এআই জগতে বিপ্লব: চিনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়’র এসিসিইএল চিপ - computerbichitra.com
প্রতিবেদন

এআই জগতে বিপ্লব: চিনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়’র এসিসিইএল চিপ

মমলুক ছাবির আহমদ: চীনের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার! চিনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Tsinghua University)-এর এর বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে এসিসিইএল (অল-্অ্যানালগ চিপ কমবাইনিং ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড লাইট) চিপ। একটি অপটিক্যাল-ইলেকট্রনিক হাইব্রিড এআই চিপ, যা প্রচলিত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে। এই চিপটি শুধু গতিতেই নয়, শক্তিক্ষয় ও পরিবেশ বান্ধবতায়ও তৈরি করেছে নতুন মাইলফলক। এসিসিইএল-এর চিপ এনভিডিয়া এ১০০-এর চেয়ে ৩,০০০ গুণ দ্রুত! আসুন জেনে নিই, কেন এই চিপকে বলা হচ্ছে এআই চিপের ভবিষ্যৎ!

এসিসিইএল’র প্রযুক্তি: আলো দিয়ে ডেটা প্রসেসিং, শক্তি সাশ্রয়ে বিপ্লব
এসিসিইএল চিপের মূল উদ্ভাবন হলো অপটিক্যাল অ্যানালগ কম্পিউটিং (ওএসি) প্রযুক্তি। এখানে ডিজিটাল সিগন্যালের বদলে আলোর পালস ও অ্যানালগ সার্কিটরি ব্যবহার করা হয় ডেটা প্রসেসিংয়ের জন্য। এটি কীভাবে কাজ করে?

আলোর গতিতে গণনা: ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফোটনিকস (আলো-ভিত্তিক কম্পিউটিং) ব্যবহার করা হয়, যা ইলেকট্রনের চেয়ে ১০০ গুণ দ্রুত গতিতে ডেটা স্থানান্তর করে।

শক্তি সাশ্রয়: প্রচলিত গ্যান (GAN) মডেল চালাতে এনভিডিয়া এ১০০ জিপিইউ’তে যেখানে ২৫০ ওয়াট শক্তি লাগে, এসিসিইএল-এ মাত্র ০.০৬ মিলিওয়াট!

সরল ডিজাইন: ২০ বছর পুরনো ১৮০ এনএম সেমিকন্ডাক্টর প্রসেস ব্যবহার করে তৈরি- যা প্রমাণ করে, ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর ছাড়াই বিপ্লব সম্ভব!

পারফরম্যান্স: সংখ্যায় এসিসিইএল-এর বিশালতা
এসিসিইএল-এর গতি ৪.৬ পেটাফ্লপস আর এনভিডিয়া-এর গতি ১.৫ টেরাফ্লপস। এসিসিইএল-এর শক্তি দক্ষতা ৭৪.৮ টেরাফ্লপস/ওয়াট আর এনভিডিয়া-এর শক্তি দক্ষতা ০.০০৬ টেরাফ্লপস/ওয়াট। এসিসিইএল-এর ভিশন টাস্কে গতি ৩,০০০x দ্রুত আর এনভিডিয়া-এর ভিশন টাস্কে গতি বেসলাইন। এসিসিইএল-এর শক্তি খরচ ৪ মিলিয়ন গুণ কম আর এনভিডিয়া-এর শক্তি খরচ উচ্চ (তথ্যসুত্র- ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় নেচার ২০২৩)।

এসিসিইএল-এর যুগান্তকারী ৫টি বৈশিষ্ট্য
১. কম্পিউটার ভিশনে বিপ্লব: স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ড্রোন বা স্মার্ট সিটিতে রিয়েল-টাইম অবজেক্ট ডিটেকশন সম্ভব হবে মাত্র ন্যানো সেকেন্ডে!
২. গ্রিন এআই: একটি এলইডি বাল্বের চেয়েও কম শক্তিতে চলে- জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এটা বিশাল অর্জন।
৩. সস্তা উৎপাদন: পুরনো সেমিকন্ডাক্টর প্রসেসে তৈরি বলে উৎপাদন খরচ ৯০% কম।
৪. তাপ নিয়ন্ত্রণ: অপটিক্যাল কম্পোনেন্ট তাপ উৎপাদন করে না- সুপার কম্পিউটারে কুলিং সিস্টেমের ঝামেলা কমবে।
৫. সার্বজনীন ব্যবহার: হাসপাতাল থেকে কৃষিখামার- সবখানে এআই চিপের ব্যবহার বাড়াবে এসিসিসিইএল।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: এসিসিইএল কী বদলে দিতে পারে?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এসিসিইএল-এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী-
স্মার্ট এগ্রিকালচার: আলোর গতিতে ফসলের রোগ শনাক্ত করা, মাটি বিশ্লেষণ কৃষি উৎপাদন বাড়াবে।
হেলথকেয়ার: এক সেকেন্ডে এমআরআই/সিটি স্ক্যান বিশ্লেষণ করে ক্যানসার শনাক্তকরণ।
পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: সুন্দরবনে রিয়েল-টাইমে বনাঞ্চল নজরদারি, বন্য প্রাণী ট্র্যাকিং।
শিল্প বিপ্লব: গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে স্বয়ংক্রিয় কোয়ালিটি চেকিং মেশিন-নিখুঁত উৎপাদন।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এসিসিইএল যদিও যুগান্তকারী, এর সামনে কিছু বাধা রয়েছে
সফ্টওয়্যার সাপোর্ট: বর্তমান এআই ফ্রেমওয়ার্ক (TensorFlow, PyTorch) অপটিক্যাল কম্পিউটিংয়ের জন্য অপ্টিমাইজড নয়।
নির্ভরযোগ্যতা: অ্যানালগ সিস্টেমে ডিজিটালের মতো নির্ভুলতা নিশ্চিত করা কঠিন।
মাস প্রডাকশন: ছিংহুয়া এখনও প্রোটোটাইপ পর্যায়ে-(বাণিজ্যিক উৎপাদনে কতদিন লাগবে?)
এমআইআইটি-এর এক রিপোর্ট বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অপটিক্যাল এআই চিপের বাজার ছাড়িয়ে যাবে ১০০ বিলিয়ন ডলার!

ভবিষ্যৎ: এসিসিইএল-এর পরের পদক্ষেপ: ছিংহুয়া’র টিম এখন কাজ করছে
মাল্টি-টাস্কিং: একই চিপে ভিশন, স্পিচ ও ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং চালানোর সক্ষমতা।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন: আলো-ভিত্তিক কোয়ান্টাম সিস্টেমের সাথে যুক্ত করে তৈরি হবে হাইব্রিড সুপারকম্পিউটার!
ওপেন-সোর্স প্ল্যাটফর্ম: গবেষকদের জন্য এসিসিইএল-এর ডিজাইন ও সফ্টওয়্যার উন্মুক্ত করা হতে পারে, যা গ্লোবাল এআই গবেষণাকে ত্বরান্বিত করবে।

এসিসিইএল শুধু একটি চিপ নয়- এটি এআই, সেমিকন্ডাক্টর ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক নতুন দর্শন। এর সাফল্য প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি শুধু ছোট ট্রানজিস্টর-এর ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং নতুন পদার্থবিদ্যা ও ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠবে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এটি একটি সুযোগ-কম খরচে, কম শক্তিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এআই সমাধান বাস্তবায়নের!

লেখক: মমলুক ছাবির আহমদ- ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কমপিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। তথ্যসুত্র: লেখকের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *