প্রতিবেদন

ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম ও বর্তমান ধীরগতি

খুব ছোট আকারে বেসরকারি খাতের উদ্যোগে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রতিষ্ঠার আগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। অনেক উত্থান পতন এবং সমস্যার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ডিজিটাল খাতে ভূমিকা রাখা শুরু করে। ভিস্যাট ইন্টারনেট থেকে সাবমেরিন এবং দেশের ভিতরে ফাইবার ইন্টারনেটের বিনিয়োগ হতে থাকে।

ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রোভাইডার লাইসেন্সের সুবাদে দুটি প্রতিষ্ঠান একটু বড় আকারের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করলেও ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব বিনিয়োগে ফাইবার নেটওর্য়াক স্থাপন করে। নিম্ন থেকে উচ্চমানের সরঞ্জামগুলোতে খরচের তারতম্য অনেক বেশি, ফলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা অনু্যায়ী সরঞ্জামে বিনিয়োগ করে।

ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান
সহসভাপতি (ফাইন্যান্স), বেসিস

নিতান্ত ভালো ব্যবস্থাপনা বা বেশি বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম ও সফটওয়্যার নিম্নমানের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ার কারনে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়। উল্লেখ্য, ওভারহেড ক্যাবলের ব্যবহারও ইন্টারনেট ইকোসিস্টেমের জন্য ভালো নয়।

ফায়ারওয়াল
ব্যাংক, টেলিকম বা বড় করর্পোরেট ছাড়া কারও জন্যই ফায়ারওয়াল ব্যবহারের প্রয়োজন তেমন একটা পড়ে না। এর ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট খাতে ফায়ারওয়াল ব্যবহারের গুরুত্ব তৈরী হওয়ার সময় সুদীর্ঘ নয়। ইন্টারনেট ও কন্টেন্ট কন্ট্রোলের জন্য বিভিন্ন রকমের ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হয়। যেমন- মেইল ফায়ারওয়াল, কন্টেন্ট ফায়ারওয়াল ও নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়াল। সমস্যা হলো, খুবই শক্তিশালী ফায়ারওয়াল বা অনেক বেশি থ্রুপুট এর না হলে আইএসপির পুরো নেটওয়ার্ক স্লো হয়ে যায়। কারন ফায়ারওয়াল এর মধ্যে দিয়ে সব ডাটা যেতে আসতে থাকে।

কন্টেন্ট ক্যাশিং
লোকাল আইএসপিগুলো বিভিন্ন সিডিএন বা অ্যাপ্লিকেশনের ডাটা ক্যাশ সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ক্যাশ করে রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার হয় না। ডাটাগুলা প্রয়োজন অনুযায়ী লোকাল সার্ভার থেকে সার্ভ হয়। যেমন আপনি একটা মুভি ইন্টারনেটে প্রথমবার দেখলেন, সেটি ইন্টারনেট থেকে ক্যাশ সার্ভারে আসবে- সেটা আমি দেখতে গেলে আর ইন্টারনেট ব্যবহার হবেনা, ক্যাশ সার্ভার থেকে আমাকে দেখাবে।

ক্যাশিং সার্ভারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক- যদি রেগুলার আপডেট না হয়, তাহলে ক্যাশ এর ডাটা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে। ইন্টারনেট ব্যাহত হওয়ার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাশ ক্লিয়ার হয়ে যায় যেগুলো এখন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি আসার ফলে আবার ক্যাশিং হচ্ছে এবং সেখানে ইন্টারনেট লোড এর পরিমান বেশি হচ্ছে।

কনটেন্ট মনিটরিং
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের লগ মনিটরিংয়ের একটা ব্যবস্থাপনা সব আইএসপিতে আছে। সেখান থেকে ব্যবহারকারি কোন কোন সাইট, অ্যাপ্লিকেশন এবং নেটওয়ার্ক এক্সেস করে সেটার তথ্য পাওয়া যায়। কনটেন্ট এর ডিটেইল মনিটরিং করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না কারন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কন্টেন্ট অ্যাপ্লিকেশনে এনক্রিপ্টভাবে সার্ভ করা হয়। যেমন- ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ।

এই ক্ষেত্রে মনিটরিং করতে অ্যাপ্লিকেশন প্রোভাইডারের সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। অ্যাপ্লিকেশন প্রোভাইডার যদি অন্য দেশের হয় সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশীপে সেটা চাওয়া যেতে পারে। একান্ত ডিপ্লোমেটিক প্রক্রিয়ায় সেটা পাওয়া না গেলে যেকোন দেশ তার লোকাল পলিসি দিয়ে মেইনস্ট্রিম ফায়ারওয়ালগুলোতে ওই অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। ফেসবুক আর ইউটিউব বন্ধ ব্যাপারটা ঠিক এরকমই। কিন্তু এগুলোর গুরুত্ব বিজনেসে বেশি হওয়ার কারনে এগুলোকে কোথাও বন্ধ করা হয় না।

ইন্টারনেট কন্ট্রোল
পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যারা ইন্টারনেট পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে পারে নিজের দেশের জন্য, চীন – সম্ভবত একমাত্র দেশ যারা যুগ যুগ ধরে বিনিয়োগ করে অন্য দেশের অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার কমিয়ে এনেছে, বা একটা পর্যায়ে কন্ট্রোল করতে পারছে। কারন তারা নিজেদের টেকনোলোজিকে যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছে। খুবই সহজ বা দ্রুততার সঙ্গে অন্যদের এই কাজটি করার সুযোগ নেই।

নিক্স (NIX) এর সক্ষমতা
বাংলাদেশে বর্তমানে ৯টি নিক্স (NIX) আছে, তার মধ্যে বিডিআইএক্স (BDIX) জনপ্রিয়। আমাদের দেশের ভিতরে ডাটা ট্রান্সফারের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে, এই প্রেক্ষিতে নিক্স নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি নিয়মিতহারে বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী।

কর্পোরেট ভার্সেস রিটেইল ইন্টারনেট
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হোম ইউজারের কাছে ইন্টারনেট পৌছায় মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশে হোম ইন্টারনেটে ফাইবার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা ইউজারের সংখ্যা কম না। বেশিরভাগ আইএসপি রিটেইল এবং কর্পোরেট একসঙ্গে দুটো সার্ভিস দিয়ে থাকে। রিটেইলের ক্ষেত্রে শেয়ারড এবং কর্পোরেটের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড চ্যানেল দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে যেসব আইএসপির ভালো ডিজাইন এবং বিনিয়োগ নেই, তারা কর্পোরেট ও রিটেইলে একই রাউটার পয়েন্ট থেকে সার্ভ করে।

যার ফলে ইন্টারনেট ফ্লাকচুয়েট করে এবং কর্পোরেট ভালো সার্ভিস পায় না। কর্পোরেটের ক্ষেত্রে ভালো ইন্টারনেট মানে আপলিংক ও ডাউনলিংকের ডেডিকেটেড চ্যানেল/ব্যান্ডউইডথ বরাদ্দ করাকে বুঝায়। বিদেশী মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে খুবই কম ভোগান্তির শিকার হয়, কারন তারা বাংলাদেশের অফিস থেকে ইন্টারন্যাশনাল অফিস পর্যন্ত ডেডিকেটেড প্রাইভেট চ্যানেল ব্যবহার করে।

বর্তমান সমাধান
আপনার বর্তমান আইএসপির সঙ্গে কথা বলুন, ডেডিকেটেড চ্যানেল কনফার্ম করুন অথবা ব্যান্ডউইডথ বাড়িয়ে নিন। ক্যাশ সার্ভার আপডেট হচ্ছে কিনা সেটা জানুন, ফায়ারওয়াল ব্যবহার থাকলে সেটার ক্যাপাসিটি ভালো কিনা সেটা জেনে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি নিন। ব্যাবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই রিডান্ডেন্ট কানেক্টিভিটি থাকা জরুরী।

লেখক: ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান- সহসভাপতি (ফাইন্যান্স) বেসিস এবং প্রতিষ্ঠাতা ডিভাইন আইটি লিমিটেড

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *