স্বাক্ষাতকার

আহমেদ হাসান জুয়েল: আইটি ব্যবসায় সংগঠক-প্রজন্মের স্থপতি

শামীমা আক্তার: বাংলাদেশের আইটি খাতে তিন যুগেররও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন- তিনি হলেন সবার প্রিয় আহমেদ হাসান জুয়েল। তিনি শুধু একজন সফল কমপিউটার ব্যবসায়ী নন; তিনি প্রযুক্তি ও সততাকে জীবনের আর পেশার মূলভিত্তি বানিয়েছেন।

দেশের আইটি শিল্পের উন্নয়নে তার অবদান অসামান্য উজ্জ্বলতম। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং বিসিএস কমপিউটার সিটি (আইডিবি ভবন, আগারগাঁও) এর অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ও উন্নয়ন নির্দেশক। তার নেতৃত্বে এসব সংগঠন পেয়েছে বাস্তবভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতিনির্ভর দিকনির্দেশনা এবং সর্বোপরি সম্মানজনক অবস্থান। এজন্য তাকে বলা হয় “আইটি ব্যবসায় সংগঠক-প্রজন্মের স্থপতি।”

বয়স প্রায় ষাটের (৫৯) কাছাকাছি হলেও আহমেদ হাসান জুয়েল এখনও মননে ও শরীরে ঝকঝকে তরুণ। তার হাসি, উষ্ণতা, রসবোধ, আড্ডায় প্রানোচ্ছলতা সব মিলিয়ে তিনি সবার প্রিয় জুয়েল ভাই। তিনি বলেন, “বয়স বাড়ে, কিন্তু আগ্রহ কমে না- এইটাই জীবনের আসল আনন্দ।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিবারসহ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ছোট্ট সেই ৫ বছর বয়সেও তিনি ছিলেন এক মুক্তিকামী সাহসী শিশু মুক্তিযোদ্ধা। আজীবন তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং সেই চেতনা বহন করেন নিজের কাজ, চিন্তা ও জীবনকে তৈরী করেছেন আকাশচুম্বী সাফল্যে। এই জীবনাদর্শন প্রতিফলিত হয়েছে তার রাজনৈতিক মননেও।

আহমেদ হাসান জুয়েল

৯০-এর দশকের শুরুতে, যখন বাংলাদেশে ‘কমপিউটার ব্যবসা’ ছিল একেবারে নতুন ধারণা, তখনই আহমেদ হাসান জুয়েল সেই অজানা আলোর হাতছানিকে আলোকিত করার দুরূহ পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যান।
প্রায় তিন যুগ ধরে তার নেতৃত্বেই এই খাত পেয়েছে নতুন রূপ, নতুন গতি, নতুন সম্ভাবনা। তিনি শুধু ব্যবসা করেননি- একটি শিল্পকে দাঁড় করিয়েছেন সফল সংগঠক হিসেবে। তার উদ্ভাবনী চিন্তা, সাহসী সিদ্ধান্ত এবং নিরলস পরিশ্রমে বাংলাদেশের আইটি শিল্প আজ এক উজ্জ্বল স্থান দখল করেছে।

ডিজিটাল যুগের অনেক আগেই তিনি বুঝে ছিলেন ইন্টারনেটই ভবিষ্যৎ। ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে তিনি নিজ উদ্যোগে অনলাইনে খবর ভিত্তিক বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। যা সে সময় ছিল এক অনুকরনীয় অনন্য উদ্যোগ। তখন দেশে হাতে গোনা কয়েকজনই ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন। আর তিনি ছিলেন তাদের সঙ্গে সামনের সারিতেই।

আহমেদ হাসান জুয়েল আইটি ব্যবসাকে করেছেন মানবিক। তিনি বিশ্বাস করেন- “প্রযুক্তি তখনই সফল, যখন তা মানুষের জীবন সহজ ও উন্নত করে।” তাই তিনি ব্যবসার প্রতিটি ধাপে প্রযুক্তি ও মানবিকতার সেতুবন্ধন ঘটিয়েছেন।

তিনি একজন প্রচন্ড রাজনীতি সচেতন ব্যাক্তি। দেশের রাজনীতির প্রতিটি উত্থান পতনে তিনি প্রবল সচেতন, আন্দোলিত হন বারবার। আবার বিশ্ব রাজনীতির আনাচে কোনাচে প্রতিক্ষন রয়েছে তার ঈগলেরর মত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। “দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি স্থিতিশীল ও কলংকহীন রাজনীতি” মনে করেন তিনি।

তিনি কেবল ব্যবসায়ী নন একজন সংস্কৃতি সেবক ও সংস্কৃতিপ্রেমীর জীবনাদর্শনও। গান শোনা, বই পড়া, মুভি দেখা, ফটোগ্রাফি, দেশ-বিদেশে ভ্রমণ সবই তার জীবনের অচ্ছেদ্য আনন্দময় অংশ। নতুন কিছু জানতে, ভালো কিছু পড়তে বা গুণীজনদের সান্নিধ্যে থাকতে তিনি সবসময় উদগ্রীব। সংস্কৃতির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে দিয়েছে এক গভীর মননশীল মানবিকতা।

রায়ান্স অর্কেস্ট্রায় গান শোনার পর মা ও অন্যান্যদের সঙ্গে আহমেদ হাসান জুয়েল

আহমেদ হাসান জুয়েল নীতিবোধে সমুজ্জ্বল ব্যাক্তিক্তপরায়ন, সঙ্গে মানবিক নেতা। আলোচনায় তিনি যুক্তিনির্ভর, মতভেদে বিনয়ী। তার দৃষ্টিতে, “সফলতা মানে কেবল অর্জন নয় এটা পরিশ্রম, সততা, যুক্তি আর মানবিকতার সংমিশ্রণ।”

এক মাত্র ছেলে রায়ান ব্যাবসায়ে আগ্রহী হচ্ছে

অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও গড়ে তুলেছেন দেশের অন্যতম সফল আইসিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ‘রায়ান্স আইটি লি.’, ‘রায়ান্স কমপিউটার’, ‘রায়ান্স আর্কাইভ’, ‘দি হোম’। তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তি শুধু যন্ত্র নয়, বরং কাজের সংস্কৃতি। তিনি নিজে অফিসে যতটুকু সময় কাজ করেন, সহকর্মীদের শেখান, নিজে শেখেন এবং বুদ্ধি, পরামর্শ আর দিক নির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন, আদেশ দিয়ে নয়। তার টিম তার সম্পর্কে বলে,“তিনি আমাদের বস নন, তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা।”

আহমেদ হাসান জুয়েলের ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও লক্ষ্য- বাংলাদেশে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমাহার ও ব্যাবহারের মাধ্যমে এদেশেকে প্রজুক্তিপ্রেমীদের স্মার্ট ও নতুন বিশ্বের যোগ্যতম সুনাগরিকে পরিণত করা। তিনি চান, আগামী প্রজন্ম যেন প্রযুক্তিকে কেবল ব্যবহারের বস্তু না ভেবে, সৃষ্টিশীলতার হাতিয়ার হিসেবে দেখে। তার মতে, “প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের রাস্তাটা সহজ করে দিতে পারে, যদি আমরা সেটা মানবিকভাবে ব্যবহার করি।”

ভাই বোনদের সঙ্গে আহমেদ হাসান জুয়েল

তিনি যেমন ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে উপলব্ধী করতে জানেন, তেমনি মানুষের হৃদয়কেও স্পর্শ করতে জানেন। সবার জন্য তার অমোঘ এক বার্তা “স্বপ্ন দেখো, পরিশ্রম করো, আর মানুষ হিসেবে বড় হও, তবেই সফলতা তোমার হবে।”

আহমেদ হাসান জুয়েল একজন সফল উদ্যোক্তা, প্রেরণাদায়ী সংগঠক, সংস্কৃতিবান মানবিক মানুষ এবং আইটি শিল্পের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি মা, স্ত্রী ও এক মাত্র ছেলে রায়ানকে নিয়ে সুখ ও শান্তির এক আনন্দময় জীবন যাপন করছেন।

গত ৪ অক্টোবর এই সফল উদ্দ্যোমী মানুষটার ৫৯ তম শুভ জন্মদিন। আসুন সবাই তাকে জন্মদিনে ৩ বার টুপি খোলা অভিনন্দন জানাই। থ্রী চিয়ার্স ফর আহমেদ হাসান জুয়েল,
হিপ হিপ হুররে, হিপ হিপ হুররে, হিপ হিপ হুররে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *