ইন্টারনেটের জগতে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি
ক.বি.ডেস্ক: বর্তমান আইসিটির এই যুগে ইন্টারনেটের বিশাল জগতে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রযুক্তি সর্ম্পকে অন্ধকারে না রেখে ছোটবেলা থেকে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের প্রযুক্তির ক্ষতিকর বিষয়সমূহ সর্ম্পকে সচেতন করতে হবে।
গতকাল সোমবার (২২ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসি’র সহায়তায় সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ (সিসিমপুর) আয়োজিত শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধের ধরণও বদলেছে। সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে সচেতনতামুলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আগামী দিন সারা পৃথিবী প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই শিশু-কিশোরদের সাইবার জগত সর্ম্পকে জানার পথকে অবরুদ্ধ না রেখে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের পথ খোলা রাখতে হবে। সচেতন না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, ইন্টারনেটের খারাপ প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অভিবাবকদের সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের অভিবাবক বিশেষ করে মায়েদের সচেতন করা জরুরি।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম। সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনা করেন সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ডিরেক্টর আবু সাইফ আনসারী।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে. জেনা. মো. নাসিম পারভেজ, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী।
কর্মশালায় ইন্টারনেটে বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের উদ্যোগে গবেষণাটি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কনটেন্ট নেই বললেই চলে, ফলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানহীন, ঝূকিপূর্ণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট দেখে। শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে তাদের জন্য উপযোগী শিক্ষণীয় ও মানসম্পন্ন কনটেন্ট বাড়ানোর বিষয়টি জোর দেয়া হয় গবেষণায়।
শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসিতে সাইবার সিকিউরিটি সেল চালু করা হয়েছে। এই সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইবার অপরাধে শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা হয়। ভুক্তভোগী অধিকাংশ নারী-শিশু লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করে না। আইএসপি অপারেটরসমূহ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের সময় অভিবাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইনস প্রদান করলে সচেতনতা বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারলে তা ফলপ্রসু হবে বলেও মনে করেন তিনি।
মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সাইবার জগতের বিশাল পরিসরে শিশুদের নিরাপদ রাখতে অভিবাবকদের সচেতন করতে হবে। সেইফ ইন্টারনেট ফর আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিমপুর সেই কাজটি করছে।
মো. নাসিম পারভেজ বলেন, বিটিআরসি নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে কাজ করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে বিটিআরসি যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে এবং প্রতি তিনমাস পর পর উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সভা আহবানের মাধ্যমে সাইবার জগতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, শিশুদের মানসিক উন্নয়ন ও সচেতন করতে পারিবারিক বন্ধন সূদৃঢ় করা জরুরি। শিশুরা ক্রমশ ইন্টারজগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে বিটিআরসি ওটিটি গাইডলাইনস প্রণয়নে কাজ করছে। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যদ গড়ার দায় আমাদের সকলের ওপর, শিশুরা যাতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আসক্ত না থেকে প্রকৃতি ও গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।