আইএসপি গাইডলাইনের সংস্কার এখন সময়ের দাবী: আইএসপিএবি
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর ‘‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি ২০২৫’’-এর খসড়া নির্দেশিকা দেশের ইন্টারনেট খাতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এই খসড়াকে ‘দেশীয় উদ্যোক্তার স্বার্থবিরোধী’ ও ‘অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাজনক সূচনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই নীতি কার্যকর হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে আইএসপিএবি।
আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালির রাওয়া ক্নাবে অনুষ্ঠিত ‘টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইনে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি ও দেশীয় উদ্যোক্তা সুরক্ষাহীনতার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ আমরা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করছে আইএসপিএবি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইএসপিএবি সভাপিত মো. আমিনুল হাকিম। সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন আইএসপিএবি’র মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম-মহাসচিব-১ মো. মাহবুব আলম রাজু, যুগ্ম-মহাসচিব-২ ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন; কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ, ৬ জন পরিচালক- রাশেদুর রহমান রাজন, মো. মিঠু হাওলাদার, সাব্বির আহমেদ, রাইসুল ইসলাম তুহিন, মো. জুবায়ের ইসলাম এবং এ এস এম সাইফুল ইসলাম সেলিম।
প্রস্তাবিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি ২০২৫’-এর খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী ফিক্সড ইন্টারনেট এর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিটিআরসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওপর নতুন করে রেভিনিউ শেয়ারিং, উচ্চ লাইসেন্স ফি আরোপ সরাসরি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের মূল্য বাড়াবে। এটি শুধু সাধারণ মানুষের পক্ষেই ক্ষতিকর নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল লাইফস্টাইল এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইনে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ঢাকায় ১১ শতাংশ এবং গ্রামে-গঞ্জে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়বে। টেলিকম খাতের মতো এই খাতেও ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা তহবিলে জমা এবং টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে এফডব্লিউ ও হটস্পট সুবিধা দেয়ায় এই খাতের ২৭০০ দেশীয় উদ্যোক্তা ঝুঁকিতে পড়বে। নতুন এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে গ্রাহক পর্যায়ে গড় ইন্টারনেট মূল্য বাড়বে ২০ শতাংশ আর ব্যবসায়ী পর্যায়ে বাড়বে ১৪ শতাংশ।
অ্যাকুইজেশনে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে লাইসেন্সে আড়াই গুণ এবং বার্ষিক ফি সাড়ে তিন গুণ বাড়ছে। অন্যদিকে স্টারলিংকের অ্যাকুইজেশন ফি ১২ লাখ টাকা হলেও দেশীয় আইএসপিদের জন্য ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ভুল পথে এগুচ্ছে। লাইসেন্স গাইডলাইনে জন আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। সমাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় এলেও তাদের মুনাফা নয় আয়ের ওপর রেভিনিউ ও এসওএফ ফান্ড চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আইএসপি গাইডলাইনের সংস্কার চায় আইএসপিএবি। এই সংস্কারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা আরও সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং সবার জন্য সহজ হবে বলে মনে করছে আইএসপিএবি।

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি’র দাবি-দাওয়া ও কয়েকটি প্রস্তাবনা-
আইএসপিএবি’র দাবি, গাইডলাইন সংস্কার করে এই খরচগুলো কমানোর ব্যবস্থা নেয়া হোক, যাতে সেবার মূল্য স্থিতিশীল থাকে এবং গ্রাহকরা আরও সুবিধা প্রাপ্ত হন।
সিএমএসপি সংশোধন: সেলুলার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএমএসপি) গাইডলাইন থেকে ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস (এফডব্লিউএ) যেমন- জিপিফাই, রবি-ওয়াইফাই, বাংলালিংক ওয়াই-ফাই এবং হটস্পট কানেক্টিভিটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি বাতিল করা। নীতিমালা অনুযায়ী, এই ফিচারগুলো শুধু এফটিএস-এর আওতায় থাকা উচিত।
(সিএমএসপি খসড়া গাইডলাইন, রেফারেন্স ক্লজ-7.09 (IX), 7.09 (XIV)
ফাইবার কানেক্টিভিটি ডেপ্লয়মেন্ট: সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে হোম/অফিস/ইনডোর প্রাঙ্গনে ফাইবার কানেক্টিভিটি ডেপ্লয় করার অনুমতি বাতিলের দাবি।
(সিএমএসপি খসড়া গাইডলাইন, রেফারেন্স ক্লজ 7.10, 12.01.13 & 2.02.02)
ওয়াইফাই/আইএসএম ব্যান্ড ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা: সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে সার্ভিস ডেলিভারির জন্য আইএসএম/ওয়াইফাই ব্যান্ড-এর বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি।
(সিএমএসপি খসড়া গাইডলাইন, রেফারেন্স ক্লজ-31.04)
অবকামো শেয়ারিং বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা: বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এফটিএসপি-এর জন্য অ্যাক্টিভ অবকাঠামো শেয়ারিং সংক্রান্ত গাইডলাইন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
(রেফারেন্স ক্লজ-13.6.6, 14.11)
এফটিএসপি রেভিনিউ শেয়ারিং ও লাইসেন্স ফি পুনর্বিবেচনা: এফটিএসপি গাইডলাইন থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং ও ১ শতাংশ সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) এবং উচ্চ লাইসেন্স ফি বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
(রেফারেন্স ক্লজ-12.08.12.09)
আইপিটিএসপি এসএমএস সার্ভিস ও মোবাইল ডায়ালার বিষয়ে বিস্তারিত কোনও নির্দেশনা নেই। এ দুটি বিষয়ে স্পষ্টিকরণ চাই।
(রেফারেন্স ক্লজ-8.2.5, 8.2.9)
এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং জেলা এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) -এর মধ্যে সার্ভিস বৈষম্য রাখা যাবে না।
(রেফারেন্স ক্লজ- 6.2.2, 8.3)
প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালার এই প্রক্রিয়ার আড়ালে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস (এফডব্লিউএ) এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।
আইএসপিএবি মনে করে, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড কানেক্টিভিটির সুযোগ দেয়া দেশীয় বিনিয়োগকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে। নতুন খসড়া গাইডলাইনটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।





