প্রতিবেদন

সালতামামি ২০২৩: বছরের আলোচিত গ্যাজেট

যত দিন যাচ্ছে, তত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাড়ছে প্রযুক্তি নির্ভরতা। বর্তমান সময়ে সবাই কমবেশি স্মার্টফোনসহ নানা ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার করছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাজারে আসে আলোচিত কিছু গ্যাজেট। কী কী নতুন গ্যাজেট ২০২৩ সালে বাজারে আসে এবং এগুলো নিয়ে সবার আগ্রহ কেমন ছিল।

আইফোন ১৫
২০২৩ সালে সবচেয়ে আলোচনায় এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আইফোন ১৫। গত ১২ সেপ্টেম্বর বহুল প্রতিক্ষীত আইফোন ১৫ সিরিজ উন্মোচন করে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। এর মধ্যে বেশি আলোচনা হয়েছে আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স নিয়ে। এতে আগের মডেলগুলোর তুলনায় অনেক নতুনত্ব এনেছে অ্যাপল।

আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সে রয়েছে অ্যাপলের এ১৭ বায়োনিক চিপসেট। এই দুই মডেলের ফ্রেমে স্টেইনলেস স্টিলের বদলে দেয়া হয়েছে টাইটানিয়াম চেসিস। এই ফোন দুটিতে আইফোনের সিগনেচার আইকনিক সাইলেন্ট সুইচের বদলে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকশন বাটন। ফোন দুটির মূল ক্যামেরা ৪৮ মেগাপিক্সেলের। আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স মডেলে রয়েছে একটি পেরিস্কোপ ক্যামেরাও। আইফোন ১৫ সিরিজে ইউএসবি-সি টাইপের চার্জার ব্যবহার করা হয়েছে।

গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা
স্যামসাংয়ের অত্যাধুনিক স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা। এটি ২০২৩ সালে দারুণ সাড়া ফেলে। মেটাল এবং গ্লাসের সমন্বয়ে তৈরি বেশ স্লিম এই ফোনে আছে ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেটসম্পন্ন ৬ দশমিক ৮ ইঞ্চির চমৎকার ডায়নামিক এমোলেড ডিসপ্লে। এটির ডানে পাওয়ার বাটন ও ভলিউম রকারের বিপরীতে বাম দিকটা খালি রাখা হয়েছে। ফোনের ওপরের দিকে থাকছে মাইক্রোফোন হোল আর নিচে টাইপ-সি ইউএসবি পোর্ট, স্পিকার গ্রিল, মাইক্রোফোন হোল ও সিম ট্রে। এ ছাড়া এই স্মার্টফোনের সামনে ও পেছনে থাকছে আপডেটেড গরিলা গ্লাস ভিক্টাস টু, যা কংক্রিটের ওপর পড়লেও ভালো ড্রপ রেজিস্টেন্স দেবে।

এতে রয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ (৪এনএম) প্রসেসর, যুক্ত করা হয়েছে ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি বড় ভেপার কুলিং চেম্বার। মূল ক্যামেরা সেট–আপের সঙ্গে একটি কোয়াড-ক্যামেরা সেট–আপ রয়েছে, যাতে ২০০ মেগাপিক্সেল ওয়াইড-আঙ্গেল, ১২ মেগাপিক্সেল আলট্রা-ওয়াইড, এবং ১০এক্স ও ৩এক্স অপটিক্যাল জুমসমৃদ্ধ দুটি ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। আছে ১২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। এইট–কে ভিডিও রেকর্ডিং, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন ও মাল্টিপল শুটিং মোডের সুবিধা।

অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা ২
পরবর্তী প্রজন্মের অ্যাপল ওয়াচ। ভালো পারফরম্যান্স ও গ্রাফিক্সের জন্য এই স্মার্টওয়াচে দেয়া হয়েছে কাস্টম এস৯ চিপ। এই ঘড়িতেও আপনি ডাবল ট্যাপ করে ইনডেক্স ফিঙ্গার কাজে লাগাতে পারবেন। আবার থাম্বের ছোঁয়ায় অ্যালার্ম, অ্যান্সার বা ডিসকানেক্ট কলস, প্লে ও পজ মিউজ়িক ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারবেন। এর ডিসপ্লে ৩০০০ নিটস ব্রাইটনেস দিতে পারে। মডিউলার আলট্রা ওয়াচ ফেস সাপোর্ট করবে ঘড়িটি।

কাস্টমাইজেবল অ্যাকশন বাটন রয়েছে এতে। ওয়াচ ওএস১০ থাকার ফলে ব্লুটুথ অ্যাক্সেসরিজের সাপোর্ট পাওয়া যাবে। এক চার্জে স্মার্টওয়াচটি ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। একটি রিসাইকেলড অ্যালুমিনিয়াম কেস দেয়া হয়েছে স্মার্টওয়াচটির সঙ্গে। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাপল স্টোরসহ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা যাচ্ছে স্মার্টওয়াচটি।

বিটস স্টুডিও বাডস
ক্রিস্টাল ক্লিয়ার সাউন্ড এবং ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ সুবিধার বিটস স্টুডিও বাডস ওয়্যারলেস ইয়ারফোন অবশ্যই ২০২৩ সালের একটি দুর্দান্ত গ্যাজেট। অ্যাপলের স্টুডিও বাড ইয়ারফোনে আপনি কেবল গান শুনতে পারবেন, এমন নয়, বরং কলও রিসিভ করতে পারবেন। অ্যাপল ডিভাইস এবং অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে ওয়ান-টাচ পেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আপনি সহজেই ফাইন্ড মাই অ্যাকাউন্ট সেট–আপ করতে পারবেন। যাতে এই ইয়ারবাড হারিয়ে গেলেও তা খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে।

ফাইন্ড মাই অ্যাপ্লিকেশনে ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্ক অপশনটি থেকেও অ্যাপল ডিভাইসের ব্লুটুথ সিগন্যাল খুঁজে পাওয়া যায়। অনন্য এই নেটওয়ার্ক ট্র্যাকিং ফিচারটি কাজ করে ইয়ারবাড অফলাইনে থাকলেও। বিটস স্টুডিও বাডগুলো তিনটি রঙে পাওয়া যায়।

ক্যানন পাওয়ারশট ভি ১০
যাদের ইউটিউব চ্যানেল আছে কিংবা ভিডিও ধারণে আগ্রহী তাদের জন্য ক্যানন পাওয়ারশট ভি ১০ দারুণ ক্যামেরা হতে পারে। পকেটে রাখার মতো হালকা এবং আকারে ছোট, মাত্র ২১১ গ্রাম ওজনের। এটি ফোর–কে ইউএইচডি সিএমওএস (৫৫ মিনিটের শুটিং টাইম) ওয়াইড-এঙ্গেল ১৯ মিলিমিটার ফরম্যাটে ভিডিও ধারণে সক্ষম। এতে ইলেকট্রনিক উইন্ড শিল্ডিংসহ বিল্ট-ইন স্টেরিও মাইক্রোফোন রয়েছে। রয়েছে একটি রিট্র্যাক্টেবল স্ক্রিন এবং স্ট্যান্ডসহ আরও অনেক কিছু।

গুগল পিক্সেল ৭
পিক্সেল ৭ ফোনের পেছনে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ক্যামেরা মডিউল। রয়েছে ৬ দশমিক ৩ ইঞ্চি এফএইচডি প্লাস ডিসপ্লে, গরিলা গ্লাম ভিক্টাসের সুরক্ষা, এইচডিআর ১০ প্লাস সাপোর্ট ও ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট। সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ নিটস ব্রাইটনেস পাওয়া যাবে এই ডিসপ্লেতে। ব্যবহার করা হয়েছে টেন্সর জি টু চিপসেট। এতে রয়েছে ৮ জিবি র‍্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজ। যদিও স্টোরেজ বাড়ানোর কোনো সুবিধা নেই। ফোনটিতে ৪ হাজার ৩৫৫ এমএইচ ব্যাটারি রয়েছে। এক চার্জে সারাদিন ব্যবহারে সমস্যা হবে না। ফোনের সঙ্গে মিলবে ইউএসবি টাইপ সি ক্যাবল।

পিক্সেল ফোনের কথা শুনলে প্রথমেই ক্যামেরার কথা মনে পড়ে। ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরার সঙ্গেই ১২ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছে এই ফোনে। ছবির কালার টোন ও ডাইনামিক রেঞ্জ বিশেষভাবে নজর কাড়বে। দিনের আলোর পাশাপাশি এই ক্যামেরায় কম আলোতে ভালো ছবি তোলা যায়। ক্যামেরায় রয়েছে সিনেমাটিক ব্লার ফিচার। নতুন এই ফিচারে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময়ও ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার থাকে।

সোনোস ইরা ৩০০
বর্তমান সময়ে ওয়্যারলেস ব্লুটুথ স্পিকার বেশ জনপ্রিয়। কয়েক বছর ধরে নানা মানের ব্লুটুথ স্পিকার বাজারে আসে। তবে ওয়্যারলেস স্পিকারে পুরো একটা সাউন্ড সিস্টেম নতুন বিষয়। সোনোস ইরা ৩০০ স্পিকারে এই সুবিধা আছে। তাই তো ২০২৩ সালে বাজারে আসার পর বেশ সাড়া ফেলে সোনোস ইরা।

এতে ডলবি অ্যাটমসের সঙ্গে রয়েছে ছয়টি ক্লাস-ডি ডিজিটাল অ্যামপ্লিফায়ার এবং চারটি টুইটার ও দুটি উফারসহ একটি ফুল প্যাকেজ। সিডি প্লেয়ার এবং টিভির মতো ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করতে সোনোস লাইন-ইন অ্যাডাপ্টারের সঙ্গে ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই এবং সহায়ক ইনপুটগুলোর মাধ্যমে কাজ করে ইরা ৩০০ স্পিকার। যারা অনলাইন স্ট্রিমিং মিউজিক ও সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি দুর্দান্ত।

ডিজেআই ম্যাভিক থ্রি প্রো
যারা ড্রোনের সহায়তায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন, তাদের অন্যতম পছন্দ ডিজেআই। ২০২৩ সালে ডিজেআই প্রথমবারের মতো তিন ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন বাজারে এনে সাড়া ফেলে। ডিজেআই ম্যাভিক থ্রি প্রো মডেলের এই ড্রোন দিয়ে একই সময়ে তিনটি ক্যামেরার সমন্বয়ে ভিডিও ধারণ করা যাবে। ফলে সহজে ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট নির্মাণের পাশাপাশি শুটিংয়ের কাজ করা যাবে। ৪৮, ২০ ও ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাযুক্ত ড্রোনটি ফোরকে প্রযুক্তির ভিডিও ধারণের পাশাপাশি উন্নত মানের ছবি তুলতে পারে। একবার চার্জ দিলে টানা ৪৩ মিনিট উড়তে সক্ষম ড্রোনটি। এ ছাড়া আটটি ভিশন সেন্সর যুক্ত থাকায় দুর্ঘটনার শঙ্কা কম।

অ্যাপল এয়ারপড প্রো জেন ২
কয়েক বছর ধরে নতুন নতুন সুবিধার এয়ারপড আনছে অ্যাপল। ২০২৩ সালে বাজারে আসে দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যাপলের এয়ারপড প্রো। এই ইয়ারফোনে একবার চার্জ দিলে ৬ ঘন্টা শুনতে পাবেন গান, কথা বলতে পারবেন ৪ ঘন্টা। চার্জিং কেসের মাধ্যমে ফাস্ট চার্জিং হয়। অ্যাপলের ম্যাকবুক, আইপড, ওয়াচ, আইফোনসহ সবকিছুর সঙ্গে অনায়াসে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। নয়েজ ক্যান্সেলেশন এবং এইচ ২ হেডফোন চিপ রয়েছে এতে। ফলে স্পষ্ট বেজ ও হাই নোটের সমন্বয়ে গান শুনতে দুর্দান্ত এয়ারপড প্রো জেন ২।

অডেজ ম্যাক্সওয়েল হেডসেট
অডেজ ম্যাক্সওয়েল ২০২৩ সালে সেরা ওয়্যারলেস গেমিং হেডসেট। যারা অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে গেমিংয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করে তাদের জন্য এটি কার্যকরী। এর সাউন্ড কোয়ালিটি দুর্দান্ত, তবে অতিমাত্রায় নয়। স্পষ্ট শোনা এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ কমানোর জন্য এটি বেশ ভালো কাজ করে। এর ডিজাইন বেশির ভাগ গেমিং হেডসেটের মতোই। অডেজের হেডেসটটির ব্যাটারি লাইফ প্রায় ৮০ ঘণ্টা। এ ছাড়া প্লেস্টেশন এবং এক্সবক্স—উভয়ের জন্যই অডেজ ম্যাক্সওয়েলের হেডসেট রয়েছে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *