স্মার্ট বাংলাদেশ: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনবান্ধব স্মার্ট উদ্যোগ
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নাগরিক সেবাকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে স্মার্ট সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ডাক অধিদপ্তর। আইসিটি বিভাগের এটুআই’র কারিগরি সহযোগিতায় স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ সাথী, মোবাইল এয়ারটাইমভিত্তিক সরকারি সেবার ফি পরিশোধ, স্মার্ট আর্টিক্যাল কালেকশন (চিঠি, ডকুমেন্ট, পার্সেল), স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর এবং স্মার্ট পোস্ট বক্স এর মতো স্মার্ট সেবার পাইলট কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় নতুন উদাহরণ ও ইউনিক মডেল তৈরি করতে হবে। বিটিআরসি শুধু নিয়ন্ত্রণকারী নয় বরং সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করবে এবং স্মার্ট ইকোনমি তৈরিতে লিডিং রোল প্লে করবে। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলার তথা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নেও বিটিআরসি অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে। টেলিযোগাযোগ খাতে শৃংখলা রক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, রাজস্ব অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিতে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের ম্যাধমে কাজ করে যাচ্ছে বিটিআরসি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে টেলিফোনের মনোপলি ভেঙ্গে দেয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল ফোন সুলভে পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের কল্যাণে মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, সবার কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া, ইলেকট্রনিক ডিভাইস উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হওয়া বিষয়গুলোতে বিটিআরসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল। আমরা চাই আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিটিআরসি নতুন একটা উদাহরণ ও ইউনিক মডেল তৈরি করবে যা পুরো বিশ্বের নিকট অনুকরণীয় হবে।’’
স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’
মূলত অ্যাপলের সিরি কিংবা আমাজনের অ্যালেক্সার মতোই একটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ হিসেবে চালু করা হচ্ছে। এটি হবে মানুষের সাথী বা পার্টনার। তার কাছ থেকে ব্যবহারকারী সব ধরনের তথ্য পাবেন। এটুআই উদ্ভাবিত এআই প্রযুক্তির ‘সাথী’ অ্যাপ জিরো রেট ও প্রতিটি মোবাইলে ডাউনলোড করার জন্য বিটিআরসি সহযোগিতা প্রদান করবে। সাথী মোবাইল নম্বর এর সঙ্গে একীভূত করা থাকবে। মোবাইলে সিম চালু থাকলেই এটি সেটে সক্রিয় হবে না বরং মোবাইলে ইনস্টল করে নিতে হবে। তবে এটি ডাউনলোড করতে যাতে ব্যবহারকারীর কোনও ধরনের ডাটা খরচ না হয় সেই ব্যবস্থাও থাকবে। স্মার্টফোন ও ফিচারফোনেই সাথী ব্যবহার করা যাবে। সাথীকে অ্যাপ স্টোর বা প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে।
যেসব ব্যবহারকারী ইউএসএসডি বা অন্যান্য ফিচার ব্যবহার করতে অস্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সাথীকে মুখে বললেই কানেক্ট করিয়ে দেবে সেসব সেবায়। কলসেন্টার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলে দেয়ার ব্যবস্থা করবে সাথী। সাথীর বিভিন্ন ফিচার পর্যায়ক্রমে গ্রাহকের কাছে উম্মুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে সাথী ইনস্টল করা থাকলে প্রতিটি ফিচার উম্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লে স্টোর ও আপ স্টোরে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। ভবিষ্যতে সাথীর সঙ্গে চ্যাটবট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিরেক্ট অপারেটর বিলিং (ডিওবি) পেমেন্ট সিস্টেম
নাগরিকদের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সরকারি সেবার অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে ডিরেক্ট অপারেটর বিলিং (ডিওবি) পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। ডিওবি হলো একটি অর্থপ্রদানের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা এয়ারটাইম ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদির অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। সকল সরকারি সেবায় ডিওবি চালু হলে পেমেন্ট চ্যানেলের ঝামেলা দূর করা সম্ভব হবে এবং একইসঙ্গে নাগরিকগণ ঘরে বসে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এয়ারটাইম ইন্টারঅপারিবিলিটি ও অন্যান্য নাগরিকবান্ধব সেবাকে ডিওবি-এর আওতায় আনার জন্য বিটিআরসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্মার্ট আর্টিক্যাল কালেকশন
ডাক অধিদপ্তরের আওতায় স্মার্ট আর্টিক্যাল কালেকশন সেবার আওতায় নাগরিকগণ ডাকঘরে না এসে ঘরে বসেই যেকোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা এবং ডাকযোগে প্রেরিতব্য আর্টিক্যালের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে ঠিকানা লেবেল প্রিন্ট করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ডাকদ্রব্য ডাকঘরের নিয়োজিত ‘র্যাপিড রানার’গণ প্রেরকের ঠিকানা হতে সংগ্রহ করবেন ও ডাকযোগে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই সেবার আওতায় ডাকযোগে প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পার্সেলসমূহ ট্র্যাক ও ট্রেসিং এর আওতায় থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ঠিকানাসমূহ হতে সংগ্রহপূর্বক দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ঠিকানায় প্রেরণের জন্য এই সেবা চালু হতে যাচ্ছে।
স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর
স্মার্ট মোবাইল ডাকঘর এর মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহ হতে দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ব্যবসায়ী, দোকান ও ভোক্তার ঠিকানায় পার্সেল যোগে বিভিন্ন বিক্রিত পণ্য প্রেরণ করা যাবে। সপ্তাহের ৭ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালু থাকা এই স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহেই অবস্থান করে নিয়মিত ডাকঘরের বর্ধিত সেবা হিসেবে কাজ করবে। এই ডাকঘরসমূহ হতে প্রেরিত পণ্যসমূহ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্বিতীয় কর্মদিবসেই পৌঁছে দেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার প্রধান কয়েকটি পাইকারি বাজারে স্মার্ট মোবাইল ডাকঘরের অপারেশন শুরু হবে। এই ডাকঘরগুলো পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বাণিজ্যিক কেন্দ্রে সম্প্রসারণ করে কমিউনিটি লেভেলেও সম্প্রসারিত করা হবে।
স্মার্ট পোস্টবক্স
কমিউনিটি পর্যায়ে ‘স্মার্ট পোস্টবক্স’ নামক একটি অটোমেটেড ডেলিভারি সেবা চালুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। এটুআই উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট পোস্টবক্স চালু করা হলে কমিউনিটি পর্যায়ে স্থাপিত ‘স্মার্ট পোস্টবক্সগুলোতে নাগরিকদের বিভিন্ন ঠিকানায় আগত ডাকদ্রব্যসমূহ পৌঁছে দেয়া হবে। এই বক্সে প্রদান করা মাত্রই নির্দিষ্ট প্রাপক তার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাবেন। পরবর্তীতে নিজ পরিচয় নিশ্চিত করে নির্দিষ্ট বক্স থেকে নির্দিষ্ট ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সম্পূর্ণভাবে ডিভাইস ও প্রযুক্তিনির্ভর এই অবকাঠামো হতে কোনও রকম জনবলের উপস্থিতি ছাড়াই সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা জুড়ে ডাকদ্রব্য সংগ্রহ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে প্রধান প্রধান জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিকভাবে এই বক্সগুলো স্থাপন করা হবে।