আইসিটি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি
ক.বি.ডেস্ক: আইসিটি খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারিখাতসহ সকল অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি। এ খাতের বিকাশে পণ্যেও মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা অতীব জরুরী। সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউস রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।
গতকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান। সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিস পরিচালক ও বন্ডস্টেইন টেকনোলোজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম।
আলোচক ছিলেন বেসিস-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলালিংক-এর চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। এ সময় ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সরকারি-বেসরকারি খাতের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “বিদ্যমান নীতিমালাসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে, নাগরিক সেবার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও সহজতর হবে এবং বর্তমান সরকার এ বিষয়টিকে অধিক হারে প্রাধান্য দিচ্ছে। সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কখনই যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, রপ্তানি পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য তথ্যে বেশ অসংঙ্গতি ছিল, যা নিরসনে বর্তমান সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “আমাদের তৈরি পোষাক শিল্পের পর আইসিটি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে বিশেষ করে তরুন জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়াগ সম্প্রসারণ সম্ভব। দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বিডা’র কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
মোহাম্মদ জাকির হাসান বলেন, “দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এখনও আশানুরূপ নয়, যেখানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।”
আশরাফ আহমেদ বলেন, “আইসিটি পরিষেবা, সফটওয়্যার এবং যন্ত্রপাতিসহ আইসিটির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে বিশ্বের আইসিটি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্তেও আমাদের আয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এখাতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চতর মূল্য সংযোজন পরিষেবা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করাসহ সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালুচেইনে উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারিত করতে হবে। উদীয়মান আইওটি বাজারের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সুযোগগুলো অনুসরণ করতে হবে।”
মীর শাহরুখ ইসলাম বলেন, “বর্তমানে ৪৫০টি বাংলাদেশি কোম্পানী তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। সফ্টওয়্যার পরিষেবার সীমিত সুযোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিভাইস উৎপাদন ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ থেকে আইসিটি পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, রপ্তানি বাড়াতে স্থানীয় আইসিটি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়া এবং আইসিটি পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আইসিটি উদ্যোক্তারা সহায়ক নীতির অভাব এবং ঋণ প্রাপ্তিতে কঠোর জামানত প্রক্রিয়া মুখোমুখি হচ্ছে।”
সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, “ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণে কর প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। টেকসই ও সবুজ আইসিটি ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক সভরেন ক্রেডিট গ্যারিন্টি স্কীম চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়াও মেধাসত্ত আইনের কার্যকর প্রয়োগের ওপর জোরারোপ করেন।”
তাইমুর রহমান বলেন, “আইসিটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। বিশেষকরে টেলিকম অ্যাক্ট-এর সংস্কার করা প্রয়োজন।”
মো. লিয়াকত আলী বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে দেশে এফডিআই আকৃষ্ট করতে পারছি না। আইটি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কার প্রয়োজন। সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউস রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।”