ই-পাসপোর্ট
ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট পরিষেবা ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে ১১৯তম দেশ বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এ জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি বিদেশ থেকে আগতরা ব্যবহার করবেন। বাকি তিনটি যাঁরা বিদেশে যাবেন তাঁদের জন্য। ই-পাসপোর্টের নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন….ফারুক আহমেদ শিবলু
গত বছর (২০২০) ২২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছরের জন্য। বর্তমানের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর যুগ শেষে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পূণ ই-পাসপোর্ট বা ডিজিটাল পাসপোর্ট পাবে বাংলাদেশের নাগরিকরা। এ পর্যন্ত ১২০টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে।
ই-পাসপোর্ট কি: ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি ইলেকট্রনিক চিপের মধ্যে পাসপোর্টধারীর পরিচয় সনাক্তকারী বিভিন্ন বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বর্তমানে ই-পাসপোর্টে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের মনির তথ্যসহ সর্বমোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা সুবিধা থাকবে। ই-পাসপোর্ট দেখতে বর্তমানে চলমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মতই। ই-পাসপোর্টে আগের পাসপোর্টের শুরুতে বিদ্যমান পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্যের দুইটি পৃষ্ঠার পরিবর্তে পলিমারের তৈরি একটি চিপের মধ্যে তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ই-পাসপোর্ট কেমন হবে: ই-পাসপোর্ট বর্তমানের বই আকারে পাসপোর্ট যেমন আছে তেমনই। শুধু পাসপোর্টের পাতার শুরুতে ব্যক্তির তথ্য নিয়ে যে দুই পাতা আছে তা থাকবেনা। ব্যক্তির তথ্য পাসপোর্টেই পলিমারের তৈরি একটি চিপের মধ্যে সংরক্ষিত থাকবে। আর প্রযুক্তিগতভাবে এমআরপি পাসপোর্টের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের প্রার্থক্য আছে। এতে আছে শনাক্তকরণ চিহ্ন, স্মার্টকার্ড প্রযুক্তির মতো মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা। ই-পাসপোর্টের প্রতিটি পাতায় খুব সূক্ষ্ম ডিজাইনের জটিল সব জলছাপ থাকে। এই পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়স ভেদে ৫ ও ১০ বছর। বর্তমানে ই-পাসপোর্টে কাগজপত্র সত্যায়নের ঘর উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি কোন আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হয় তবে সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) জমা দিতে হবে এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে সকল আবেদনকারীকে শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
কিভাবে কাজ করবে ই-পাসপোর্ট: ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে পাবলিক কি ডাইরেকটরিতে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে। ই-পাসপোর্ট স্ক্যান করলে ব্যক্তি পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয়ে যায়। এই জন্যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হবে না। যাঁদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরের স্বয়ংক্রিয় ই-গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে পারবে। তবে যাঁদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাঁদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে। ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পাবলিক কি ডাইরেকটরিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পাবলিক কি ডাইরেকটরিতে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা: ই-পাসপোর্টের তথ্য চুরি বা নকল করা এবং তা কাজে লাগানো প্রায় অসম্ভব। ই-পাসপোর্ট দিয়েয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়া অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ। সব তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্নিংয়া ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সুরক্ষিত থাকার কারণে তা জাল করা সম্ভব হয় না। বর্ডার পার হওয়ার সময় যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে। এয়ারপোর্ট বা বর্ডার পার হওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিচয় নির্ণয় হচ্ছে। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সহজেই তথ্য যাচাই করতে পারবে। দূতাবাসে ভিসার আবেদন করলে দূতাবাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
ই-পাসপোর্ট করার উপায়: প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করার যে উপায় সেইভাবেই এই নতুন পাসপোর্ট করা হবে। ঢাকা ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে আগের মতই পাসপোর্ট করা যাবে। ই-পাসপোর্টের জন্যে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে বায়োমেট্রিক অতিরিক্ত তথ্যগুলো নেওয়া হবে।
ই-পাসপোর্ট ফি: পাসপোর্টে পৃষ্ঠা সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠা এই দুই ধরণের ই-পাসপোর্ট থাকছে। উভয় ধরণের পাসপোর্টে ডেলিভারি সময় অনুযায়ী আরও তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। আর সে অনুয়ায়ী পাসপোর্টের ফি নির্ধারণেও রয়েছে ভিন্নতা।
৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের সাধারণ ফি ৪,০২৫ টাকা; জরুরী ফি ৬,৩৯৫ টাকা; অতিজরুরী ফি ৮,৬২৫টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের সাধারণ ফি ৫,৭৫০ টাকা; জরুরী ফি ৮,০৫০ টাকা; অতিজরুরী ফি ১০,৩৫০টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের সাধারণ ফি ৬,৩২৫ টাকা; জরুরী ফি ৮,৬২৫ টাকা; অতিজরুরী ফি ১২,০৭৫ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের সাধারণ ফি ৮,০৫০ টাকা; জরুরী ফি ১০.৩৫০ টাকা; অতিজরুরী ফি ১৩,৮০০ টাকা।
সাধারণ ফি প্রদান সাপেক্ষ্যে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ২১ দিন। জরুরি ফি প্রদান সাপেক্ষ্যে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ৭ দিন। অতিজরুরি ফি প্রদান সাপেক্ষ্যে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ১ দিন
আগের পাসপোর্টের কি হবে: ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখনের এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাঁকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। আর ই-পাসপোর্ট চালু হবার পর নতুন পাসপোর্ট করতে চাইলে এমআরপি এর বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।
অনলাইনে আবেদন করা যাবে: আপনি চাইলে অনলাইনে সরাসরি পূরণ করতে পারবেন অথবা ফর্ম ডাউনলোড করে তা পূরণ করতে পারবেন। তবে ছবি, আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশের ছবির জন্যে নিজে স্বশরীরে হাজির হয়েই আপনার আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
ই-গেট না থাকলে কিভাবে ইমিগ্রেশন হবে: বিমানবন্দর বা ইমিগ্রেশন পোর্ট সব জায়গাতেই ই-গেট থাকবে এবং পাশাপাশি প্রচলিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও থাকবে। তাই ই-গেট না থাকলেও প্রচলিত ইমিগ্রেশন পদ্ধতিতে সবাই যাতায়াত করতে পারবে। এ ছাড়া ই-পাসপোর্টে এমআরপি পাসপোর্টের মতো প্রথমে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা না থাকলেও সেখানে পাসপোর্ট বাহকের নাম, নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি তথ্য থাকবে। তাই ই-পাসপোর্ট দিয়েও প্রচলিত পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন পার হওয়া যাবে।
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: ই-পাসপোর্ট পোর্টাল https://epassport.gov.bd থেকে পাসপোর্ট করা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানার পাশাপাশি অনলাইনেই ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে পারবেন। ৫টি সহজ ধাপে ই-পাসপোর্ট আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।