অনলাইনে নিরাপত্তা বাড়াতে অনুষ্ঠিত হলো ডিজিটাল সেফটি সামিট

ক.বি.ডেস্ক: দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো শর্ট-ফর্ম মোবাইল ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক এর ‘ডিজিটাল সেফটি সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’। বাংলাদেশের তরুণদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল সাক্ষরতা, ভুল তথ্য মোকাবিলা এবং সঠিক ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা করা হয়। নিরাপদ এবং দায়িত্বশীল অনলাইন পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে টিকটক এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যৌথভাবে আয়োজন করে ‘ডিজিটাল সেফটি সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিকটক এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশন্সের প্রধান ফেরদৌস আল মুত্তাকিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিকটক এর আউটরিচ অ্যান্ড পার্টনারশিপ ম্যানেজার সিদরা জলিল।
মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, “ডিজিটাল মাধ্যমগুলো দ্রুত বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনলাইন কমিউনিটি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ গড়ে তোলা, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকল বাংলাদেশির জন্য একটি নিরাপদ ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করতে চাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা বৃদ্ধির অর্থ প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা বা দমন করা নয়। বরং, আমাদের লক্ষ্য হল এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন বিকশিত হতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু এবং প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে সুরক্ষিত থাকে।”
ফেরদৌস আল মুত্তাকিন বলেন, “টিকটক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার দিকে আমরা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেই। আমরা বিশ্বাস করি যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিশেষজ্ঞ এবং আমাদের কমিউনিটির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিজেদের প্রকাশ করতে পারবে।”
সিদরা জলিল বলেন, “নীতিমালা না মানায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে আপলোড করা ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়েছে টিকটক। ৯৯.৬ শতাংশ ভিডিও সরানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর ৯৬.৭ শতাংশ ভিডিও ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরিয়েছে। টিকটক ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।”

সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির সিস্টমস্ অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে পুলিশের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন এর পুলিশ সুপার খালেদা বেগম, ডিজিটালি রাইট ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ চৌধুরী, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মাহিম আহমেদ। সঞ্চালনা করেন স্ট্রাটেজম প্রিন্সিপাল আবু নাজাম মোহাম্মাদ তানভির হোসেন।
প্যানেল আলোচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ইনফ্লুরন্সাররা অনলাইন নিরাপত্তা, দায়িত্বশীল কনটেন্ট তৈরি এবং সাইবার হুমকি মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। সম্মেলনে টিকটকের সর্বশেষ নিরাপত্তা বা সেফটি ফিচার, শিক্ষামূলক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিটিআরসি’র সঙ্গে টিকটকের কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়। অধিকার ও স্বাধীনতার মধ্যে সমন্বয়ে পলিসি ও অনুশীলনের ওপর জোরদার করা হয়। দুর্যোগকালীন সময়ে কীভাবে গ্লোবাল ইন্টারনেট ছাড়াও দেশ ডিজিটালি সচল থাকে সেই পথ বিনির্মানেও পরামর্শ ওঠে আসে আলোচনায়।
ব্রি. জে. মোহাম্মদ খলিল উর রহমান বলেন, “বিটিআরসি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় যুক্ত থাকে যাতে তারা বাংলাদেশের ডেটা সুরক্ষা বিধি মেনে চলে। আমাদের মূল লক্ষ্য এমন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যেখানে ব্যবহারকারীর ডেটা দায়িত্বের সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং এটি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণে ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। সাইবার অপরাধ হুমকি মোকাবেলায় বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইএসপি এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বহুমপক্ষীয় অংশগ্রহণের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ তৈরিতে বিটিআরসি দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।”