স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবারের বাজেট
ক.বি.ডেস্ক: সরকার ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আইসিটি খাতের সুপারিশ বা প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। বরং স্মার্ট বাংলাদেশ এর উদ্দেশ্যের সঙ্গে তা যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ। দেশের আইসিটি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আজ রবিবার (৪ জুন) ঢাকার কাওরানবাজার বেসিস মিলনায়তনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনিুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ এবং ই-ক্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটে আইসিটি খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আইসিটি শিল্পের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক বা উল্লেখযোগ্য কোনো সুখবর নেই। সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক প্রস্তাব দেয়ার পরও এ খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর, সফটওয়্যার ও আইটিইএস এর ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা ১০% বৃদ্ধি করে ২০% করা এবং সর্বোপরি দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে সফটওয়্যার ক্রেতাকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়েছিলো।
অথচ এগুলোর কোনোটাই বিবেচনায় আনা হয়নি। অপরদিকে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫%-২৫% করা হয়েছে এবং সফটওয়্যারের ওপর ৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই হলো, প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট । যেখানে শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি খাত, জ্বালানী খাত এভাবে সবগুলো খাতই হবে স্মার্ট। কিন্তু সফটওয়্যারের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং ভ্যাট আরোপ করায় এই সফটওয়্যারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
মো. ইমদাদুল হক বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্বেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তি না করা, আইসিটি খাতে ব্যবহৃত সামগ্রীর ওপর শুল্ক না কমায় এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করা, ইন্টারনেট সেবার প্রসার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।
এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইএসপিএবি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত কেছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আইএসপি সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান এর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
ওয়াহিদ শরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিপিও পরিষেবা পেয়ে থাকেন তাই বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইসিটি শিল্পের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উন্নিত হয়েছে, কনট্যাক্ট সেন্টারের অনেক সফটওয়্যার এখনো দেশে তৈরি হচ্ছে না, যা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ – সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে।
ফলে এই শিল্পের সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির ফলে এই শিল্পে মাত্র ৩০০ জনশক্তি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭০ হাজারেরও অধিক জনশক্তির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০২৪ সালে থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে, ভবিষ্যতে বিপিও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, ক্রেতা আকর্ষণ কমে যাবে, নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হবে এবং সর্বোপরি বিপিও শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, এবার বাজেটে মার্কেট প্লেসের যে ডেফিনেশন দেয়া হয়েছে এটা গত তিন- চার বছরের ই-ক্যাবের চেষ্টা। শুধুমাত্র ই-ক্যাব এককভাবে এই ডেফিনেশনের জন্য গত কয়েক বছর ধরে এনবিআর এর সঙ্গে মিটিং করছিলো। যখন ভ্যাটের এই ইস্যুটা ই-কমার্সের ওপর আসে তখন এনবিআরও জানতো না আসলে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন কী। সেই ডেভিনেশন ঠিক করতে গিয়ে আমাদের তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সঙ্গায়নের ফলে ডিজিটাল ব্যবসায় ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটা ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। এই খাত আরও গুছিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।