‘অল আইজ অন রাফাহ’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪৪ মিলিয়ন বার শেয়ার হয়েছে
ক.বি.ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজার রাফাহ শহরের শরণার্থী ক্যাম্পে দখলদার ইসরায়েলি হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এই মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যা বয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘অল আইজ অন রাফাহ’ শ্লোগানটি নিয়ে। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘সবার নজর রাফাহ’র দিকে’। ‘অল আইজ অন রাফাহ’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই স্লোগানটিই এখন দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান।
‘অল আইজ অন রাফাহ’ লেখা একটি পোস্ট এরইমধ্যে সাড়ে চার কোটি ব্যবহারকারী (৪৪ মিলিয়ন) ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। এই পোস্টটিতে একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ তাঁবুর সারি রয়েছে। আর এর পাশেই রয়েছে পাহাড়। এটি আপাতত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‘ট্রেন্ডিং’। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার রাফায় আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনের সমর্থনে এই বাক্যটি পোস্ট করছে।
নিজস্ব প্ল্যাটফর্মগুলোতে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর বিস্তারকে সীমিত করার জন্য মেটা প্রচেষ্টা চালালেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং ফিলিস্তিনি সমর্থকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠেছে ইনস্টাগ্রাম।
এনবিসি বলছে, ‘অল আইজ অন রাফাহ’ ছবিটি যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক তখন রাফাহ থেকে পোস্ট করা ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের অনেক ভিডিও সীমিত করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে দখলদার ইসরাইলি হামলার গ্রাফিক্যাল ছবিকেও ‘ভায়োলেন্স’ কিংবা ‘সংবেদনশীল’ দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘অল আইজ অন রাফাহ’ স্লোগানটি এসেছে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অফিসের পরিচালক রিক পিপারকর্নের একটি বিবৃতি থেকে। তিনি ফেব্রুয়ারিতে এই মন্তব্য করেছিলেন। সে সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের অবশিষ্ট ঘাঁটি রাফাতে হামলার আগে রাফাহ থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তবে যে-ই তৈরি করুক আর যেভাবেই তৈরি হোক; বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে ওঠছে, ‘অল আইজ অন রাফাহ’ পোস্টটি তার অন্যতম বড় উদাহরণ।
গত রোববার রাফাহ’ র একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪৫ জন মারা যায়। এর অধিকাংশই নারী ও শিশু। এতে ২শ’ জনের বেশি আহত হয়েছে। এই হামলা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, অনেকে এর নিন্দা করেছেন এবং অনেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পর জাতিসংঘের এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ) এক্সে একটি পোস্টে লিখেছে, ‘গাজা অঞ্চল পৃথিবীর বুকে নরকে পরিণত হয়েছে। পরিবারগুলো আশ্রয় খুঁজছে, যুদ্ধ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে, কিন্তু গাজা উপত্যকায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই। এখানে কেউ নিরাপদ নয়; বেসামরিক লোকও নয়, আবার কোনো সংস্থার কর্মী নয়। কাউকে রেহাই দেওয়া হয়নি। আমাদের দরকার এখন যুদ্ধবিরতি।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। এসব হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৮১ হাজারের বেশি। এ ছাড়া নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ।