এআই’র নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি
ক.বি.ডেস্ক: শিক্ষা, পরিবহন, গার্মেন্টস, কৃষি এবং বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরে এআই কৌশল, নীতি প্রণয়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব রয়েছে। এইসব খাতে সুনির্দিষ্টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কৌশল মানা না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। একই সঙ্গে কৌশল ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এআই নীতি কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনীতার বিষয় উল্লেখ করেন বক্তারা।
গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) ঢাকার আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে আইসিটি বিভাগ, ইউনেস্কো এবং এটুআই’র সহযোগিতায় আয়োজিত ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি’’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, শিক্ষাবিদ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন (অনলাইনে যুক্ত) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি সচিব মো. শামসুল আরেফিন।
বক্তব্য রাখেন এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ঢাকায় ইউনেস্কো অফিসের প্রধান হুহুয়া ফ্যান ওআইসি, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারত্নে, ইউনেস্কোর সামাজিক ও মানব বিজ্ঞানের সহকারী মহাপরিচালক গ্যাব্রিয়েলা রামোস।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এআই প্রযুক্তি যেন আমাদের সমাজে প্রযুক্তি বৈষম্য বৃদ্ধি না করে বরং এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনার পাশাপাশি সমাজের সকলের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে। এআই প্রযুক্তির রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। প্রযুক্তিগত সমাধান, সময়োপযোগী নীতি কাঠামো, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’
সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, ‘‘আমরা সকলের সুবিধার জন্য নৈতিক এআই-এর রূপান্তরকারী শক্তিকে কাজে লাগাতে চাই। আমরা চাই এমন একটি নতুন ভবিষ্যত তৈরি করতে, যেখানে এআই প্রযুক্তি আমাদের সমাজে নৈতিকভাবে অবদান রেখে একটি টেকসই স্মার্ট সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসেন খান বলেন, ‘‘এআই’র সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এখন আমাদের সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর ও টেকসই কর্মকৌশল প্রণয়নে এআই অভিযোজনের সমস্যা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন।’’
মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা ২০১৮ সাল থেকে এআই নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, এর ফলে ২০১৯ সালে ‘এআই ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ২০১৯’ তৈরি হয়। এখন আমরা এআই নীতিমালা এবং এআই আইনে নৈতিকতার বিষয়টি সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছি।’’
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউনেস্কোর এআই রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজির মতো উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করে। এআই প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আইন, সামাজিক সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’’
হুহুয়া ফ্যান ওআইসি বলেন, ‘‘আমাদের আজকের সংলাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করা হয়েছে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে র্যাম কান্ট্রি রিপোর্ট ও এর নীতিগত সুপারিশ তৈরি করার সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করছি।’’
সোনালী দয়ারত্নে বলেন, ‘‘সব দেশই এআই দ্বারা প্রভাবিত, এবং উদীয়মান অর্থনীতির বৈশ্বিক এআই রেসে একটি কণ্ঠস্বর প্রয়োজন। সেই আওয়াজ দিয়ে আমরা বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন করতে চাই।’’
গ্যাব্রিয়েলা রামোস বলেন, ‘‘ইউনেস্কোতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত কথোপকথনকে কেবল একটি প্রযুক্তিগত হিসেবে না দেখে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এই প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা কোন উদ্দেশ্য নয় বরং এর যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের লক্ষ্য পূরণ করে সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করাই মূল লক্ষ্য।’’
অনুষ্ঠানে এআই টেকনোলজির গ্লোবাল গভর্নেন্সের ওপর একটি প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো সদর দফতরের সেকশন ফর বায়োইথিকস অ্যান্ড দ্য এথিক্স অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট জেমস রাইট এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের এডুকেশন প্রোগ্রাম সেক্টরের প্রধান হুহুয়া ফ্যান। আলোচনাটি পরিচালনা করেন ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা হক।
বক্তব্য রাখেন এটুআই’র হেড অব ফিউচার অব এডুকেশন মো. আফজাল হোসেন সারওয়ার, এটুআই’র রিসার্চ স্পেশালিস্ট ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই’র সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারিগ ইউসুফ সাদেক, ইউনেস্কো দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ইউনসং কিম।।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত ইউনেস্কোর বৈশ্বিক সুপারিশের প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব মাথায় রেখে বিভিন্ন সেক্টরে এইআই ব্যবহারের এর নৈতিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত সুপারিশ’ ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কোর ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় যা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ।