকে সহজতর করতে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ‘একুশে পদক ২০২৫’ পেলো অভ্র কি-বোর্ডের আবিষ্কারক মেহদী হাসান খান সহ তিন নির্মাতা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক ২০২৫’ গ্রহণ করেন অভ্র কি-বোর্ডের চার নির্মাতা। তারা হলেন- মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা (দলগত)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত “একুশে পদক ২০২৫” পদক প্রদান অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভ্র’র চার নির্মাতার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।
‘একুশে পদক ২০২৫’ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান। এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দলকে ‘একুশে পদক ২০২৫’ দেয়া হয়। পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, একটি সম্মাননাপত্র ও ৪ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য প্রথমে শুধু মেহদী হাসান খানকে মনোনীত করা হয়েছিল, যাকে অভ্র কিবোর্ড তৈরির কারিগর বলা হয়। তবে পরবর্তীতে মেহদী হাসানের অনুরোধে অভ্র তৈরিতে তার সঙ্গে বাকি তিনজনকেও পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০০৩ সালে চালু হওয়া অভ্র কিবোর্ড বাংলা টাইপিংয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। ধ্বনিগত টাইপিং পদ্ধতির মাধ্যমে এটি ব্যবহারকারীদের জটিল কী-বোর্ড লেআউট ছাড়াই বাংলা লেখার সুযোগ দেয়, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র কি-বোর্ড তৈরি করেন মেহদী হাসান খান। অভ্র একটি ফ্রি সফটওয়ার। অর্থাৎ এটাকে বিনামূল্যে ইচ্ছেমত ব্যবহার ও বিতরণ করা যায়। এই কি-বোর্ডে কাজ করা এতই সহজ যে বাচ্চারাও ঘণ্টাখানেক মোবাইলে চেষ্টা করলে এটা শিখতে পারে।

অভ্র সফটওয়্যারের কারণে কমপিউটারে বাংলা লেখা সহজ হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাই অভ্র ব্যবহার করছে। ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টম লেআউট সুবিধার জন্য অভ্র দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। অভ্র কি-বোর্ডের জন্য ২০১১ সালে মেহদী হাসান খান দেশের আইসিটি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বেসিস পুরস্কার পান। এবছর একুশে পদকের স্বীকৃতি তার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল।
অভ্র সম্পূর্ণভাবে ইউনিকোড উপযোগী। এই সফটওয়ারটি ২০০৩ সালের ১৪ জুন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম থেকে স্বীকৃতি পায়। ২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ অভ্র কি-বোর্ড প্রথম উন্মুক্ত করা হয়। পরে ওই বছরই সেপ্টেম্বরে নিজের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাব থেকে অভ্র সফটওয়ার উন্মুক্ত করেন মেহদী। এই সফটওয়ার ডায়নামিক টাইপের হওয়াতে যা লেখা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই অ্যান্সারটা হয়। এটাকে ফোনেটিক বলে।
মানুষের আসলে নতুন করে লে আউট শেখার প্রয়োজন হচ্ছে না। যে ইংরেজি বা রোমান হরফে লিখতে অভ্যস্ত ওই লে আউট ব্যবহার করে যদি বাংলা লেখা যায়, তবে নতুন লে আউটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এ কারণে মানুষ দ্রুত এটা আয়ত্ত করে ফেলে। অভ্র ব্যবহারে গ্রাহককে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। কেননা এটি একেবারেই উন্মুক্ত, বিনামূল্যের।