ই-ক্যাব এবং বর্তমান প্রেক্ষিতে কি করা উচিত
বর্তমান সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকেই বিভিন্নভাবে অনেক আলাপ আলোচনা করছেন বর্তমানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি আলোচনা ইতোমধ্যে হতে দেখেছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যে, বিষয়গুলো নিয়ে মূলত আলাপ-আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বর্তমান নির্বাহী পরিষদের (ইসি) পদত্যাগ, নতুন করে নির্বাচনের তফসিল, নতুন তফসিলের সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও সংশোধন।
এই সব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চিন্তা করতে হবে এই মুহূর্তে আমাদের সংগঠনের জন্য কোনটা ভালো, তারই পরিপেক্ষিতে আইনি ব্যাপার সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ই-ক্যাব এর বর্তমান প্রেক্ষিতে কি করা উচিত তা নিয়ে মতামত তুলে ধরেছেন কিনলে ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা…..
অ্যাসোসিয়েশন মূলত পরিচালিত হয় কোম্পানি আইন, ই-ক্যাব এর আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম এবং বাণিজ্য সংগঠন আইন এবং বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ এর নির্দেশিকা বা পরিপত্রগুলো অনুযায়ী।
ই-ক্যাব প্রসঙ্গ: (আইন ও বিধি)
সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে যাদের পদত্যাগের বিষয়ে কথা হচ্ছে পদত্যাগ সংক্রান্ত নির্দেশনা কি?
নির্বাহী পরিষদের (ইসি) এক তৃতীয়াংশ সদস্য পদত্যাগ করলে ইসি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। যদি এর বেশী সদস্য পদত্যাগ করে তাহলে বিধিসংক্রান্ত জটিলতা বা সাংবিধানিক শুণ্যতা দেখা দিবে
নির্বাহী পরিষদের (ইসি) মেয়াদ কত দিন এবং নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ বা কত দিন?
বর্তমান ২০২২-২৪ নির্বাহী পরিষদের (ইসি) বর্ধিত মেয়াদ আগামী ২ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত। আইন মোতাবেক এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে মেয়াদ পূর্তির ১৫ দিন আগে নির্বাচন দেয়ার। এর মধ্যে নির্বাচন না হলে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয় আসবে।
নির্বাচনী তফসিল যদি নতুন করা হয় তাহলে এই কমিটি বা নির্বাচন কমিশন কি তা করতে পারবে এবং কতটুকু মেয়াদের মধ্যে?
নির্বাচনের কোনো তারিখ পরিবর্তন করলে তার জন্য পূণ:তফসিল করা লাগবে। সেটি নির্বাচন কমিশন করতে পারবে। নির্বাহী পরিষদের নয়। আর যদি নির্বাচন ৮০ দিনের বেশী পেছায় তাহলে নতুন তফসিল করা যাবে। এবং নির্বাচন যদি ৯০ দিনের বেশী পেছায় তাহলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা যাবে। আবার বর্তমান নির্বাচন কমিশিনের অধীনেও নির্বাচন হতে পারবে। তবে নির্বাচন যদি নির্বাহী পরিষদের মেয়াদের পরে চলে যায় তাহলে নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ বাড়াতে হবে এটির বিকল্প নেই।
নতুন তফসিল, নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তিকরণ সহ নির্বাচন প্রক্রিয়া নতুনভাবে শুরু করতে আগামীতে কতদিন দরকার?
নতুন বোর্ড গঠন করতে হলে কমপক্ষে ৯০ দিন সময় দরকার। নতুন তফসিল ঘোষনা করতে হলে কমপক্ষে ৮০ দিন সময় দরকার হবে। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে সব কিছু নতুন করে করতে হবে। নির্বাচনের ১২০ দিন আগে যারা ভোটার হবে এবং যারা ৬০ দিন আগে নবায়ন ফি ও নথি জমা দিবে তারা ভোটার হতে পারবেন।
বর্তমার নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ বা নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ যদি বাড়াতেই হয় তাহলে সেটি কতদিন?
আগামী নির্বাচন যদি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে না হয় (মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৭ দিন আগে) মানে নির্বাচনের তারিখ পেছায় সেক্ষেত্রে নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে। নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ বৃদ্ধি নির্বাচন বোর্ড এর কাজ নয়। তা নির্বাহী পরিষদকে করতে হবে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হবে। সেই মেয়াদ কতদিন বাড়বে সেটা নির্ভর করছে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর। নির্বাহী পরিষদ থেকে কতদিন মেয়াদ চায় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কতদিন অনুমোদন করে। এসব বিষয়ের ওপর।
বর্তমান নির্বাহী পরিষদ যদি পুরোপুরিভাবে অবলুপ্ত বা পদত্যাগ করে তাহলেই বা করণীয় কি?
এটি সাংবিধানিক নির্বাহী পরিষদ। নির্বাহী পরিষদ বা নির্বাহী পরিষদের কোনো সদস্য নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে তাকে কেউ বহিষ্কার করতে পারবেন না। এমনকি সভাপতিও কাউকে বহিষ্কার করতে পারবেন না। যদি নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্তি হয় তাহলে সরকার একজন উপচসচিবকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। অথবা সাময়িক অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত করতে পারবে এমনকি লাইসেন্সও বাতিল করতে পারবে।
প্রশাসক নিয়োগে প্রক্রিয়া এবং প্রশাসকের ক্ষমতা, সময় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া কি হবে?
প্রশাসক এর কাজ হবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং ভোটার তালিকা করে নির্বাচন কমিশনের হাতে দেয়া। নির্বাচন কমিশন নিয়মানুসারে নির্বাচনী কর্মকান্ড সম্পন্ন করবে। এটি সব সময় একই নিয়ম। প্রশাসক আসলে মূল কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে নির্বাচন কাজ পরিচালিত হবে। প্রশাসক যতদিন ইচ্ছা চাইলে ততদিনই থাকতে পারবেন।
বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গেলে কি কি করা উচিত, যাদের বিষয়ে পদত্যাগ করার অনুরোধ এসেছে তাদেরকে পদত্যাগ বা প্রত্যাহার করে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়?
বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার কয়েকটি ওপায় রয়েছে।
প্রথমত: বর্তমান নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ না বাড়িয়ে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এক্ষেত্রে যারা নির্বাচনে আসতে চায়না বা যাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হচ্ছে তাদেরকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তারপর যথাসময়ে বাকী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিবে এবং নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
দ্বিতীয়ত: যদি কাউকে পদত্যাগ করতে হয়। তাহলে এক তৃতীয়াংশ সদস্য পদত্যাগ করলে কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। এর বেশী হলে সাংবিধানিক শুন্যতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রেও একইভাবে যারা নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে যেতে চায় তাদেরকে মনোনোয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ দিয়ে বাকীদের নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। এতে করে এই কমিটির মেয়াদ দ্রুত শেষ হবে এবং নতুনেরা এখানে জায়গা করে নিতে পারবে।
সবকিছু বিবেচনা করে আমার ব্যক্তিগত মতামত ই ক্যাব এর একজন সদস্য হিসাবে এই মুহূর্তে আমাদের জন্য কি করা ভালো, বর্তমান যে তফসিল আছে সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আমাদের যে ২৪ জন প্রার্থী আছে তাদের মধ্যে থেকে যারা পদত্যাগ করতে চান তারা হয়তো প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা পদত্যাগ করবেন, তার মধ্যে থেকে ১১ জনকে আপনাদের ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে, এই তফসিলেই যদি দ্রুত নির্বাচন হয়ে যায় তাহলে আমরা দ্রুত একটা নির্বাহী পরিষদ (ইসি) পাব আর আমাদের এই নতুন সরকারের সঙ্গে শুরু থেকেই কাজ করার সুযোগ পাবো।
কিন্তু যদি আমরা নতুন তফসিলের কথা চিন্তা করি, নতুন তফসিলের সঙ্গে ভোটার হালনাগাদ করার চিন্তা করি অথবা বর্তমান ইসি যদি বর্ধিত সময় পায়, অথবা কোন প্রশাসক এসে বসে তাহলে আগামী ৬ মাস এক বছরেও অথবা প্রশাসকের যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারবেন এবং ততদিন ই-ক্যাব অথবা ই-কমার্সের উন্নয়নমূলক কাজ হবে না। কারণ বর্তমান নির্বাহী পরিষদ (ইসি) বিগত ১০ বছরেও সদস্য বান্ধব হতে পারেনি। প্রশাসক কখনোই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করবে না তাই এই মুহূর্তে আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন করা এবং ১১ জনকে বেছে নেয়া যারা শুরু থেকে এই পরিবর্তিত সরকারের সঙ্গে বসে ই-কমার্সের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে পারবেন।