শেষ হলো ‘৩য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড’
অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে রোবটিক্সের প্রতি আগ্রহী করে তোলার মধ্য দিয়েই শেষ হলো তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০। অনলাইনে গত রবিবার (১৮ অক্টোবর)এ অলিম্পিয়াডের সমাপনী এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ বছর জাতীয় পর্বে দেশের ৬২টি জেলা থেকে ৭৩১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ বছর রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটেগরি,রোবট ইন মুভি,রোবট গ্যাদারিং এবং রোবটিক বুদ্ধি (কুইজ প্রতিযোগিতা) এই মোট চারটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এই চার ক্যাটাগরি থেকে মোট ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। জাতীয় পর্বে বিজয়ীদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এই তিনটি প্রতিযোগিতা দক্ষিণ কোরিয়ার দ্যেগু শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের দল গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পর্বের নিয়ম অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় জুনিয়র এবং চ্যালেঞ্জ (সিনিয়র) এই দুইটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিসির পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ এনামুল কবির। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড.শামীম আহমেদ দেওয়ান।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন,রোবট মানেই সবকিছু কন্ট্রোল করা নয়। এর মূল কাজ হচ্ছে মানুষের কার্যক্রম সহজ করা। এমনকি মানবতার প্রয়োজনেও রোবটের প্রয়োজনীয়তা আছে। বর্তমান প্রজন্ম যারা রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের মান উজ্জ্বল করছে তারাই যদি রোবট তৈরি করে তাহলে আর বিদেশ থেকে কোন রোবট আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। শুধু সার্টিফিকেটের জন্য যেন তারা না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজক দেশ হতে পারবে।এ ক্ষেত্রে আইসিটি ডিভিশন সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে।
ড.এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, একটা সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদেরকেই সুযোগ খুজতে হতো,এখন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়গুলো সুযোগ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তরুণরা কর্মউদ্দীপনায় পরিপূর্ন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে উত্তীর্ণ হতে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়নে এই তরুণ সমাজ সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,অনলাইনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার কারনে বিজয়ীদের উল্লাস বা কিছুটা পিছিয়ে পড়াদের মৌনতা কোনটাই উপলব্ধি করতে পারছেন না। ভবিষ্যতে আরও ছাত্র-ছাত্রী যাতে উতসাহ নিয়ে প্রযুক্তির পথে চলতে শুরু করে সে জন্য তিনি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনির পাঠ্যবই-এ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের ছবি সংযুক্ত করেছেন।
পার্থপ্রতিম দেব বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় আমাদের তরুন সমাজকে প্রস্তুত করতে আমরা রোবটিক্স এর পাশাপাশি বিগ ডেটা,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স,রোবটিক্স প্রসেস অটোমেশন ইত্যাদি বিষয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন বুঝে প্রশিক্ষন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি নির্ভর যেখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে আমাদের এই ক্ষুদে রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়াররা। সব দেশকে পেছনে ফেলে রোবট অলিম্পিয়াডের এই ইতিবাচক প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে সেই পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উই রোবটিক্স এর নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিক মায়ার তার বক্তব্যের শুরুতে ৩য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০ এ অংশ নেয়া সকল প্রতিযোগীদের অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ৩০টির ও বেশি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ ফ্ল্যাইং ল্যাবস এর কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন।
এ সময় অলিম্পিয়াডের আয়োজক বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান রোবট অলিম্পিয়াডে আমাদের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের উল্লেখ করার পাশাপাশি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় স্ক্যাচ প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে রোবট সম্পর্কে পড়াশুনা করতে পারবে বলে আশা করেন।
৩য় বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২০ এর আয়োজক আইসিটি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক; সহযোগী বিসিসি; সহযোগিতায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরীজ আনলিমিটেড প্রকল্প,মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব), কমপিউটার সার্ভিসেস,ইএমকে সেন্টার,আম্বার আইটি,কিশোর আলো এবং ঢাকা এফএম।