সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারা সংশোধনসহ তিন দফা বিএফইউজে’র
ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন বিষয়ে বিএফইউজে’র উপস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদন পাওয়া ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে সাংবাদিক সমাজের পক্ষে বিএফইউজে পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারা সংশোধনসহ তিন দফা প্রস্তাবনা হস্তান্তর করেন বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে প্রস্তাব উপস্থাপনা করেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে’র সভাপতি ওমর ফারুক এবং সঞ্চালনা করেন মহাসচিব দীপ আজাদ।
‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ বিষয়ে মত তুলে ধরেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।
প্রস্তাব উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে বিএফইউজে’র সহসভাপতি মধুসূদন মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামালসহ বিএফইউজে ও ডিইউজে’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মনজুরুল আহসান বুলবুল উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, সাইবার অপরাধ দমনের জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন। তবে তা যেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক সুরক্ষাকে বিপন্ন না করে।
ফৌজদারি আইনে যে সকল অপরাধ ও সাজা নির্ধারণ করা আছে সাইবার আইনে তা সংযোজন করার প্রয়োজন নেই। সাইবার নিরাপত্তা আইনে দুইশ’ বছরেরও পুরনো অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট নতুন করে জীবন দেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪২ ধারায় অপরাধের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন। এসব ধারায় বেশকিছু সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধারা ২১ এ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোন প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণার দন্ড।
এ ধারায় জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে ‘বিরুদ্ধে’ শব্দের পরিবর্তে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা উচিৎ বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা চালানো হবে অপরাধ।
ধারা ২৯ ও ৩২ এর প্রয়োজনীয়তা নেই বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। ধারা ৪২ পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশী, জব্দ ও গ্রেফতার বিষয়টি সাংবাদিকদের বেলায় রহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কোন সাংবাদিকের কোন কাজে আপত্তি থাকলে সমন জারি করে আদালত হাজির হতে বলা যাবে। সাংবাদিকের নামে কোন মামলা করার গ্রহণযোগ্যতা (প্রাইমা ফেসি) যাচায়ের জন্য প্রেস কাউন্সিলের মতামত নিতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে কেউ মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকতে হবে।
খসড়া আইনে ‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি’ গঠনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে একজন সাংবাদিক বা সাংবাদ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ রাখার প্রস্তাব করা হয়। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে বিএফইউজে’র সুপারিশ অনুযায়ী একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ রাখার প্রস্তাব করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সবসময় সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাঁর সরকার এমন কোন আইন করবে না, যা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবে। সাংবাদিক সমাজ সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন, সেটা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দূর হবে। কেবল সাইবার অপরাধ দমনের জন্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা সরকারের লক্ষ্য নয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিএফইউজে’র বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।