আগামীর ই-ক্যাব নিয়ে প্রত্যাশা
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সরকার অনুমোদিত একমাত্র বাণিজ্যিক সংগঠন। ই-ক্যাব ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৫ সাল সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পায়। এই সংগঠনের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে জড়িত এবং ভালো মন্দের মাঝে এর বেড়ে ওঠা দেখে খারাপের মধ্যেও একটা ভালো লাগে কাজ করে।
অনেকে জানতে চান ই-ক্যাব এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। এটি এমন একটা বিষয়, যেকোনো বিষয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় এটি নিয়ে কথা বলা যায়। কোনো বিষয় ঠিক করতে না পারলে বিষয় ঠিক করার সহজ উপায় ই-ক্যাব এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। আগামীর ই-ক্যাব নিয়ে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন ই-ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কিনলে ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)…….
ই-ক্যাব’কে ই-কমার্স খাতের অভিভাবক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যেন সরকার এবং অংশীজনেরা বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের যেকোন বিষয়ে ই-ক্যাব’কে গুরুত্ব সহকারে প্রাধান্য দেয়।
ই-ক্যাব’র অবদানের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতকে একটি শিল্প খাত হিসাবে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া। ট্রেড লাইসেন্সে ক্যাটাগরি হিসাবে ই-কমার্সের অন্তর্ভুক্তি করা। ই-ক্যাব’কে পরিপূর্ণভাবে একটি সদস্য বান্ধব সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা।
ই-ক্যাব’র সকল কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণভাবে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চয়তার পাশাপাশি পরিপূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
পর পর দুইবারের বেশি যেন কেউ নির্বাচন করতে না পারে তার জন্য আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম সংশোধন করতে হবে। সকল সদস্যরা যেন সকল তথ্য জানার অধিকার পায়, নির্বাহী পরিষদের মিটিং মিনিটস, আর্থিক লেনদেন বা কর্মকান্ডসহ যে কোন বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার নিশ্চয়তা করতে হবে।
আগামীর ই-ক্যাব’র স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানগুলোতে সে বিষয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্ট্যান্ডিং কমিটি কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবনা বা পরিকল্পনাগুলো সকল সদস্যকে জানানোর নিশ্চয়তা করতে হবে।
এই খাতের বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাহী পরিষদকে পরামর্শ দেয়ার জন্য এই খাত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অ্যাডভাইজারি প্যানেল করতে হবে। এই অ্যাডভাইজারি প্যানেল নির্বাহী পরিষদকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন।
পরিপূর্ণভাবে স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন সেক্রেটারিয়েট গড়ে তুলতে হবে। ই-ক্যাব’র সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে তিন থেকে চার বছরের পুরনো ট্রেড লাইসেন্স সঙ্গে অন্যান্য ডকুমেন্টস টিন, বিন এবং ব্যাংক একাউন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ই-ক্যাব’র সদস্যদেরকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভাজন করা যেতে পারে। জেনারেল মেম্বার, অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, এফিলিয়েটেড মেম্বার এবং সে অনুযায়ী আনুপাতিক হারে নির্বাহী পরিষদের প্রতিনিধিত্ব চাই করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসিসকে ফলো করা যেতে পারে।
ই-ক্যাব’র উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা, সহ প্রতিষ্ঠাতা সঙ্গে প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্যদের সম্মানিত করতে হবে। ই-ক্যাব’র কাজের অগ্রগতি সম্বলিত নিউজ লেটার প্রকাশ করতে হবে। তা হতে পারে তিন মাস অন্তর বছরে চারটি নিউজ লেটার।
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা, তথ্য এবং উপাত্তের জন্য একটা রিসার্চ উইং করতে হবে। সদস্যদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধির জন্য কোম্পানি ক্যাটাগরি বা ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সদস্যদেরকে আলাদা করতে হবে।
এসএমই এবং স্টার্টআপ মডেলের কোম্পানিগুলোকে মেন্টরিং করার জন্য প্রতিষ্ঠিত সদস্য কোম্পানিদের নিয়ে ইনকিউবেটর সেন্টার করতে হবে।
ই-ক্যাব’র আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম সংশোধন করে যুগপোযোগী করতে হবে। যেকোনো ধরনের পলিসি মেকিংয়ের ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিষদের বাহিরে সাধারণ সদস্যদের সম্পৃক্ততা আরও বেশি বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ই-ক্যাব’র সদস্যদের জন্য, সহজ শর্তে লোন অথবা প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করা। চিরাচরিত অফলাইন ব্যবসার মতো ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অনেক সময় মেশিনারি, স্টাবলিশমেন্ট অনেক সময় থাকে না। এদের থাকে টেকনোলজি, গুড উইল, কাস্টমার ডাটা, কুরিয়ার ডাটা, ফেসবুক লাইক বা রিচ অথবা ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা। এগুলো বিবেচনা করেই লোনের ব্যবস্থা করা।
সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সবার সেলস, ব্যবসায়ের গ্রোথ এবং কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। ফেসবুক অ্যাড এর ক্ষেত্রে অ্যাড লিমিট প্রত্যেকটি ই-কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য বাৎসরিক মিনিমাম ত্রিশ হাজার ডলার করে দেয়া উচিত।
পৃথিবীর প্রায় অন্যান্য দেশে যেখানে ই-কমার্স গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেখানেই ই-কমার্স ক্যাশলেস হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হয়। কিন্তু ক্যাশলেস করার জন্য বাংলাদেশের এমএসএস কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন বেশি করাতে হলে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এমএমএস কোম্পানির সার্ভিস চার্জ ০.৫ টাকাতে নামিয়ে আনা এবং পেমেন্ট গেটওয়ের চার্জও ০.৬ টাকার মধ্যেই রাখার ব্যবস্থা করা। এটির ইফেক্ট আল্টিমেটলি কাস্টমার পাবে প্রাইস কমে যাবে।
দেশীয় পণ্য দেশের বাইরে প্রচার-প্রসারের জন্য ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত, সেক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ ভ্যাট ট্যাক্স এর বিষয়গুলোকে ক্রস বর্ডারের জন্য শিথিল করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল পোস্টাল সার্ভিসকে আরও বেশি যুগোপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য করে ক্রস বর্ডারকে উৎসাহিত করা উচিত।
আমি স্বপ্ন দেখি, আগামী দিনগুলোতে ই-ক্যাব’র গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। ই-কমাসের্র একমাত্র বাণিজ্যিক সংগঠন হিসাবে ই-ক্যাব এই খাতে প্রতিনিধিত্ব করে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যেখানে বাংলাদেশের জিডিপিতে ই-কমার্সের কন্ট্রিবিউশন থাকবে।
লেখক: মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)- প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ই-ক্যাব ও প্রতিষ্ঠাতা কিনলে ডট কম