ই-ক্যাব এর বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ কোন পথে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা): ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের একমাত্র ব্যবসায়ী সংগঠন। যা সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংগঠন যা ২০১৪ সাল থেকে কাজ করে আসছে। উদ্যোক্তা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি সর্বোপরি বেকার জীবন থেকে উদ্যোক্তা বানিয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে সংগঠনটি।
২০২৪ এর জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়া, ৫ আগস্টের পর পূর্বের কার্যনির্বাহী পরিষদের পদত্যাগের ফলে সাধারণ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রশাসকের কার্যকাল শুরুর দিন থেকে তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আগামীতে একটু সুষ্ঠ সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যেহেতু গতবারের ভোটার তালিকা নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মাঝে অভিযোগ ছিল তাই, তার ফলশ্রুতিতে প্রশাসক দুইবার সহায়ক কমিটি গঠন করেন। সহায়ক কমিটির একমাত্র কাজই হচ্ছে ই-ক্যাব এর সদস্য তালিকা হালনাগাদকরণে সহায়তা করা। যা সহায়ক কমিটি গঠন অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথমবার ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার পর কমিটির কিছু কিছু সদস্যের (যারা তুলনামূলকভাবে ই-ক্যাব এর নতুন সদস্য) অসহযোগিতা, উগ্রতা, দখলদারিত্বের মনোভাব, প্রভাব বিস্তার, বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে বিনয়ী না হওয়া, প্রশাসকের সঙ্গে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা সহ সহায়ক কমিটির কার্যপরিধির বাহিরে নানান কাজে হস্তক্ষেপ সহ বাধা দান করেন যার ফলশ্রুতিতে প্রথমবার ঘটিত সহায়ক কমিটি থেকে অধিকাংশ সদস্যই পদত্যাগ করেন।
দ্বিতীয়বার গত ১৪ জানুয়ারি গঠিত দ্বিতীয় ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক কমিটির অনেক সদস্যই পদত্যাগ করেন একই কারণে। কিন্তু পরপর দুবার ঘটিত সহায়ক কমিটিতে কিছু সদস্য গোষ্ঠীবদ্ধভাবে ই-ক্যাব এর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন বা অকার্যকর করার লক্ষ্যে ই-ক্যাব এর সেক্রেটারিয়েটকে প্রভাব খাটিয়ে এবং ভীতি দেখিয়ে তাদের একমাত্র কার্যপরিধির বাহিরে নানান কাজে বা সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য হস্তক্ষেপ করা সহ অন্যান্য কাজের জোরপূর্বক লিপ্ত করেন। যা ই-ক্যাব, ই-ক্যাবের সদস্য তথ্য সুরক্ষা এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা প্রতিবন্ধকতা মূলক কাজ এবং এটি কোন সুফল বয়ে আনবে না সদস্যদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিছাড়া।
সহায়ক কমিটির একমাত্র কাজই হচ্ছে ই-ক্যাব এর সদস্য তালিকা হালনাগাদকরণে সহায়তা করা। যা সহায়ক কমিটি গঠন অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে
অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে ই-ক্যাব তার ১১ বছরে এসে পরিবর্তিত বাংলাদেশে যে পরিমাণ সুনাম হারানোর জায়গায় এসেছে ব্যক্তিগত অথবা গোষ্ঠীগত কিছু মানুষজনের জন্য। পারস্পরিক আস্থাহীনতা, বিশ্বাসহীনতা, আন্ত:কলহ, সম্মানহীনতার মতো ঘটনা ঘটছে। বৈষম্যহীনভাবে তারা ব্যক্তিগতভাবে আসলে সব সদস্যদের ভালো চায় কিনা সেটা নিয়ে সব সদস্যদের মাঝেই ধীরে ধীরে প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে।
মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য আমরা আমাদের অ্যাসোসিয়েশনকে সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনদের কাছে ছোট করতে পারিনা। বাংলাদেশের ৫০০ এর অধিক অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ই-ক্যাবকে মাথা উঁচু করে প্রথম সারির দিকে দেখতে চাই। আগামীতে একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রশাসক যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, সঙ্গে ই-ক্যাবের সেক্রেটারিয়েট যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাতে আমাদের সবারই উচিত সহযোগিতা করা বাধা বা বৈরিতা তৈরি করা না।
ই-ক্যাবের বর্তমান প্রশাসক গত ১৪ জানুয়ারি নতুন সহায়ক কমিটি গঠন করেন এবং অফিস আদেশে সুস্পষ্টভাবে সহায়ক কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করেন তার মধ্যে একমাত্র কাজই হলো ই-ক্যাবের সদস্য তালিকা হালনাগাদকরণে সহায়তা করা।
আগামী নির্বাচনে যেন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়; অব্যবসায়ী কলাগাছ মেম্বার বা ভোটার যেন সদস্য তালিকা থেকে অপসারণ হয়; যদি সদস্য তালিকা হালনাগাদ নির্দেশিকা অনুযায়ী যথোপযুক্ত কাগজপত্র না থাকে সঙ্গে সঙ্গে আগামীতে ভোটার তালিকা তৈরিতে যেন ২০২৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা সদস্য হয়েছেন তাদেরকেই নবায়ন করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
সহায়ক কমিটির সক্রিয় সদস্য যারা অবশ্যই তারা তাদের কার্যপরিধি সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, যেন ই-ক্যাবের সকল সদস্যরা সহ বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা যেন আপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। নিজেকে বড় ভাবার আর অন্যকে ছোট ভাবার বা করার যে রিপু নিজেদের মধ্যে বর্তমান থাকে তা পরিহার করে বিনয় আর শ্রদ্ধাশীল থেকে সবার সহযোগিতা নিয়েই এই মহান কাজ এগিয়ে নিতে হবে। অরাজনৈতিক এবং প্রকৃত ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের নিয়েই হোক আগামীর ই-ক্যাব এটাই প্রত্যাশা।
ই-ক্যাবের সদস্যপদে পরিবর্তন করাটা খুবই জরুরী। গত দুইটি প্রত্যক্ষ নির্বাচনের আবহাওয়ায় যেটি প্রতিয়মান হয়েছে বা দেখা গিয়েছে। ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য নিজ খরচে তফসিল অনুযায়ী ভোটার হওয়ার ১২০ দিন আগেই সদস্য বানিয়ে অব্যবসায়িক লোকজনকে ও কলা গাছ সদস্য বা ভোটার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যাতে করে সর্বোপরি অ্যাসোসিয়েশনের প্রকৃত ব্যবসাহীদের সংগঠন না হয়ে একটা যা ইচ্ছে তাই সদস্য নির্ভর অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে। যেটা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য তথা এই ই-ক্যাবের জন্য মোটেও ভালো বা সুফল বয়ে আনছে না এবং ভবিষ্যতেও যে আনবে না তার নমুনা বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
৫ আগস্টের পর পূর্বের কার্যনির্বাহী পরিষদের পদত্যাগের ফলে সাধারণ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগপ্রাপ্ত হন
সেক্ষেত্রে কিছু মতামত হলো
ই-ক্যাবকে সম্পূর্ণ বা শতভাগ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হিসেবে সব সদস্যদেরই বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে। প্রকৃত ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের নিয়েই হবে ই-ক্যাব। ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাকবে একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্মান।
বর্তমান বছর থেকে কেউ সরাসরি জেনারেল সদস্য হতে পারবে না, মানে সদস্য হলেই ভোট দেয়ার ক্ষমতা থাকবে না। প্রথম দুই বছর অ্যাসোসিয়েট সদস্য হিসেবে থাকতে হবে। দুই বছর সদস্যপদ পূর্ণ হলে পরে জেনারেল সদস্য হিসেবে উন্নীত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। সদস্য হতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, টিন এবং ব্যাংক একাউন্টের বয়স ন্যূনতম দুই বছর হতে হবে।
এবারের আসন্ন নির্বাচনে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা সদস্য হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যারা রিনিউ করে সকল তথ্যাদি এবং কাগজপত্র দিয়ে ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন। কারণ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪৯২ জন সদস্য হয়েছেন এবং ২৭ মার্চ ১৫০ এর অধিক সদস্য যা কারও কারও ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করার জন্য এবং অব্যবসায়ীই বেশি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
ভোটার হলেই প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন না, অবশ্যই বিগত বছরগুলোতে ই ক্যাবের বিভিন্ন কমিটিতে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে যাতে করে একজন প্রার্থী হিসেবের সকল কাজ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন।
বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে আমি একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ী এবং ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সকল সদস্যদের পক্ষে এবং স্বার্থে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা বিদ্বেষ তৈরি হওয়ার পূর্বেই সহায়ক কমিটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে ই ক্যাবের সেক্রেটারিয়েটকে অধিকতর শক্তিশালী এবং কার্যকর করে প্রশাসকের নেতৃত্বে ই-ক্যাব এবং ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য।
বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব, মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ, মহাপরিচালক ডিজিটাল সেল, ই-ক্যাব প্রশাসক, মহাপরিচালক ডিজিএফআই, মহাপরিচালক এনএসআই এবং ই-ক্যাবের সেক্রেটারিয়েটকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিবেন।
মতামত লেখকের নিজস্ব: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডটকম, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব