আইসিটিতে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে ‘বেসিস আমেরিকা ডেস্ক’ চালু
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারকরণ, ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা জোরদার করতে ‘বেসিস আমেরিকা ডেস্ক’ গঠন করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার কোম্পানীগুলো একটি ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং পরিষেবাগুলোর জন্য সবথেকে বড় রপ্তানি গন্তব্য, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২৭ শতাংশ। বেসিস-আমেরিকা ডেস্ক একটি নিবেদিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যা আমেরিকান কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে সর্বশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রদর্শন, সেমিনার ও বি২বি এর মাধ্যমে তথ্য বিনিময়, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং কর্মশালার আয়োজন করে বেসিস সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জ্ঞান বিনিময়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
গত রবিবার (১৪ জুলাই) ঢাকার একটি হোটেলে ‘বেসিস আমেরিকা ডেস্ক’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন (অনলাইনে সংযুক্ত) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সভাপতিত্ব করেন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিসের পরিচালক এম আসিফ রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ইকোনোমিক অফিসার জেমস গার্ডিনার সহ বেসিসের সাবেক সভাপতিবৃন্দ, বেসিস কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বেসিস সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
সালমান এফ রহমান বলেন, “বেসিস আমেরিকা ডেস্ক বাংলাদেশী এবং আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, আইওটি এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলোতে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে রফতানি বাড়ানোর জন্য সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। সেবা রফতানি খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাই মান দিয়েই টিকে থাকতে হবে।”
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “বেসিস আমেরিকা ডেস্কের যাত্রা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শক্তিশালী করতে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে, বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে একটি পারস্পরিক ব্যবসায়িক শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হবে।”
পিটার ডি. হাস বলেন, “বেসিস আমেরিকা ডেস্ক আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের একটি মাইলফলক। বদ্ধ বাজার থেকে উন্মুক্ত বাজার বেশি ভালো। পোশাক ও সফটওয়্যার রফতানির এআই এর দক্ষ ব্যবহার করতে পারে বাংলাদেশ। তবে এ জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এআই সলিউশন দিয়ে তারা তাদের ব্যবসায় বাড়াতে পারে। এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাজারকে আরও সমৃদ্ধ করবে পাশাপাশি দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারকরণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা জোরদার করতে অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা রাখবে।”
রাসেল টি আহমেদ বলেন, “বেসিস আমেরিকা ডেস্কের মাধ্যমে, আমরা আগামী ৫-৬ বছরে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আইটি সেবা রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন রপ্তানি আয় করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে, বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোকে মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয় বরং এর মাধ্যমে বেসিস সদস্যদের জন্য তথা বাংলাদেশী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এখন মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান প্রয়োজন। এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী আইটি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।”
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, “বেসিস আমেরিকা ডেস্কের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা এবং প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি বৃদ্ধিকরণ। একটি স্মার্ট অর্থনীতি গড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে গ্লোবাল আইটি হাব হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করা।”